সুস্থভাবে বেড়ে উঠছে তো আগামী প্রজন্ম?
আজকের তরুন প্রজন্মই ভবিষ্যতের কান্ডারী। তাই তো ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করতে কান্ডারীকে থাকতে হবে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ স্বাভাবিক। প্রশ্নটি এখানেই। কতটা সুস্থভাবে বেড়ে উঠছে আমাদের আগামী প্রজন্ম?
শরীর সুস্থ রাখার জন্য সুষম খাদ্য অপরিহার্য। আমিষ, শ্বেতসার, স্নেহ পদার্থ, খনিজ লবণ, খাদ্যপ্রাণ ও পানি-এই উপাদানগুলো আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় থাকলে সুষম খাদ্য গ্রহণ করা হল বলে মনে করা হয়। কিন্তু সবার খাদ্যতালিকায় কি এই উপাদান গুলো থাকে? অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও উত্তরটি হলো অধিকাংশেরই থাকেনা।
গোটা দিনের মধ্যে দুপুরের খাবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমাদের দেশে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাদের দুপুরের খাবারটি গুরুত্বপূর্ণ ভাবা তো দূরের কথা, একপ্রকার দায়সারা ভাবেই সম্পন্ন করে। তাদের দুপুরের খাদ্যে সুষম খাদ্যের বালাইটুকুই দেখা যায় না। কোনোমতে ভাজাপোড়া আর ফাস্টফুড দিয়ে মধ্যাহ্নভোজ সেড়ে ফেলেন। পুষ্টিকর খাবারের থেকে এখনকার ছেলেমেয়েদের ফাস্টফুড, জাঙ্কফুডই বরং বেশি পছন্দসই।
শহরের অলিগলিতে, রাস্তার পাশে বিক্রি হওয়া খাবারগুলোতে ধুলোবালির আবরন পড়ছে সারাক্ষণ। ঢেকে রাখা তা তো অনেক দূরের কথা
অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে অপরিষ্কার শরীরে তৈরী করা হচ্ছে এসব খাবার। একই তেল দিয়ে দিনের পর দিন খাবার তৈরি করা হয়। ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির এক পরীক্ষায় ঢাকা শহরের ৮৫-৯০ শতাংশ ভেলপুরি, ফুচকা, ঝালমুড়িতে কলেরার জীবাণু ই-কোলাইয়ের উপস্থিতি এবং ভেলপুরি ও ঝালমুড়ির নমুনায় টাইফয়েডের জীবাণু স্যালমোনেলা পাওয়া গেছে।
এসব খাবার খেয়ে স্বাভাবিক ‘গ্রোথ’ তো দূরের কথা, সারাক্ষণ অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হচ্ছে, শারীরিক ‘সুস্থতা’ ধরে রাখাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। অল্প বয়সে গ্যাস্ট্রিক, ব্লাড প্রেসার ও ডায়াবেটিসের মতো নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। খাদ্যতালিকায় প্রাণিজ খাবার, দুধ, শাকসবজি, ফলমূল পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকায় যথাযথভাবে পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয় না। আর পুষ্টিহীনতার কারনে রক্তশূন্যতা, চুল পড়ে যাওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা, অল্পতেই ক্লান্তি, দাঁতের মাড়ি ও দাঁত দুর্বল হয়ে যাওয়াসহ অনেক ধরনের রোগ শরীরে ভর করে। পৃথিবীর অনেক দেশেই এক কাপ পরিমাণ ভাত ও শাকসবজি, ফলমূল, মাছ-মাংস দিয়ে খাবারের প্লেট সাজানো হয়। পক্ষান্তরে আমাদের দেশে বাচ্চাদের বলা হয় 'বেশি বেশি ভাত খাও '।
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন পত্রিকার খবরমতে, বাংলাদেশে ১৯ বছর বয়সী মেয়েদের উচ্চতা অন্যান্য দেশের মেয়েদের তুলনায় ২০ সেন্টিমিটার বা ৭ ইঞ্চি কম। বাংলাদেশে ১৯ বছর বয়সী কিশোরীদের গড় উচ্চতা যতটুকু, নেদারল্যান্ডসের ১১ বছর বয়সীদের উচ্চতা ততটুকু। গবেষকরা বলছেন, শিশুকালে পুষ্টিকর খাবারের অভাব শারীরিক উচ্চতার ভিন্নতা তৈরি করছে। গুণগত মানসম্পন্ন খাবার না খাওয়ার কারণে উচ্চতা হারাচ্ছে দেশের কিশোরীরা। আর এমনটি ঘটছে ব্যক্তি ও পরিবারের আর্থিক সামর্থ্য, খাদ্যাভ্যাস ও যথাযথ পুষ্টিজ্ঞানের অভাবের কারণে।
দেখা যাচ্ছে ইতোমধ্যেই আমাদের আগামী প্রজন্ম শারীরিক-মানসিক ভাবে অনেকটাই ভেঙে পড়ছে। তাই দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে পুষ্টিকর খাবারে তরুণদের আগ্রহ বাড়ানোর জন্য। আগামী প্রজন্মকে সুরক্ষিত ভবিষ্যত প্রদানের জন্য দায়িত্বগুলোকে এগিয়ে নিতে সরকারি কার্যক্রমের পাশাপাশি ব্যক্তি, পরিবার, গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠান, উদ্যোক্তা ও সুধীমহলসহ সমাজের সর্বস্তরের ব্যক্তিদের সমন্বিত উদ্যোগ দরকার।