আকরামের চলচ্চিত্রে জয়া প্রকৃত অর্থেই বাংলার মুখ
বাংলাদেশের মাটিতে শিগগিরই মুক্তি পেতে চলেছে ‘নকশীকাঁথার জমিন’ l চলচ্চিত্রটি আনকার্ট সেন্সর পেয়েছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র বোর্ডের সদস্যদের প্রশংসাও কুড়িয়েছে l
ভারতের ৫৩তম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে আইসিএফটি-ইউনেস্কো গান্ধী মেডেলের জন্য মনোনীত হয়েছিল চলচ্চিত্রটি l একইসঙ্গে বেঙ্গালুরু আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এশিয়ান কম্পিটিশন বিভাগে ১৪টি বাছাই করা সেরা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রের মধ্যে তৃতীয় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবেও পুরস্কার পেয়েছে ‘নকশীকাঁথার জমিন’ (A Tale Of Two Sisters).
এই চলচ্চিত্রের বিষয় মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট। মূল গল্প হাসান আজিজুল হকের ‘বিধবাদের কথাl
হাসান আজিজুল হকের জন্ম পশ্চিমবঙ্গে হলেও দেশভাগ তাঁকে ছিন্নমূল করেছে। আজীবন সেই যন্ত্রণা ফুটে উঠেছে সৃষ্টির পরতে পরতে। বাংলাদেশ সরকার তাঁকে স্বীকৃতি দিয়েছে, নানাভাবে সম্মানিত করেছে। কিন্তু জন্মমাটি, ছিন্ন হয়ে যাওয়া পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারত থেকে তেমন কোনো পুরস্কার দেওয়া হয়নি।
আকরাম খান বাংলাদেশের একজন ব্যতিক্রমী শক্তিশালী পরিচালক। হাসান আজিজুল হকের গল্পকে চলচ্চিত্রের ভাষায় যেভাবে প্রকাশ করা দরকার, যথাযথ শৈল্পিক দক্ষতায় তা করে উঠতে পেরেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের ওপরে নির্মিত ‘গেরিলা ‘ চলচ্চিত্রে আমি জয়াকে প্রথম আবিষ্কার করেছিলাম। অসাধারণ অভিনয় করেন। চরিত্র বিশেষে নিজেকে ভেঙে ভেঙে গড়ে তুলতে পারেন l আকরাম খানের ব্যতিক্রমী চলচ্চিত্রে জয়া প্রকৃত অর্থে বাংলার মুখ। নিজের সেরাটুকু দিয়ে নদীর মতো চলমান রাগাশ্রয়ী সংগীতের বুকে বর্ণচ্ছটা হয়ে ফোটেন। আমাদের কারুখচিত এফোঁড় ওফোঁড় নকশী কাঁথার জমিনে দীপ জ্বেলে রাখার মতো এমন একটি মুখকেই তো দরকার ছিল। আর আকরামের চলচ্চিত্রে জয়া যদি চাঁদ হয়, চাঁদের হাটে বাকি সব চরিত্র এক একটি উজ্জ্বল তারা। সেরাটুকু দেওয়ার চেষ্টা করে যান। দুই বোনের মধ্যে এক বোন জয়া অন্য বোন সেওঁতি। তিনিও অসাধারণ অভিনয় করেছেন।
বাকিটা শৃঙ্খলিত একটা তপ্ত ভূমিতে মুক্তির লড়াই l যুদ্ধের পরিস্থিতিতে একটা ঘরের ভেতরেও সম্পর্কের সঙ্গে সম্পর্কের ঠাণ্ডা লড়াই। যেকোনো মুহূর্তে বারুদে শুধু অগ্নি সংযোগের অপেক্ষা।
সময় পরিস্থিতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সর্বহারা দুই বোন জীবনে জীবন বুনে চলে। বুনে চলে মুক্তির কথা। ঝড়ের বুকে জীবনতরী বইয়ে নিয়ে যাওয়ার গল্পই তো ‘বিধবাদের কথা’।
এই চলচ্চিত্র আরও অনেক অনেক পুরস্কার নিয়ে আসবে, পরিচালক শিল্পী কলাকুশলীদের উৎসাহ জোগাবে আমি আশা রাখি। আর প্রতিটি মানুষের ভালোলাগা একেকটি প্রণাম হয়ে স্থান পাবে হাসান আজিজুল হকের চরণে।
মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথাতে এই চলচ্চিত্র একটি ফুল l