Skip to content

৩রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শুক্রবার | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৩২ নং বাড়ি

ব্রিটিশ আমল থেকেই রাজধানীর অভিজাত এলাকা ছিল ধানমন্ডি। সেখানে তুলনামূলক অভিজাত লোকের বসবাস ছিলো। সেখানকার ৩২নং বাড়িতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে বসবাস করতেন।

৩২নং বাড়িটিতে সব সময় লোকজনের সমাগম ও হাঁকডাক লেগেই থাকতো। দেশের নানা প্রান্ত থেকে নেতা-কর্মীরা সেখানে ছুটে আসতেন, তাদের প্রিয় নেতার সঙ্গে দেখা করতে। নানা রকম অভিযোগ অনুযোগ নির্ভয়ে বলতেন নেতার কাছে। কারও ব্যক্তিগত আবার কারও দলীয় অভিযোগ। কখনো বা সেই মজলিশে এসে হাজির হতো সবার প্রিয় চোখের মনি শেখ রাসেল।

শেখ রাসেল সবার সঙ্গে চা পান করতেন এবং নানা রকম কথাবার্তা শুনতেন। নেতা-কর্মীরা তাকে ভীষণ আদর করতো। আদর পেয়ে সে খুব খুশি হতো। আর মনেমনে ভাবতো বড় হয়ে সেও বাবার মতো নামকরা নেতা হবে। দেশ ও দেশের জনগণের সেবা করবে।

তখন আগস্ট মাস চলছিল। প্রতিদিনের মতো কর্ম ব্যস্ততা শেষে সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। ভোরের সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আচমকা টেলিফোন বেজে ওঠে। কে একজন ফোনে বলে স্যার আপনি তাড়াতাড়ি বাসা থেকে বেরিয়ে পড়েন। নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী অফিসার ও সদস্য আপনাকে হত্যা করতে আপনার বাসার দিকে যাচ্ছে। সেই কথা শুনে শেখ মুজিব মনে মনে ভাবে কে আমাকে হত্যা করবে, আমার তো বিশ্বাস হয় না। এমন সময় বাসার দিকে ট্যাংক, কামান, সাঁজোয়া যান নিয়ে ওরা এগিয়ে আসে।

কয়েকজন স্টেনগান হাতে নিয়ে বাসায় ঢুকে পড়ে। শেখ মুজিবকে উদ্দেশ করে গালাগালি করতে থাকে। এমন সময় মুজিব ঘর হতে বেরিয়ে বলতে থাকেন তোমরা থামো! কী হয়েছে! আমাকে খুলে বলো? কিন্তু কে শোনে কার কথা। একজন তো মেশিনগান থেকে গুলি করতে করতে এগিয়ে আসে। নিশানা স্পষ্ট। শেখ মুজিবকে হত্যা করা। গুলির আঘাতে মুজিব সিঁড়িতে লুটিয়ে পড়েন। তারপরও গুলি থামায় না। চলতে থাকে কিছুক্ষণ। মুজিবের পুরো দেহ ঝাঁজরা করে মৃত্যু নিশ্চিত করে পাপিষ্ঠ সেনার দল।

সেইদিন একে একে আরও হত্যা করে স্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, শেখ জামাল, শেখ কামাল শিশুপুত্র শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল, রোজী জামাল, ভাই শেখ আবু নাসের, ভগ্নীপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগনে শেখ ফজলুল হক মনি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনিকে। তাদের নিরাপত্তায় নিয়জিত সেনা অফিসার কর্নেল জামিল উদ্দিন সহ আরও অনেককে। মুহূর্তেই রক্তগঙ্গায় পরিণত করে ধানমন্ডির সেই ৩২নং বাড়িটি। আজও সেই বাড়ি পড়ে আছে। নেই শুধু জাতির পিতা সহ সেই দিনে হারানো চিরচেনা মুখ গুলো। যতদিন পৃথিবী থাকবে, লাল সবুজের প্রিয় বাংলাদেশ বেঁচে থাকবে, ততদিন সবার অন্তরে মিশে থাকবে ধানমন্ডির সেই ৩২নং বাড়িটি।।

অনন্যা/এসএএস

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ