Skip to content

৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শনিবার | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শুধু সুন্দর নয়, যোগ্য হওয়াটাই শ্রেয়

মলিকা ও লিমা দুই বোন। শিক্ষক বাবার আদরের দুই মেয়ে। ছোট বোন লিমার সৌন্দর্যে চোখ আটকে যাবার মতো। মলিকা ছোট বেলা থেকেই আত্মনির্ভরশীল। মলিকার বিয়ে হয় একজন স্কুল শিক্ষকের সঙ্গে। বিয়ের পরই চালিয়ে যাচ্ছেন পরিবার ও করছেন সেলাইয়ের কাজ। যশোরের এই নারীর কাছে অসহায় ছয়জন নারী আয়ের উৎস খুঁজে পেয়েছেন। নিজ যোগ্যতায় হয়ে উঠেছেন সবার নয়নের মনি। সেই সঙ্গে পরিবারে করেছেন নিজের অর্থনৈতিক সামর্থ্য। করোনার সময়টায় অভাব আসতে পারেনি মলিকার দৃঢ় অবস্থানে।

 

আর লিমার বিয়ে হয় এক ধনী ব্যবসায়ীর সঙ্গে। সমাজের চোখে অপরূপ সুন্দর লিমার স্বামী করোনার সময় বিরাট লোকসানের মুখে পড়েন। বাড়তে থাকে অশান্তি। লিমা এতোটাই শিশু সুলভ আচরণ নিজের সিদ্ধান্তটুকু নেবার ক্ষমতাটাও নেই তার। করোনার এই সময়টায় নানামুখী অশান্তির মুখে কাটতে থাকে তাদের সংসার। যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে। এই প্রবাদটিকে সত্য প্রমাণিত করেছেন মলিকা। তবে সৌন্দর্যটাও একটা গুণ। তবে চুল বাঁধার সঙ্গে রান্নার কৌশলটা আয়ত্ত করাটাই শ্রেয়।

সৌন্দর্য আপেক্ষিক একটা বিষয়। ব্যক্তি বিশেষে  সৌন্দর্যের পার্থক্য হয়। এই সৌন্দর্যকে কোনোভাবে সংজ্ঞায়িত করা সম্ভব নয়। দেখতে কালো, অসুন্দর খারাপ চেহারার মেয়েটা আত্মনির্ভর হয়ে সুন্দরভাবে জীবন পার করছেন। অন্যদিকে সমাজের চোখে তথাকথিত সুন্দর মেয়েটা পরনির্ভরশীল হয়ে বেঁচে আছেন।

 

সৌন্দর্য সাময়িক সময়ের জন্য প্রশান্তি এনে দিলেও প্রকৃতপক্ষে এটি পার্থিব ব্যাপার। তাই সৌন্দর্যর পাশাপাশি যোগ্য মানুষ হওয়াটা শ্রেয়। অসুন্দর, কালো তুচ্ছ ভেবে যে মেয়েটাকে সবাই দূরে সরিয়ে দিচ্ছে অথচ সেই মানুষটাই হয়তো গোটা একটা সংসার চালাচ্ছেন। একসময় বাহ্যিক সৌন্দর্যের উপেক্ষা করে সেও জীবন যুদ্ধে জয়ী হচ্ছে। কণ্টকাকীর্ণ জীবনটাকে সে ঠিক নিজের মত করে উপভোগ করতে পারছে। সে তার কথাবার্তা, চাল-চলন আচার ব্যবহার দিয়ে সবার মন জয় করে নিয়েছেন। হয়ে উঠছেন একজন আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব। নারীকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য সবসময়ই খারাপ। তবে এও মনে রাখা ভালো ‘অসুন্দর’ মেয়েটি কিন্তু বাজে মন্তব্য মোকাবেলা করে কম।

সবথেকে প্রধান সমস্যা হয় বিয়ে নিয়ে। বিয়েতে আমরা ফর্সা, আকর্ষণীয় মেয়ে খুঁজি। এটাই যেন যোগ্যতার পাল্লা। কিন্তু যে ‘অসুন্দর’ মেয়েটা বিপদে পাশে দাঁড়ানোর ক্ষমতা রাখে তাকে আমরা দুরে সরিয়ে দেই। একটা মেয়ের পরিচয় বহন করে সৌন্দর্যের ওপর, যোগ্যতার ওপর নয়।

 

যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে কিছু মেয়ের কার্যক্রম খুবই হতাশাজনক। তারা রূপচর্চা, ফ্যাশন ও মেকআপ ইত্যাদি ক্ষেত্রে যতটা পারদর্শী অন্যান্য ক্ষেত্রে অধিকাংশই তেমনটা দক্ষ নন। তারা ফ্যাশন, রূপচর্চা করে সাময়িক সময়ের জন্য অনেক মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। সোশ্যাল মিডিয়ার বদৌলতে তারা নিজেদেরকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেন। কিন্তু এর ফলস্বরূপ কি আদৌ নিজের পরিচয় তৈরি করা সম্ভব? একটা সময় পর নারীদের যৌবন ফুরিয়ে যায় সেসময়টায় এই সৌন্দর্যটাও ফিকে হয়ে যায়।

 

বিভিন্ন প্রসাধনী ব্যবহার ও অলংকার ব্যবহার করে অনেকে আকর্ষণীয় রূপ ধারণ করেন। তবে সুন্দর হয়ে যদি আশেপাশের লোকজনের সঙ্গে মাথা উঁচু করে কথা বলতে না পারেন, তবে এই সৌন্দর্যের মূল্য কি? বরং বাহ্যিক সৌন্দর্যকে প্রাধান্য না দিয়ে যদি কাজের মাধ্যমে এবং সুন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে সকলের মন জয় করা যায় তাহলে প্রকৃতপক্ষে সুন্দর মানুষ হওয়া সম্ভব।  

 

কারো কাছে ফর্সা বলতে সুন্দর, কারো কাছে কালো। এগুলো সবই মানুষের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি। সৌন্দর্যকে নির্দিষ্ট একটি বক্ররেখায় সীমাবদ্ধ না রেখে একটা সরলরেখায় ভাবতে হবে। তাহলে প্রকৃত সৌন্দর্যটা চেনা যাবে। আমি বলব আত্মনির্ভরশীলতাই ‘অপরূপ সৌন্দর্য’।

 

এই আধুনিকতার যুগে এসেও সৌন্দর্যের পেছনে লেগে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। সৌন্দর্য একটা অনুভূতি মাত্র। এই অনুভূতি আকাশের চন্দ্রের আলোর জন্য একরকম আবার একটা শিশু বাচ্চার ক্ষেত্রে সেটা ভিন্ন। এসব আপেক্ষিক অনুভূতির চেয়ে যোগ্যতা অর্জন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অপরূপ সুন্দর একজন নারীর থেকে নিশ্চয়ই প্রথম এভারেস্ট জয়ী নারী নিশাত মজুমদার, বাংলাদেশের ফেসবুকের দায়িত্বে থাকা শাবহানাজ রশীদ দিয়া, যৌনকর্মীদের ৪০ বাচ্চার দায়িত্ব নেয়া হাজেরা বেগম, প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর ডা. মনিষা চক্রবর্তী কিংবা মালালা ইউসুফজাই, হিলারী ক্লিনটনের সৌন্দর্য অনেক বেশি।

 

চেহারা সুন্দর বলে আজ যে মেয়েটার দ্রুত বিয়ে হয়ে যাচ্ছে তিনি হয়ত লেখা-পড়ার সুযোগ বিরত হলেন। তাই প্রতিটি নারীর নিজ যোগ্যতা দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। তাই ছোট পোশাক বা কারো বাহ্যিক সৌন্দর্যকে প্রাধান্য না দিয়ে নিজ যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। পাল্টাতে হবে সমাজের প্রচলিত রীতি। সীমিত সময়ের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট না হয়ে জীবনকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। কারণ সকল মানুষ-ই সুন্দর।

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ