Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অজানা ভালোবাসার রংধনু

সকাল ৭টা, ভোর বললেও চলে, এতো সকালে কাজ ছাড়া আসলে কেউ বের হতে চায় না৷ পরিবেশটা শান্ত হলে হয়তো সকালটা আরো সুন্দর হতো৷ ক্লাস শুরু হবে ৯ টায়৷ যেতে আধ ঘণ্টা লাগে, তবে আগেই যাই কারণ একটাই, ধ্রুব কে দেখতে চাওয়া৷ ভালোবাসি কিনা জানিনা তবে ওর সাথে থাকতে ভালো লাগে৷ আমাদের বাসা পাশাপাশি ই বলা যায় 10 মিনিটের রাস্তা৷ সকালবেলায় মোটামুটি এক প্রকার যুদ্ধ হয়ে যায়, এই তাড়াতাড়ি উঠা নিয়ে৷ আজও ব্যতিক্রম নয়৷ রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি ধ্রুবর জন্য৷ মানুষজন এমন ভাবে তাকায় যেন মনে হয় তার ঘুমে পানি ঢেলে দাঁড়িয়ে আছি ৷

 

ধ্রুবকে আবার ফোন দিলাম৷

 

কিরে ইডিয়েট কই তুই? সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছি৷

 

এত সকালে ভার্সিটি যেয়ে করবি টা কি বলতো?

 

আসবি নাকি চলে যাবো?

 

রাগ করস কেন? ৫ মিনিট দাড়া আসতেছি৷ নিজেতো ঘুমাস না আমাকেও ঘুমাতে দেশ না৷ দাড়া আসতেছি।

 

আচ্ছা আয়৷

৫ মিনিট বলে ১৫ মিনিট লাগলো৷

কিরে এত সকালে কেন বেড়োস বলতো৷

 

হেটে হেটে যেতে সময় লাগেনা বুঝি? তাই আগেই বেড়োই৷

 

এই প্রথম দেখলাম কোনো মেয়ে এতো হাটতে চায়৷ মেয়েদের তো সাজুগুজুতেই সময় চলে যায়৷ তারপর আবার হাজার টা চিন্তা এগুলা কেমনে নষ্ট হবেনা৷ আর তুই! থাক ভাই যা আছিস ভালো৷

 

চুপ করতো একটু৷ তুই না কথা খুঁজে পাস না? তাহলে এত কথা বলতেছোছ কেন?

 

পাই না ই তো৷ যা ও একটু বলতে চাই তা ও তো তুই দেসনা৷

 

আচ্ছা বল কিন্তু সাবধান৷ মাইর খাওয়ার মতো কথা বলবি না একদম৷

 

আচ্ছা ভাই বলবো না ৷অবনী শোন, চলনা রিক্সা নেই, আবহাওয়াটা সুন্দর, ঘুমাইয়া ঘুমাইয়া যাওয়া যাবে বেশ৷

 

তুই ঘুমানোর জন্য রিক্সায় যেতে চাইতেছোস?

 

হ্যাঁ তো আর কি?

 

চুপচাপ হাঁটা দে৷ মোটা হয়ে যাইতেছোস এমনিতেই৷

 

তুই তো চিকনা, তাহলে তুই কেন হাটোস? তোর উচিত রিকশায় যাওয়া, সাথে আমাকেও নেওয়া, কারণ একা একা যদি হারায়া যাস৷

 

হোপ৷ জানিস কি হইছে আজকে?

 

দিনতো শুরুই হইলো না৷ তোর গল্প শুরু হইলো কেমনে?

 

ওফ্ফ! বলতে দিবি?

 

এতো গল্প কই পাস তুই?

 

ব্যাগে নিয়ে নিয়ে ঘুড়ি৷ বলতে দিবি নাকি উল্টা দিকে হাঁটা দিবো?

 

হা হা হা না থাক৷ বল শুনি তোর গল্প৷

তারপর গল্প চলে৷ দীর্ঘ গল্প৷ সমাপ্তিহীন গল্প আমাদের৷ আমার পছন্দের কাজগুলোর মধ্যে এটা একটা, গল্প বলা৷ শ্রোতা মনের মতো না হলে গল্প অপূর্ণ থেকে যায়৷ আর ধ্রুব আমার সেই গল্পের পরিপূর্ণতা৷ আমার গল্পের মূখ্য চরিত্র সাথে শ্রোতা ও৷

সন্ধা হয়ে গেছে। আজ বাসায় একাই যেতে হবে৷ ধ্রুবর যেতে দেরি হবে৷ আড্ডা মারায় ব্যাস্ত সে৷ বলেছিল রিকশা করে দিই৷ কিন্তু রাগ হচ্ছিল খুব৷

 

সন্ধ্যায় যদি একাই যেতে হয় তবে রিকশাটাও একাই নিতে পারি৷ থাকুক ও ওর মতো৷ কাল থেকে আর সকাল সকাল ওকে ফোন দিয়ে জ্বালাবো ও না৷ রাস্তায় দাড়িয়ে এসব ভাবতে ভাবতেই এক রিক্সা ওয়ালা জিজ্ঞাসা করল৷

 

কোথায় যাইবেন মামা?

 

যাবোনা মামা৷

 

মামা জসীম উদ্দীন রোড যাবেন?

 

ধ্রুব তুই?

 

হ মামা যামু৷ চলেন।

 

অবনী রিক্সায় উঠ৷ একা একা গেলে যদি হারায়া যাস তাই ভাবলাম দিয়ে আসি৷ বাচ্চা মানুষ আবার তুই৷

 

থাপ্পড় দিবো জোড়ে৷

 

দিস, কিন্তু আগে রিক্সায় উঠ৷ ভাড়া কিন্তু তুই দিবি। আমি যে তোকে দিয়ে আসতেছি এটাই বেশি ৷

 

নিবনো তোকে, নাম আমার রিকশা থেকে৷

 

কই দেখিতো রিকশার কোথায় তোর নাম লেখা!

ওর কথায় হাসি চলে আসলো৷ রাগ করে থাকতে পারি না ওর উপর আমি৷ মাঝে মাঝে মনে হয় ও হয়তো ভালোবাসে আমায়, নয়তো এত সব সহ্য করত না৷ একবার ভেবেছিলাম বলেই দেই,  কিন্তু ভয় হয়, ও যদি আমায় ভালো না বাসে!

 

কিরে পেচি কি ভাবছিস?

 

কই? কিছুই না৷

 

নতুন কিছু লিখিস নি ডাইরিতে?

 

কেন পরবি?

 

না ভাই এত ধৈর্য নাই তবে কেউ শোনালে শুনতে পারি, এসব পড়া টড়া হবেনা আমাকে দিয়ে৷

 

আচ্ছা তাহলে শোন।

 

"তুমি আমার কাছে কতটা পবিত্র জানো?

 

সন্ধ্যা দেখেছো? বৃষ্টি-ভেজা স্নিগ্ধতায় ভরা সন্ধ্যা!  যে সন্ধ্যার অনুভূতিটাই মনকে রাঙ্গিয়ে দেয়,

 

সেই সন্ধ্যার মতো  পবিত্র তুমি৷

 

হোক না একতরফা ভালোবাসা,

 

তবে ভালো তো বাসি৷

 

তুমি এসে হাত ধরে বলব না,

 

তবে ব্যস্ত রাস্তায় হঠাৎ করে তোমার একটু খানি হাতের স্পর্শ কখনো ভুলব না৷

 

বিশ্বাস কর ছাড়তে চাইনি!

 

তবে ধরতে ও পারিনি৷

 

কারণ তুমি তো আমার নও, কেবলই বন্ধু তুমি৷ তবে এই কেবল বন্ধু শব্দটাই আমার কাছে অনেক কিছু৷

 

হারাতে চাইনা৷

 

একযুগ পর দেখা হলেও যেন তোমায় দেখে এড়িয়ে না যাই৷ তখনো যেন ভালবাসাটা এমনই থাকে৷

 

একতরফা!

 

কখনো বলবো না ভালোবাসি, তবে ভালোবাসি ৷"

অদ্ভুত সুন্দর ভাই! এত সুন্দর কেমনে লিখিস? আচ্ছা একটা কথা বলতো, তুই কি কারোর প্রেমে ট্রেমে পরছোস?

 

আরে ধুর এমন কিছুই না৷ যা মাথায় আসে লিখি৷

আজও বলতে পারলাম না, লেখাটা তোকে নিয়েই৷ ভালোবাসি কথাটা মন থেকেই বলেছি, শুধু তুই বুঝিস নি৷

মানতে হবে, অনেক সুন্দর লিখিস তুই৷ এটা দিয়ে কাউকে প্রপোজ করলে শিওর সে তোর উপর ফিদা হয়ে যাবে৷

 

থাক আর পাম দিতে হবে না, একটু পর দেখবি বেলুন হয়ে উড়ে যাচ্ছি৷

 

না না উড়তে দিবো না৷ টাইন্না ধরে রাখমু৷ গেলেই মাইর৷

 

এত অধিকার কে দিসে তোকে?

 

কেন? তুই৷

 

ইস্ স৷ আসছে৷ নাম .. তোর বাসা সামনে৷

 

না আজকে তোকে বাসা পর্যন্ত দিয়ে আসি৷

 

কেন? হঠাৎ এতো দরদ?

 

ওই যে! যদি বেলুন হয়ে উড়ে যাস৷ হা হা হা৷

 

ফাজিল৷ চল, ভালোই হবে আরো কিছুক্ষণ গল্প করা যাবে ৷

 

অবনী জানিস? তোর এই ছোট ছোট গল্প গুলো শোনার লোভ ছাড়তে পারিনা৷ তোর মতো করে কেউ বলতে পারেনা ৷

 

কি রে? কি হলো হঠাৎ তোর? আজ হঠাৎ এতো ভালো ভালো কথা? মতলব কি?

 

আসলে অ্যাসাইনমেন্টটা বাকি, করে দিবি দোস্ত?

 

জানতাম। নয়তো আমাকে এতো ভালো বলবি তুই? ভাবা যায় এসব? ঠিক আছে, করে দেবো৷ আর ঢং করতে হবেনা ৷ যা, বাসায় যা৷

 

না দিয়েই আসি৷ তুই এত ভালো যে তোকে একা ছাড়া ঠিক হবে না৷

 

চলে আসছি তো, আর কত যাবি?

মামা রাখেন ডানে নামবো ৷

নাম এখন৷

 

অবনীর দাড়া ভাড়াটা আজকে আমি দেই৷

 

কেন?
 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ