Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হৃদিতা’ চলচ্চিত্র এবং দুচার কথা

সমসাময়িক কবি সাহিত্যিকদের লেখা নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ হলে, তা আলাদা একটা মাত্রা পায়। পাঠক সেই লেখাটা পড়ে আগে থেকেই মনের মধ্যে অনুভূতির একটা বাসা তৈরি করে রাখে, এবার সেই লেখাটা যখন চলচ্চিত্রে রূপ পায়, তা দেখতে গিয়ে পূর্বের অনুভূতির বাসাটার যেন দরজা জানালা খুলে যেতে থাকে। নতুন করে ডানা মেলে l অন্যরকম আরেকটা ভালোলাগার বোধ গড়ে ওঠে। হৃদয়ের পরিতৃপ্তি জোটে।

এই যেমন জয় গোস্বামীর কাব্যউপন্যাস ‘যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল ‘ দেশ পত্রিকার পুরনো পুজো সংখ্যা শিয়ালদা স্টেশনের বাইরে ফুটপাত থেকে কিনে নিয়ে এসে আমি পড়েছিলাম। মনের মধ্যে একটা রেশ ছিল। প্রেসিডেন্সি কলেজে ১৯৯৮ সালে বাংলা অনার্স এর ভর্তি পরীক্ষা দিতে গিয়ে দেখলাম টীকা লিখতে দিয়েছে। আমাই আর পায় কে! অনেকটা সময় নষ্ট করে পরিমিতি বোধের কথা ভুলে, পরীক্ষার খাতায় লিখতে বসেছি ভুলে, আবেগতাড়িত প্রায় আড়াই পাতা লিখে ফেললাম, সদ্য পড়া জয় গোস্বামীর কাব্য উপন্যাস নিয়ে। অথচ টীকাটা ছিল মাত্র চার নম্বরের। বিজয়লক্ষ্মী বর্মন যখন মঞ্চে একক অভিনয়ের নাটক নামালেন সেই নাটক দেখতে ছুটলাম। সৃষ্টি একটা সাঁকোর মত স্রষ্টার ‘সৃষ্টি সুখের উল্লাস’ পাঠকের মধ্যেও প্রবেশ করে যায়। জয় গোস্বামীর ‘সাঁঝবাতির রূপকথারা’ পড়ার পরেও সেই ভালো লাগা থেকে চলচ্চিত্র দেখতে ছুটেছিলাম।

আবার লেখকের সাথে চলচ্চিত্র পরিচালকের গোড়া থেকে যদি একটা আত্মিক যোগাযোগ তৈরি হয়ে যায়, লেখক যেভাবে লিখেছেন, যেভাবে বলতে চেয়েছেন, পরিচালক নিজের মন মেধা সৃষ্টিশীলতার সাথে মিলিয়ে তাকে অনবদ্য রূপ দিতে পারেন। কবি লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সাথে চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষের তেমন একটা বনিবনা ছিল। হৃদয়ের গভীর দেয়া নেয়া। সুনীলের লেখাকে পরপর তাই অসামান্য চলচ্চিত্রে রূপান্তরিত করতে পেরেছেন। শুনেছি ঋতুপর্ণ ঘোষও নাকি একবার সুনীলের লেখা নিয়ে সিনেমা করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু আদুরে গলায় সুনীল বলেছেন, গৌতমতো আগেই বলে রেখেছে সিনেমা করবে।

বাংলাদেশে সম্প্রতি ‘হৃদিতা ‘ নামের একটি চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে। পরিচালক এম. এন. ইস্পাহানী। ‘হৃদিতা ‘ কবি লেখক আনিসুল হকের একটি জনপ্রিয় উপন্যাস। ২০০১ সালে বাংলাদেশে ঈদ সংখ্যার ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছিল। এক তরুণীর সাথে এক তরুণ শিল্পীর সম্পর্ক, প্রেম মিলন এবং বিচ্ছেদের যন্ত্রণার, কাতর ভালবাসার গল্প। অনেকেই নিশ্চয় এই লেখা গত দু দশকে পড়ে ফেলেছেন। এখন চলচ্চিত্র দেখতে নিশ্চয় ছুটবেন। আর পড়া লেখার সাথে, দেখা লেখার মেলানোর চেষ্টা করবেন। আমিও এপার বঙ্গে বসে একটু ট্রেলার দেখেছি। ভিন্ন আমেজের একটি গান ‘ঠিকানাবিহীন তোমাকে লিখব কোথায় আমি চিঠি ‘ শুনেছি। ভালো লেগেছে।

এই উপন্যাসটি লেখার সময় আনিসুল হকের চোখে নাকি জল চলে আসতো। ঘরে বসে কাঁদলে কে কী ভাববে, তাই বাথরুমে গিয়ে কান্না লুকোতেন। এখন চলচ্চিত্র হওয়ার পরেও তাই তিনি সোজাসাপ্টা বলছেন, বড় কোন পুরস্কারের জন্য এই ছবি তৈরি হয়নি। শুধু মানুষের একটু ভালো লাগবে, ভালো লাগাতে পারবেন এইটুকু মাত্র প্রত্যাশা। আর তিনি এও মনে করেন, এই লেখা লিখতে বসে যেভাবে কাঁদতেন, দর্শকও নিশ্চয় কাঁদবেন।

আজকের এই চতুর চটুল নিয়ত পরিবর্তনশীল সমাজে মানুষের চোখের জল যখন প্রায় ফুরিয়ে আসছে, কেউ যদি একটু সৃষ্টিরসে মথিত করে, একটু কাঁদাতে পারেন, সেটাই বা কম কী! কবির বিবেক ভালবাসা চলচ্চিত্র মাধ্যমে আবর্তিত হোক।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ