বিয়ে করলেই নাগরিকত্ব পাবেন যেসব দেশের

নাগরিকত্ব মানেই শুধু জন্মসূত্রে প্রাপ্ত পরিচয় নয়—বিশ্বায়নের এই যুগে মানুষ নানা কারণে ভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। কেউ পড়াশোনার জন্য বিদেশে যায়, কেউ বা পেশাগত কারণে অন্য দেশে পাড়ি জমায়। এসব অভিবাসনের অভিজ্ঞতায় অনেক সময় নতুন মানুষের সঙ্গে গড়ে ওঠে গভীর বন্ধন, যা একসময় বিয়েতে রূপ নেয়। আবার অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবেই অন্য দেশের নাগরিককে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেন, নাগরিকত্ব পাওয়ার সম্ভাবনায়।
আগে যেখানে চিঠির মাধ্যমে পত্রমিতালি করে ভিনদেশি বন্ধু খুঁজে নিতে হতো, আজ তা সহজ হয়েছে প্রযুক্তির দৌলতে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিংবা আন্তর্জাতিক মিটিং অ্যাপগুলো মানুষকে আরও সহজে ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। ফলে প্রেম, বন্ধুত্ব এবং বৈবাহিক সম্পর্ক গড়ে ওঠার পথও সুগম হয়েছে।
বিশ্বের অনেক দেশেই বৈধভাবে বিয়ের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিছু দেশে প্রক্রিয়াটি বেশ সরল, আবার কোথাও নির্দিষ্ট সময় একসঙ্গে বসবাস, ভাষাজ্ঞান, কিংবা সংসার টিকিয়ে রাখার মতো কিছু শর্ত পূরণ করলেই মিলতে পারে নাগরিকত্ব। চলুন, এমন কিছু দেশের কথাই জেনে নেওয়া যাক, যেখানে বিয়ে শুধু সম্পর্ক নয়, হতে পারে একটি নতুন দেশের পরিচয় পাওয়ার পথ।
কেপ ভার্ড
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা পশ্চিম আফ্রিকার দ্বীপরাষ্ট্র কেপ ভার্ড। এটি এমন একটি দেশ, যেখানকার নাগরিককে বিয়ের পরই আপনি সেই দেশের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন, কোনো কালক্ষেপণ না করে। তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই বৈধভাবে কেপ ভার্ডের নাগরিককে বিয়ে করতে হবে। নাগরিকত্বের যোগ্যতা অর্জনের জন্য দেশটিতে বসবাসের পূর্বশর্তও নেই। কাজেই প্রক্রিয়াটি সহজ ও সময় সাশ্রয়ী।
স্পেন
দক্ষিণ ইউরোপের সবচেয়ে বড় দেশ স্পেন, যেখানে আপনি কেবল এক বছরেই পেতে পারেন নাগরিকত্ব। স্পেনের আইনে বলা আছে, স্প্যানিশ নাগরিককে বিয়ে করলে তাঁর সঙ্গে এক বছরের বসবাসেই আপনি স্পেনের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন। একবার এই দেশের নাগরিকত্ব পেয়ে গেলে এর পাশাপাশি আপনি পাবেন লাতিন আমেরিকা, ফিলিপাইন, পর্তুগাল ইত্যাদি দেশের দ্বৈত নাগরিকত্বের সুবিধা। নাগরিকত্বের আবেদনের জন্য আপনার লাগবে স্প্যানিশ নাগরিককে বিয়ের বৈধ সনদ ও একসঙ্গে বসবাসের প্রমাণ। এ ছাড়া স্প্যানিশ ভাষার প্রাথমিক দক্ষতা ও তাঁদের সংস্কৃতি সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞানও অনেক সময় কাজে লাগে।
আর্জেন্টিনা
ফুটবলপ্রেমী অনেকের কাছেই এক আবেগের নাম আর্জেন্টিনা। স্থায়ীভাবে থাকার অনুমতি পেয়ে যেতে পারেন, যদি বিয়ে করেন আর্জেন্টিনার কোনো নাগরিককে। মাত্র দুই বছর পরই আপনি নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে বৈধ বিয়ের প্রমাণের পাশাপাশি লাগবে সেই দেশে কোনো অপরাধ না করার প্রমাণ ও সাধারণ স্প্যানিশ ভাষার জ্ঞান।
মেক্সিকো
মেক্সিকোর আইন অনুযায়ী, একজন মেক্সিকান নাগরিককে বিয়ে করলে তাঁর সঙ্গে মাত্র দুই বছর বসবাস করলেই আপনি দেশটির নাগরিকত্ব পেতে পারেন। তবে এর জন্য আপনার থাকতে হবে স্প্যানিশ ভাষার মৌলিক দক্ষতা, বিয়ের বৈধ সনদ ও একসঙ্গে বসবাসের প্রমাণ। সবচেয়ে ভালো দিক হলো, মেক্সিকোর নাগরিকত্ব পেলেও আপনি আগের দেশের পাসপোর্ট রাখতে পারবেন। এই দেশে জীবনযাত্রার খরচ তুলনামূলক কম এবং দেশটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও নিকটবর্তী।
তুরস্ক
অনেকের কাছেই ‘ড্রিম ডেসটিনেশন’ বা স্বপ্নের গন্তব্য তুরস্ক। অপরূপ তুরস্কে বিয়ের পর তিন বছর একসঙ্গে থাকলেই মেলে নাগরিকত্ব। মজার বিষয় হলো, লাতিন আমেরিকা বা ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো তুরস্কের নাগরিকত্বের জন্য সেই দেশের ভাষা বা সংস্কৃতি জানার প্রয়োজন নেই। তিন বছর একসঙ্গে বৈধভাবে দাম্পত্য জীবন কাটালেই করতে পারবেন নাগরিকত্বের আবেদন। এ ছাড়া তুরস্কের নাগরিক হলে আপনি পাবেন এক বিশেষ সুবিধা। তুরস্কের পাসপোর্ট দিয়ে পৃথিবীর ১১০টিরও বেশি দেশে ভিসা ফ্রি বা ভিসা অন অ্যারাইভাল সুবিধা পাওয়া যায়।
সুইজারল্যান্ড
সুইজারল্যান্ড সাধারণভাবে কঠোর অভিবাসন নীতির দেশ হলেও বৈধ বিয়ের মাধ্যমে দেশটিতে নাগরিকত্বের সুবিধা পাওয়া যায়। প্রক্রিয়াটি বেশ সহজও বটে। আপনার স্বামী বা স্ত্রী যদি সুইস নাগরিক হন এবং আপনারা যদি তিন বছর একসঙ্গে থাকেন, তাহলে পাঁচ বছর বসবাসের পর আপনি নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারেন। আপনি যদি দেশের বাইরেও থাকেন, তারপরও ছয় বছরের বিবাহিতকাল অতিক্রান্ত হলেই আবেদন করতে পারবেন নাগরিকত্বের জন্য। সুইজারল্যান্ডের নাগরিকত্বের প্রক্রিয়া সাধারণত বেশ দ্রুত সম্পন্ন হয়। একবার এই দেশের নাগরিকত্ব পেয়ে গেলে আপনি পাবেন ইউরোপে বসবাসের সুযোগও। আবেদনের জন্য লাগবে সুইস সমাজে ভালোভাবে মিশে যাওয়ার প্রমাণ; যেমন সুইজারল্যান্ডের ভাষা, সংস্কৃতি ইত্যাদি সম্পর্কে জানা; যেকোনো অপরাধমূলক কাজে যুক্ত না থাকার রেকর্ড ও বৈধ দাম্পত্য সম্পর্ক বজায় আছে, এমন প্রমাণ।