কিডনি যখন বিপদে
মানব দেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো কিডনি। কিডনি শরীরের নানাপ্রকার কাজ করে থাকে। তবে কিডনি মূলত অম্ল ও ক্ষারের মাত্রার যে ভারসাম্য তা রক্ষা করে থাকে। আর এই ভারসাম্য বজায় থাকার ফলে শরীরের অন্যান্য অঙ্গগুলো ও সঠিকভাবে কাজ করতে পারে।
আধুনিক এই যুগেও দিন কি দিন কিডনি রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। মূলত সচেতনতার অভাব এবং যথাসময়ে চিকিৎসা না নেওয়ার কারণে কিডনি ফেইলর হয়ে থাকে। ডায়াবেটিস ও অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ থেকেই মূলত এমনটা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের প্রায় দুই কোটি মানুষ কোনো-না-কোনোভাবে কিডনি সমস্যায় ভুগছে এবং প্রতিবছর প্রায় ৪০ হাজার মানুষের কিডনি অকেজো হয়ে যাচ্ছে। (সূত্র : কিডনি ফাউন্ডেশন, বেসরকারি সংস্থা)।
কিডনির এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে কিডনির অবস্থা বিপজ্জনক হওয়ার আগেই কিডনির চিকিৎসা নিতে হবে। ৫টি ধাপে কিডনি বিকলের দিকে অগ্রসর হয়। শেষ ধাপে যখন চলে যায় তখন কিডনি সংযোজন করতে হয়। আর এই চিকিৎসার খরচ এতই বেশি যে আমাদের দেশের মানুষের পক্ষে তা বহন করা প্রায় অসম্ভবই।
আপনার কিডনি বিপদের দিকে যাওয়ার আগে চিকিৎসা শুরু করলে আপনি ও এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। কিন্তু কিভাবে বুঝবেন আপনার কিডনি বিপদমুক্ত আছে কিনা? চলুন, দেখে নেওয়া যাক :
১- কিডনি রোগে ফুসফুসে তরল পদার্থ জমা হয়। এ ছাড়া কিডনি রোগে শরীরে রক্তশূন্যতাও দেখা দেয়। এরফলে শ্বাসের সমস্যা হয়, তাই অনেকে ছোট ছোট করে শ্বাস নেন।
২- কিডনি শরীর থেকে বর্জ্য এবং বাড়তি পানি বের করে দেয়। কিন্তু যখন কিডনিতে রোগ হয় তখন কিডনি এই বাড়তি পানি বের করতে পারে না। ফলে, বাড়তি পানি শরীরে ফোলাভাব তৈরি করে।
৩- প্রসাবের সময় ব্যথা হওয়া কিডনির সমস্যার আরেকটি লক্ষণ। মূলত প্রসাবের সময় ব্যথা, জ্বালাপোড়া এগুলো ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের লক্ষণ; কিন্তু যখন এটি কিডনিতে ছড়িয়ে পড়ে তখন জ্বর হয় এবং পিঠের পেছনে ব্যথা করে।
৪- কিডনি অকার্যকর হয়ে পড়লে রক্তে বর্জ্য পদার্থ বাড়তে থাকে আর এ থেকে ত্বকে চুলকানি এবং দাগ তৈরি হয়।
৫- কিডনি রোগের অন্যতম লক্ষণ হলো প্র¯্রাবে পরিবর্তন হওয়া। কিডনির সমস্যা হলে প্রসাব বেশি হয় বা কম হয়। বিশেষ করে রাতে এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। প্রসাবের রং গাঢ় হয়। অনেক সময় প্র¯্রাবের বেগ অনুভব হলেও প্রসাব হয় না।
অনেক সময় লক্ষণে কিডনির সমস্যা ধরা না গেলে দুটি পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করা যেতে পারে কি
ডনিতে সমস্যা আছে কিনা। একটি হলো- প্রসাবে অ্যালবুমিন বা মাইক্রো অ্যালবুমিন যায় কি-না এবং অন্যটি রক্তের ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করে।
কিডনির সমস্যায় ভেঙে না পড়ে নিয়ম মেনে চললে সুস্থ হওয়া অসম্ভব নয়। তবে এর জন্য জানতে হবে কি কি খাবার কিডনিকে ভালো রাখে আর কোনগুলো কিডনির জন্য ক্ষতিকর।
শসা, তরমুজ, নুডুলস, বাদাম, লাউ, বাঙ্গি, কমলালেবু, আখের রস, বার্লি, পিয়াজ, লেবু, মাল্টা, ডালিম, বীট, গাজর, সাজনা ইত্যাদি খাবার কিডনির জন্য বেশ উপকারি। চাইলে আপনিও আপনার খাদ্য তালিকায় এ খাবারগুলো বেশি করে রাখতে পারেন, যা আপনার কিডনিকে রাখবে সুস্থ। প্রতিদিন কমপক্ষে ২ লিটার পানি পান করাও বাধ্যতামূলক।
তার পাশাপাশি পাথরকুচি, রক্তচন্দন, জুনিপার বেরিস ও কিডনির রোগ নিধনে বেশ কাজ করে।