Skip to content

৬ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | সোমবার | ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারী, তুমি বরং ঘরেই থাকো!

আমাদের সমাজে নারীপুরুষ বৈষম্য নতুন কিছু নয়। এ বৈষম্যের প্রধান একটি দিক হলো, পুরুষ বাইরের কাজ সামলাবে আর নারী থাকবে চার দেয়ালে বন্দী। সময় অনেকটা এগোলেও নারীর ঘরের বাইরে পা রাখা মানতে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ এখনো অনেকটাই নারাজ। ইভটিজিং, ধর্ষণ, হয়রানির মতো ঘটনাগুলোর জন্য এখনো প্রায়শই নারীকেই দোষারোপ করা হয়৷ 

 

বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাওয়া তথ্য অনুসারে, সম্প্রতি কক্সবাজারে ঘুরতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার হন এক পর্যটক নারী। গত ২২ ডিসেম্বর বিকেলে স্বামী ও আট মাসের সন্তানকে নিয়ে সৈকতের লাবনী পয়েন্টে নামেন সৈকতে ভ্রমণে আসা ঐ নারী। বালুচর দিয়ে হেঁটে পানির দিকে নামার সময় তাঁর স্বামীর সঙ্গে একজনের  ধাক্কা লাগে। এর জের ধরেই সন্ধ্যায় ওই নারীকে তুলে নিয়ে প্রথমে ঝুপড়ি একটি চায়ের দোকানে এবং পরে কলাতলীর জিয়া গেস্ট ইন হোটেলে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়। 

 

পরদিন ২৩ ডিসেম্বর রাতে ওই নারীর স্বামী বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় সন্ত্রাসী মো. আশিক (২৮), মো. বাবু (২৫), ইসরাফিল হুদা জয় ( ২৮), রিয়াজ উদ্দিন প্রকাশ ছোটন (৩০), অজ্ঞাতনামা তিনজনসহ সাতজনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। ইতিমধ্যেই এ ঘটনার সাথে যুক্ত ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। 

 

দেশজুড়ে এ ঘটনা আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি করে। এমনকি পুলিশ প্রাথমিক তদন্তের পর ঐ নারীর সাথে অভিযুক্তদের সম্পৃক্ততা আছে বলে ধারণা প্রকাশ করেন৷ পুলিশের ভাষ্যমতে ঐ নারী দীর্ঘদিন যাবত কক্সবাজারে অবস্থান করছিলেন।

 

তবে র‌্যাব তদন্ত করে জানায়, ভুক্তভোগী ওই নারী স্বামী-সন্তানসহ কক্সবাজারের একটি হোটেলে অবস্থান করছিলেন। তাদের সঙ্গে ৮ মাস বয়সের একটি শিশু সন্তান রয়েছে। শিশুটির জন্মগতভাবে হার্টে ছিদ্র থাকায় তার চিকিৎসায় ১০ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। শিশুটির চিকিৎসার অর্থ সংকুলানের আশায় স্বামীসহ কক্সবাজারে অবস্থান করছিল পরিবারটি। তারা বিত্তবান পর্যটকদের নিকট হতে অর্থ সাহায্য চাইতেন।

 

তবে ঘটনার প্রেক্ষাপট যাই হোক না কেন,ধর্ষণের মতো এমন মারাত্মক  অপরাধ অস্বীকার করার জো নেই। এমন ঘটনা যে প্রথমবার ঘটলো তাও নয়। কক্সবাজারে প্রশাসনের হিসেবে গত একমাসে ২০ টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। 

 

কক্সবাজার জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় জেলা পুলিশের দেয়া তথ্যমতে, ১৬ নভেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর একমাসে ১৮টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে নভেম্বরের প্রথম দুই সপ্তাহে আটটি এবং ডিসেম্বরের প্রথম দুই সপ্তাহে ১০টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এরপরও আরো দুইটি ধর্ষণের ঘটনা সামনে আসে। একই সময়ে নারী নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হয়েছে ১৬টি।

 

কিন্তু কাগজে-কলমে ১৮-২০ টি ধর্ষণের ঘটনা দেখা গেলেও বাস্তবে এ সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি হতে পারে এ বিষয়ে কারো সন্দেহ নেই বললেই চলে। শুধু কক্সবাজারেই নয় দেশজুড়েই এমন বহু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। কেউ কেউ মুখ খুললেও অনেকেই লোকলজ্জার ভয়ে রয়ে যাচ্ছে অন্তরালে। 

 

আর অন্তরালে থাকবে নাইবা কেন। এখনো কোনো নারী ইভটিজিং, হয়রানি  কিংবা ধর্ষণের শিকার হলে তার দিকেই প্রথমে আঙুল তোলা হয়। ছুড়ে দেয়া হয় একাধিক প্রশ্ন৷ যেমন- মেয়েটির পোশাক কেমন ছিলো? একা কেন ঘর থেকে বের হয়েছিলো? সন্ধ্যার পরে মেয়েদের বাইরে কি? মেয়েরা এতো ঘরের বাইরে কেন যাবে? মেয়ের চরিত্র ঠিক আছে তো? 

 

এমন হাজারো প্রশ্নের মাঝে ঘুরপাক খাওয়ার থেকে চুপ করে সব মেনে নেয়াকেই  উত্তম মনে করেন বেশিরভাগ  নারীরা। এতো এতো ধর্ষণ, হয়রানি, নির্যাতন সবকিছুতেই যখন নারীকেই উল্টো কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয় তখন দিনশেষে নারীদের উদ্দেশ্যে একটি কথাই বলা যায়, 'নারী, তুমি বরং ঘরেই থাকো'।

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ