Skip to content

৭ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | মঙ্গলবার | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিকলে বেঁধে নারীনির্যাতন: মানবতার চরম অবমাননা

নারীনির্যাতন নতুন কোনো ঘটনা নয়। আমাদের সমাজে নারীরা চিরকালই নির্যাতনের শিকার। পরিবার থেকেই কন্যাসন্তানের সঙ্গে শুরু হয় বৈষম্যমূলক আচরণ। সেই আচরণ কোনোদিনই ইতিবাচক হয়ে দেখা দেয় না। বরং আজন্ম নারীকে পরীক্ষা দিতে হয়। সতীত্বের পরীক্ষা থেকে শুরু করে মায়া-মমতা এবং ধৈর্যের পরীক্ষা। কোনো পথই নারীর জন্য সহজ নয়। আর এই অবহেলা-বঞ্চনার শিকার হতে হতে আমাদের নারী সমাজও খাপ খাইয়ে নিতে শিখেছে। বলা চলে নারীরা খাপ খাওয়াতে বাধ্য হয়। কারণ যতই নির্যাতনের শিকার হোক না কেন, পরিবারের সদস্যদের থেকে অধিকাংশ নারীই সহোযোগিতা পান না। বরং নানাবিধ অজুহাতে তাকে প্রতিনিয়ত নিপীড়ন সহ্য করতে হয়।

যেকোনো অজুহাতে স্ত্রীর প্রতি অমানবিক অত্যাচার এ সমাজে অহরহ ঘটছে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে পরিবারের সদস্যদের পাশে থাকার গল্প খুব কম নারীর কাছ থেকে শোনা যায়। বাবা-মা বা অভিভাবকশ্রেণী নারীকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে সন্তানের কথা বা পরিবারের সম্মানের কথা ভেবে সবকিছু সহ্য করেই স্বামীর সংসার করতে বাধ্য করেন। আবার যখন এই নারীই স্বামীর অমানুষিক অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেন বা স্বামী কর্তৃক হত্যার শিকার হন তখন ঠিকই পরিবারের সদস্যদের আহাজারি করতে শোনা যায়। কিন্তু সমাজ নামক এই জঞ্জাল থেকে নারীরা কবে রক্ষা পাবে? শুধু মান-মর্যাদা বা সন্তানের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দিতে গিয়ে আর কতো নির্যাতনের শিকার হবে নারী!

শুধু তাই নয় এমনকি স্বামীর নেশা-ভানের কারণেও স্ত্রীকে নির্যাতনের শিকার হতে হয়। স্ত্রী যদি স্বামীর এ ধরনের অপকর্মের সঙ্গী না হয়, টাকার যোগান না দেয় সেক্ষেত্রেও নারীকে নিপীড়নের শিকার হতে হয়। নারীর সঙ্গে এমন আচরণ নতুন নয়। নারীরা এতটা অস্পৃশ্য আমাদের সমাজে ভাবতেই গা শিউরে ওঠে!

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে নেশার টাকা দিতে না পারায় স্ত্রীকে দুই দিন ঘরে তালাবদ্ধ করে খুঁটির সঙ্গে শিকল দিয়ে বেঁধে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে, এক মাদকসেবী স্বামীর বিরুদ্ধে। বিয়ের পর থেকেই স্ত্রী জানতে পারেন তার স্বামী বিল্লাল একজন মাদকসেবী। সে স্ত্রী সন্তানদের ভরণপোষণ তো দেয়ই না বরং নেশার টাকার জন্য প্রতিনিয়ত স্ত্রী তাসলিমা আক্তার ও তার ৬০ বছরের বৃদ্ধা মা ফাতেমা বেগমকেও শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। এবং নেশার টাকা না দিলে তাদেরকে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত দুই দিন ধরে বসতঘরে তালাবদ্ধ করে এবং ঘরের খুঁটির সঙ্গে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখে স্ত্রী তাসলিমা আক্তারের ওপর অমানুষিকভাবে দৈহিক নির্যাতন চালায় বিল্লাল। পরে সোমবার ফাতেমা বেগম এলাকার গণ্যমান্য লোকজনকে ডেকে এনে তাসলিমাকে নির্যাতনের কবল থেকে উদ্ধার করে থানায় পাঠায়।

ঘটনার সূত্রপাত একদিনের নয়। বিয়ের পরই সে স্বামীর অপকর্ম সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হলেও তখনই কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বরং তাদের ঘরে সন্তানও জন্ম নিয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় বিশেষ করে গ্রামের অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত নারীরা ব্যাপক অসহায়। শিক্ষা না থাকার কারণে তারা স্বাবলম্বী হওয়ার পথ পায় না। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো এই নারীদের পরিবারের সদস্যদের থেকেও কোনো রকম সাহায্য-সহোযোগিতা এরা পায় না। ফলে স্বামীর সংসারে যতোই মৃত্যুসম যন্ত্রণা ভোগ করতে হোক না কেনো তবু সব নির্যাতন সহ্য করতে বাধ্য হয়। সরকারি, বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে এসব গ্রামীণ অসহায় নারীদের কল্যাণে এগিয়ে আসা উচিত। নির্যাতনের শিকার হলে সহজেই যাতে এর প্রতিকার পায় সেলক্ষে সরকারের হস্তক্ষেপ জরুরি। এসব নারীরা যদি পথের দিশা পায় বা কোন আশ্রয় পায় তবে আজীবন নিজেকে অন্যের দাসীবৃত্তি থেকে রক্ষা পাবে। নিজের এবং দেশের জন্য কল্যাণময় পন্থা বেছে নিতে পারবে। তাই অসহায় এসব নারীদের কল্যাণে অবশ্যই সরকারি-বেসরকারিভাবে সহোযোগিতা জরুরি।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ