মায়ের যাত্রা
ভোরবেলা লিখতে বসেছি
প্লেন আসার শব্দ শুনতে পেয়ে বাইরে ছুটে এসে বোন চেঁচিয়ে উঠল
দাদা দ্যাখ, দ্যাখ,প্লেন যাচ্ছে ! প্লেন !
আমাকেও একটু ছেলেমানুষি পেয়ে বসলো
কাগজ কলম রেখে, ছুটে গেলাম বাইরে
ঠিক যেভাবে ছোটবেলায় অবাক চোখে প্লেন দেখতাম
বোনের পাশে বসে,টালির চালের ওপর দিয়ে
প্লেন উড়ে যাওয়া দেখতে লাগলাম
বোনকে বললাম, প্লেনে করে কে যাচ্ছে বলতো ?
আমার প্রতিবন্ধী বোন, উচ্ছসিত, বলে উঠলো ,
মা যাচ্ছে… মা..
হঠাৎ আমার বুক কেঁপে উঠল
মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে, মৃদু হেসে তবু বললাম ,
কোথায় যাচ্ছে বলতো ?
বোন বললো , বাংলাদেশে দাদা.. বাংলাদেশে..
বোনকে বুকে টেনে নিয়ে কিছুক্ষণের জন্য চুপ মেরে গেলাম
আমার মা তো কোনোদিন প্লেনে চড়েনি
আমরাও না
মাইলের পর মাইল শুধু হেঁটে এসেছি.. হেঁটে এসেছি
প্রতিবন্ধী বোন কেঁদে উঠলে, মা কোলে তুলে নিয়ে হেঁটেছে
আমি ছোট ভাইকে পিঠে তুলে নিয়েছি
একটা ছেঁড়া রুটির ভেতর পাঁচশো টাকার একটা নোট লুকানো ছিল
ওপরে সুজি মাখিয়ে রাখা হয়েছে
আধ খাওয়া রুটি দেখে, কেউ যাতে বুঝতে না পারে
ভেতরে কী আছে
বাকি রুটিগুলো আমরা ভাগ করে খেয়েছি
মায়ের দুটো শাড়ি,আমাদের তিন ভাই বোনের সামান্য কয়েকটি কাপড় এই মাত্র সম্বল
আমরা মাটি পেরিয়ে এসেছি
আমরা কাঁটাতার পেরিয়ে এসেছি
অনেক অনেকটা পথ পেরিয়ে আসার পর
রুটি থেকে টাকাটা বার করে
পাল্টে নিয়ে,আমরা লোকাল ট্রেনে চেপেছি
মা আমাদের বলেছিল,এবার আমরা বাঁচবো জানিস
নতুন করে বাঁচবো
আর কোনো কষ্ট নেই
কিন্তু কষ্ট আর গেল কোথায় !
নতুন একটা স্বপ্নের দেশে প্রতিটি দিনের জন্য মরতে মরতে
মা আমাদের মরেই গেল
প্রতিবন্ধী বোন এখনো ভাবছে
মা বোধহয় প্লেনে করে দেশে ফিরে যাচ্ছে