নারীর ক্ষমতায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
'পুরুষতান্ত্রিক সমাজ' এই ট্যাগের অন্তরালে নারীরা চিরকাল পুরুষের শাসনের অধীনে থেকে এসেছে। পিছিয়ে পড়েছে জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই। এই বৈষম্য থেকে বেরুনোর জন্যও আবার বহু আন্দোলন বা প্রতিবাদের সাক্ষীও হয়েছে এই সমাজ। এসব বৈষম্য দূর করতে নারীর কর্মসংস্থান কিংবা শিক্ষার সুযোগ, মোটকথা নারীর ক্ষমতায়নের বিকল্প কিছু নেই। আর নারীর ক্ষমতায়নের এই পথে এক অবিস্মরণীয় অবদান রেখে যাচ্ছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।
নারীর প্রতি বৈষম্যময় দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর জন্য যে মানবিক গুণ থাকা প্রয়োজন তা হয়তো মানুষের মনে মস্তিষ্কে জাগ্রত করার তেমন কোনো যান্ত্রিক উপায় নেই। তবে নারী ক্ষমতায়নে নারীর জন্য সমস্ত সুযোগ সুবিধার পরিবেশ তৈরি করে দেওয়ার হাজারো উপায় রয়েছে কোনো রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের হাতে। তার যথার্থ উদাহরণ হতে পারেন মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা।
টানা তিনবারের সফল নেতৃত্ব দিয়ে এবার চতুর্থ বারের মত দেশের, মানুষের দায়িত্ব নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এই দেশনেত্রী। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের সাথে সাথে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ থেকে শুরু করে নারীশিক্ষাকেও এগিয়ে এনেছেন বহুযুগ পার করে। তিনি মনে করেন নারীর ক্ষমতায়নকে তরান্বিত করতে পারে কেবল নারীর আয় ও কর্মসংস্থান। সে লক্ষ্যেই তিনি ২০৪১ সাল নাগাদ কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ৫০ শতাংশে উন্নীত করার অঙ্গীকার করেন।
২০২০ সালের ১লা অক্টোবর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত হয় ফোর্থ ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স অন উইমেনের ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক ভার্চুয়াল বৈঠকে, সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর সমতা, ক্ষমতায়ন এবং অগ্রগতি নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অঙ্গীকার নবায়ন ও প্রচেষ্টা জোরদারের আহ্বান জানান।
২০১৯ সালে নারীর ক্ষমতায়নে সমৃদ্ধ ভূমিকা ও দক্ষ নেতৃত্বের জন্য রাখার জন্য ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ উপলক্ষে ‘লাইফটাইম কন্ট্রিবিউশন ফর উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’- অর্জন কর নেন গণতন্ত্রের এই মানসকন্যা। তবে এমন অর্জনের পেছনে যে নিজের কর্ম গুণের তালিকাকে দীর্ঘায়িত করে চলেছেন তাতে কোনো সন্দেহ পোষণ করা যায় না।
সামাজিক, অর্থনৈতিক এমনকি রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও নারীর বৈষম্যহীন উপস্থিতি নিশ্চিত করতে শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ৫ থেকে ৫০টি করেছের। এছাড়াও রাজনীতিতে নারীর বর্ধিত অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টির জন্য ইউনিয়ন কাউন্সিল ও উপজেলা পরিষদ এবং পৌরসভায় সংরক্ষিত নারীর আসনও এক-তৃতীয়াংশে বর্ধিত করেছেন। পরিবারে নারীর সমতা বিধানের জন্য যৌতুক প্রতিরোধে ‘যৌতুক নিরোধ আইন-২০১৭’ প্রণয়ন করেছেন। এছাড়া পাসপোর্টসহ সব ক্ষেত্রে পিতার নামের পাশাপাশি মাতার নাম লেখার রীতিও বাস্তবায়ন করেছেন।
এসব নীতি বাস্তবায়নের সাথে সাথে নারীদের জন্য দিয়েছেন নানান সু্যোগ সুবিধা। এই যেমন, প্রসূতি মায়েদের জন্য ৬ মাসের ছুটি কার্যকর করা, দরিদ্র ও গর্ভবতী মায়েদের মাতৃকালীন ভাতা প্রদান, সরকারি কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ৪০টি মন্ত্রণালয়ে জেন্ডার সেনসিটিভি বাজেট প্রদান; ‘নারী বোর্ড ও জাতীয় মহিলা সংস্থা প্রতিষ্ঠা’, নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নে ২০১১ সালে ‘জয়িতা ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ আইন-২০১৫ প্রণয়ন।
এমনকি নারীর ক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে প্রায় ১৫৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ খাতে রেখেছেন। এখানেই শেষ নয়, বেকার এবং অবহেলিত ও সুবিধা-বঞ্চিত মহিলাদের জন্য তারই অধীনে আরো অনেক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে।
সম্প্রতি লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করতে নারী নেটওয়ার্ক গঠনের উপর জোর দিয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতির আহ্বানে নারী নেতাদের নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বিশ্বনেতাদের সামনে তিনটি প্রস্তাব রাখেন। যেগুলো প্রস্তাবের বাস্তবায়ন হলে লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করতে কাজে দেবে।
বিগত কয়েকবারের সরকার ব্যবস্থার দিকে একটু আলোকপাত করলেই এদেশের নারীর সার্বিক উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়নে 'বিশ্ব মানবতার বিবেক' হিসেবে আলোচিত নাম জননেত্রী শেখ হাসিনার অসামান্য অবদানকে অস্বীকারের জায়গা পাওয়া যাবে না। যিনি সমান তালে দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সর্বক্ষেত্রেই অবদান রেখে চলেছেন।