কাগজের পুতুল
'চলে না গেলে কি হয় না', এমন অসহায় ভাবে কথাটা বলে চোখে জল আটকে রাখার চেষ্টা করছে পিহু।
লন্ডনে চলে যাচ্ছি। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন শেষ করলাম একটু আগে। পাসপোর্ট আর বোর্ডিং পাস হাতে নিয়ে ৮ নম্বর গেটের সামনে বসে আছি, পাশে আমার স্ত্রী পিহু। পিহুর মুখে এ কথা শুনে অবাক ভাবে তাকিয়ে আছি। চোখে পানি ছলছল করছে মনে হচ্ছে এখনই কেঁদে ফেলবে। কিছু না ভেবে বললাম, 'না গেলে কি হবে?'
‘মধুরাত হয়েছে আমাদের?’
‘না।’
‘হানিমুন?’
‘না।’
হাসিতে বিদ্রূপ মেশাল পিহু, ‘বিয়ে হয়েছে অথচ বাসর ও হানিমুন কিছুই হয়নি! এটা কি সেরা ট্র্যাজেডি নয়?’
‘জানি না।’
আসলে আমি একটা কাগজের ফুল। কাগজের ফুলের সুবাস নেই, সৌন্দর্য আর রূপও নেই। সম্ভবত তোমাকে তাই আকৃষ্ট করতে পারিনি।
কথাটা যখন তুলেই ফেলেছ, তাহলে তোমাকে বলি ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছি পরিরা নাকি খুব সুন্দর হয়, হাসলে মুক্তা ঝরে। কবি-সাহিত্যিকেরা নারীর বর্ণনা দিয়েছেন নানাভাবে হরিণমায়া চোখ; পটোলচেরা আঁখি; ফুলের মতো মুখ; দুধে-আলতা বরন ইত্যাদি আরও অনেক কিছু। কিন্তু একটা কথা কি জানো?’
মাথা এদিক-ওদিক করল পিহু, কিছু বলল না।
‘তোমাকে দেখার পর আমার তা মনে হয়নি।’
‘কী মনে হয়নি?’
‘নারীর রূপ-সৌন্দর্যের বর্ণনা কিছুই হয়নি।’
‘তাই নাকি!’
‘হ্যাঁ। নারী কত সুন্দর হতে পারে, তা তোমাকে না দেখলে বোঝার উপায় ছিল না।’
‘তাহলে তুমিই বর্ণনা দাও।’ তাচ্ছিল্যের গলায় বলল পিহু।
‘বর্ণনা দিতে পারব না। তবে এটুকু বলতে পারি, আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর মেয়ে তুমি।’ বলেই ওর চোখের দিকে তাকালাম আমি আবার।
আপনি একটু ভেবে দেখলেই বুঝতে পারবেন স্বাধীন আপনি? এত বড় শহরে আমি আপনাকে আর আপনার পরিবার ছাড়া আমি কিছু চিনি না। আমি গ্রামের মেয়ে এত বড় শহরে একা কি করবে একটা বার ভেবেছেন।
না। ভাবার কি আছে? আমি বড় হয়েছি লন্ডনে ঢাকা শহর আমার ভালো লাগে না। আর এই বিয়ে তে আমি রাজি ছিলাম না। মা বাবা দিনে দিনে বুড়ো হচ্ছে তাদের দেখার কেই নাই। মা এর কথায় বিয়ে করলাম।আমি তো কবুল বলি নাই। কাগজের সাইন করলাম আর বিয়ে হয়ে গেছে। না তোমাকে আগে দেখেছি, না তোমাকে আগে থেকে চিনি। না তুমি আমার বন্ধু।হুট করে সব কিছু হয়ে গেছে।
তার মানে আমি আপনার আর আপনার পরিবারের কাগজে সাইন করা পুতুল।
জানালার পাশেই সিট আমার। সিটবেল্ট বাঁধতে বাঁধতে পিহুর কথা ভাবছিলাম মেয়েটা কত অসহায় ভাবে আমাকে থেকে যেতে বললো। হয়তো অনেক স্বপ্ন ভেঙ্গে গেল।