Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারীদের ১৫০ গজ, পুরুষ আর আসামির সারা বাংলাদেশ

সম্প্রতি নারী ও শিশুদের জন্য কক্সবাজারে একটি সুরুক্ষিত এলাকা তৈরী করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য নাকি নারী ও শিশু পর্যটকদের একটা সুরক্ষিত ভূমি প্রদান করা। ন্যায়বিচারের নামে এমন প্রহসন মূলক কর্মকান্ড হাসির উদ্রেক না ঘটিয়ে আর যায় কই।

কবে যেনো শুনতে পাই বাংলাদেশের আইন ব্যবস্থা নারী ও শিশুদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারছেনা। সে কারণে নারী ও শিশুদেরকে দেশ ছেড়ে অন্য কোনো দ্বীপে গিয়ে কোয়ারেন্টাইন পালন করতে উবুদ্ধ করে। বাধ্য ও করতে পারে। তবে এমন কোনো পদক্ষেপ নিলেও অবাক হওয়ার তেমন কিছু নেই। বাংলাদেশ তো!

 

শিক্ষাদীক্ষা হোক বা প্রচলিত আইন ব্যবস্থা হোক বা ধর্মীয় রীতিনীতির বেড়াজাল। নারী হওয়া তো একপ্রকার অপরাধ! যেদেশে ধর্ষন হলে এখনো মানুষ ভিক্টিমের ১০০ টা দোষ বের করতে থাকে সেদেশে নারীদের ১৫০ গজের একটা সুরক্ষা জোন তৈরী করে দেয়াই বা কম কি! 

একটা দেশের অর্ধেক জনসংখ্যা হলেন নারী। তাঁদের পা থেকে মাথা সমস্ত কিছুই একটা নিয়মের আঁধারে ঢাকা। পোশাক-আশাক, চলন-বলন, খাবার-দাবার সবকিছুতেই প্যারামিটার সেট করে দেয়া। এই সকল প্যারামিটার সেট করার পরেও নারীর জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই, প্রানে বেঁচে ঘরে ফিরতে পারবে কিনা ঠিক নেই। কোথায় গেলে ধর্ষন হতে হবে না, এর হদিশ কেউ জানে না।

 

একটা মানুষ হিসেবেও তাঁর নিজস্ব কোনো পরিচিতি পর্যন্ত নেই। তাকে একটা পরজীবি তৈরী করে রাখা হয়েছে। কিন্তু এত নিয়ম কানুন করে আসলে ফলাফলটা কি দাড়াচ্ছে? এইযে একটা পর্যটন কেন্দ্র। যেখানে সারা পৃথিবীর মানুষেরা ঘুরতে আসে। ছুটির দিন গুলোতে মানুষ একটু স্বস্তির নিশ্বাস নিতে যায়। সেখানে এমন নরখাদকের দল কবচা করে নিচ্ছে। আর প্রশাসন দল, সীমানা রক্ষাকারী মন্ত্রীর মত তাঁদের পাহারা দিচ্ছে এটা নিয়ে একটা গোঁটা রম্য রচনা লিখে ফেলা যায়।

 

নারীকে যদি আলাদা নিরাপত্তার নামে  কয়েকশ গজের জায়গা করেই দিতে হয় তাহলে নারীকে আর সুরক্ষা দেয়া হলো কোথায়? উলটো এই সিদ্ধান্তটি দেখলে মনে হয় প্রশাসন নারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই ব্যর্থ। মনে হয় যেন, ভুক্তোভোগীদের একটা জেলখানায় বন্দী করে ধর্ষকদের গায়ে নির্মল হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়ানোর জায়গা করে দিয়েছে প্রশাসন।

 

ধর্ষক এবং গর্হিত আসামীদের জন্য বাংলাদেশ কি এতই নিরাপদ আশ্রয় তাহলে? যাবতীয় অপরাধীর দল তাহলে প্রশাসন কে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরানোর মত ক্ষমতা রাখে? আর যারা সাধারণ জনগণ তারাও কি এই অপরাধীদের তৈরী করা একটা ভূমিতে আড়ষ্ট হয়ে বসে থাকবে? এই রকম অপরাধীর জন্য আর কতদিন কাঁটাহীন পথ বানিয়ে দিবে মানুষ?

 

একজন ভুক্তোভোগীকে দোষারোপ করে হোক আর প্রাণে হত্যা করেই হোক। অপরাধীকে আরো অপরাধ করার সুযোগটা দিয়ে তো আসলে ব্যক্তিগত নিরাপত্তাও আসছেই না, বরং সামাজিক নিরাপত্তা আরো বহুদূর। যারা ভুক্তোভোগীকে দোষারোপ করে মনে করে বড়ই নিরপেক্ষ মতবাদ প্রদর্শনে সিদ্ধহস্ত হয়েছে তাঁরা সম্ভবত জানেনা বাংলাদেশে ধর্ষণ ও নারীর প্রতি যৌন হয়রানির পরিসংখ্যান এখনো উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে বৈ কমছে না।

 

বিচারহীনতার সংস্কৃতি হয়তো এতটা জোরালো হতো না। কিন্তু হয়েছে, কারণ বিচারহীনতার সংস্কৃতিকেই মানুষ আপন করে নিয়েছে। এতটাই আপন করেছে যে, মানুষ এই ব্যাপারটাকে যমের মত মাথায় বসিয়ে রেখেছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরী হতেও মানুষের সহযোগীতা আবশ্যক। যেখানে মানুষ মনে করে অমুক-তমুক, ছোটো-বড় সহিংসতা নিয়ে আইনের সহযোগীতা নিলে মানসম্মান যাবে। আর তাই চুপ করে প্রতিটি অন্যায় মেনে নিয়ে বসে থাকতে হবে। সেখানে বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে ওঠাই স্বাভাবিক।

 

তবে এমন না হয়ে যদি জঘন্যতম অপরাধের পরিণতি একমাত্র শাস্তিই শেষ কথা হতো, তাহলে হয়তো নারীদের সুরক্ষা দেয়া নিয়ে কেউ দিশেহারা পরিস্থিতির সম্মুখীন হতো না। ‘১৫০ গজ সুরক্ষা জোন’ নামক একটা ঠাট্টা বিদ্রুপ ও তৈরী হতো না। নারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করার নামে একটি সুরক্ষা জোন এর ব্যানার কেবল হাসির উদ্রেক ছড়ায় না, বরং যথেষ্ট অপমানজনকও। দেশের একেকজন প্রাপ্ত বয়স্ক নাগরিক তাঁরা।তাঁদেরকে জন্য শ’ দেড়েক গজ জায়গা দান করা হয়েছে। আর বাকি ৫৬ হাজার বর্গামাইল পুরুষ এবং আসামীর জন্য খুলে দিয়েছে। 

১৫০ গজ সুরক্ষা জোনটি নারীদের সুরক্ষার চেয়ে একটা চিড়িয়াখানার উদ্বোধন অনুষ্ঠান বেশী। যেন নারী ও শিশুরা এক একটা চিড়িয়াখানার জন্তু। আর তাঁদের কে বড় খাঁচায় আটকে রেখে একটা প্রদর্শনীতে দেয়া হয়েছে। বাদাম আর ছোলা নিয়ে সবাই যেন ঘুরতে আসে।

 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ