পেশা নির্বাচনে নারীর স্বাধীনতা কতদূর
স্বাধীন বাংলাদেশে এখনো অর্ধেক নাগরিক পরাধীন বললেও অত্যুক্তি হয় না। সেই অর্ধেক নারগিরক কারা, এই প্রশ্নের উত্তরে নিশ্চয় নারী। তারা স্বাধীন দেশের নাগরিক সংসার জীবন থেকে শুরু করে পেশা নির্বাচন পর্যন্ত যেকোনো সিদ্ধান্তে পুরুষতন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল। কঠিন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে প্রতি-নিয়ত তারা সমাজের সব ধরনের প্রতিবন্ধকতাকে রুখে দেওয়ার চেষ্টা করলেও নিজের জীবনে এসে সম্পূর্ণ একা, অসহায়!
বিভিন্ন সামাজিক কারণে পেশা নির্বাচন করার ক্ষেত্রে নারীরা নির্বিকার! পেশা নির্বাচন সম্পর্কে তাদের শৈশব থেকে ভাবতে শেখানো হয় না। বরং নারীদের ঘরোয়া-জীব হিসেবে গড়ে তুলতেই পরিবার-সমাজের থাকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা।
কিন্তু এখন যুগের পরিবর্তন ঘটেছে। একইসঙ্গে জীবন-জীবিকার ধরনেও পরিবর্তন এসেছে। এরপরও নারীর কল্পনার জগৎকে প্রসারিত করার মতো স্বাধীনভাবে পেশা নির্বাচনের অধিকার দেয় না সমাজ।
পুরুষের মতো নারীও স্বাধীন সত্তার মানুষ। তাই নারীকেও আত্মশক্তিতে বলীয়ান করে তোলা উচিত। এজন্য পরিবার থেকেই নারীর মতপ্রকাশ ও পেশা নির্বাচন করার অধিকার বিষয়ে সচেতন করে তুলতে হবে।
ছোটবেলায় কন্যা শিশুকে খেলার জন্য দেওয়া হয় হাঁড়ি-পাতিল, আর ছেলে শিশুকে দেওয়া হয় পিস্তল -রকেট, প্লেন, মোটরবাইক, ব্যাট, বল প্রভৃতি। শিশুকাল থেকেই মেয়ে ও ছেলের যে বিভেদ পরিবারই সৃষ্টি করে, তারই পরিপ্রেক্ষিতে শিশুর মানসিকতা তৈরি হয়, মানসিক বিকাশ ঘটে। ফলে মেয়েরা শান্ত থাকে, নিজের অধিকার সম্পর্কে অসচেতন হয়ে গড়ে ওঠে। বিপরীতে ছেলে শিশু ঘরের বাইরে জগৎ সম্পর্ক তখন থেকেই পরিচিত হওয়া শুরু করে।
পরিবার থেকে যে কন্যা শিশু সসংকোচ আচরণে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে, পরবর্তী সময় পেশা নির্বাচনেও থাকে কুণ্ঠিত। অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে, নিজের অভিমত জানানোর ক্ষেত্রে কখনোই দৃঢ়কণ্ঠী হতে পারে না। হতে চায়ও না। তারা ঝুটঝামেলাহীন জীবনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে।
পেশা হিসেবে নারীদের প্রথম পছন্দের তালিকায় আছে শিক্ষকতা। এই মহান পেশাকে কেন্দ্র করে অনেক নারীই নিজেদের কল্পলোক রচনা করে। কিন্তু এর বাইরও হাজারো পেশা রয়েছে, যেখানে অধিকাংশ খাতে নারীর অবস্থান শূন্যের কোঠায়!
আমাদের সমাজের দিকে লক্ষ করলেই নারীদের অবস্থান দৃশ্যমান হয়ে উঠবে। দেশের অভ্যন্তরে কয়জন ট্রেন চালক, কয় জন বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, ব্যাংকের এমডি, পুলিশের ডিআইজি, বিমান চালক, কয় জন কম্পিউটার সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, কয়জন নারী কৃষি উদ্যোক্তা আছেন?
এমন হাজরো পেশা রয়েছে যেখানে নারীদের অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে! কিন্তু নারী কেন আজও পেশা নির্বাচনে স্বাধীন নয়? কেন তাদের মানসিক শক্তি গড়ে উঠছে না? পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্রসহ সব ক্ষেত্রে নারীদের কাজের উপযোগী পরিবেশ তৈরি না হলে তাদের মানসিক শক্তি গড়ে উঠবে না।
নারী-পুরুষের দৈহিক গঠন বাদে কোথায় প্রভেদ! নারীদের শক্তি-যোগ্যতা সবই আছে কিন্তু নারীরা আজও পুরুষতন্ত্রের শিকার। পুরুষতন্ত্রের জালে বন্দি। কিন্তু এভাবে আর বেশি দিন চলতে দেওয়া যায় না। এখনই সময় নারীর আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পেশা নির্বাচনে গুরুত্ব দেওয়া। নারীর পেশা হোক সর্বময়। হার মানা হার পরুক গলে; তবেই নারীর মুক্তি।