ধর্ষণ যেন মহামারি!
নারীর জন্য এক ভয়াবহ বছর ছিল ২০১৯। নতুন বছরেও সেই ধারাবাহিকতা বজায় আছে। সম্প্রতি রাজধানীর কুর্মিটোলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে নামার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। যা নিয়ে দেশের শিক্ষাঙ্গনগুলো বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠে এই নারীবান্ধব সমাজে এবং যেখানে একটি রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধীদলীয় নেত্রী নারী সেখানে নারীদের প্রতি এই হিং¯্রতা কেন এভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে?
এ উত্তর খুঁজতে শরণাপন্ন হই বিশেষজ্ঞদের কাছে। তাদের চিন্তা এবং দৃষ্টিভঙ্গির মধ্য দিয়েই চলুন জানা যাক, ধর্ষণ বৃদ্ধির কারণ এবং তার প্রতিকার সম্পর্কে।
সিওমেকের কার্ডিওলজির বিভাগীয় প্রধান ডক্টর মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন স্যারকে প্রশ্ন করা হয়েছিল বিকৃতি নিয়ে। জানতে চেয়েছিলাম বিকৃতি আমাদের শরীরেরই একটি অংশ, যে-কেউ বিকৃত চিন্তা করতে পারে, কিন্তু কিছু মানুষই সেই বিকৃতিকে বাস্তবে রূপ দিতে পারে। কোনো বিকৃতিকে বাস্তবে রূপ দেয়ার ক্ষেত্রে হরমোনাল নাকি সামাজিক প্রভাব কোন উপাদানটা কাজ করে?
স্যারের ভাষ্য মতে, এটা আসলে সেভাবে বলা যায় না, দুটো ব্যাপারই আসলে কাজ করে। সামাজিক অবস্থা যেমন অপরাধীকে প্রলুব্ধ করে আবার হরমোনাল উপাদানও এক্ষেত্রে কাজ করতে পারে। উদাহরণ টেনে স্যার বললেন, একজন চোর তখনই চুরি করে যখন কোনো সম্পদ অরক্ষিত অবস্থায় থাকে। এই উদাহরণের মূল অর্থ হলো আমাদের আইন ব্যবস্থা অরক্ষিত, যা ধর্ষককে ধর্ষণ কাজে আরো উৎসাহিত করছে। প্রতিকারের ক্ষেত্রে সামাজিক এবং পারিবারিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বারোপ করেন তিনি। সামাজিক সম্পর্ক বৃদ্ধি এবং নিজ জায়গায় প্রত্যেকে সচেতন থাকলে এই ধরনের অপরাধ অনেকাংশেই কমে যাবে সেক্ষেত্রে প্রতিকারের প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ প্রতিরোধ তৈরি করতে পারলে প্রতিকারের প্রশ্নই আসবে না।
কথা হচ্ছিল এন্টি টেররিজম ইউনিটের পুলিশ সুপার শিরিন আক্তার জাহানের সাথে, যিনি মাঠ পর্যায়ে রাজশাহী রেঞ্জের বিভিন্ন জেলায় নারী শিশু ও মাদকসংক্রান্ত অপরাধ নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। প্রশ্ন করেছিলাম কেন ধর্ষণ বেড়ে চলছে? তাঁর মতে, ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার বড়ো একটা কারণ হচ্ছে সামাজিক অবক্ষয়, পারিবারিক সম্পর্কগুলো ঠিক আর আগের মতো নেই, যার কারণে সামাজিক অবক্ষয় বেড়ে যাচ্ছে। তাছাড়া ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ায় অনেকেই বিশেষ করে নিম্নবর্গের এবং অশিক্ষিত মানুষেরা নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে এবং এগুলো অনুকরণ করছে। দরিদ্র্যতা এবং বেকারত্ব, সামাজিক অবক্ষয়, পারিবারিক অনুশাসনের অভাব থেকে যে হতাশা তৈরি হয় সেটাও একটা পুরুষকে ধর্ষক হিসেবে তৈরি করার ক্ষেত্রে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে থাকে। ধর্ষণ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আরেকটা বড়ো ফ্যাক্টর হলো, সমাজের একশ্রেণির মানুষের অসহযোগিতা। ধর্ষণ প্রতিকার প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন, এই ব্যাপারে গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে, গণজাগরণ তৈরি করতে হবে, যেসব ঘটনা মিডিয়ার সামনে আসে শুধু সেগুলো নয়, প্রতিটা ঘটনায় যথাসম্ভব অল্প সময়ে তদন্ত করে অপরাধীকে ধরতে হবে, শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। একইসাথে মেয়েদের আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সেলফ ডিফেন্স, সেলফ প্রটেকশন শেখা স্কুল পর্যায় থেকে শুরু করা গেলে মেয়েরা আত্মবিশ্বাসী হিসেবে বেড়ে উঠবে। একা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর দায় দিয়ে ব্যাপারগুলো এড়িয়ে না গিয়ে সাধারণ জনগণকে এ বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে হবে।
ধর্ষণ বৃদ্ধির জন্য পারিবারিক শিক্ষাকেই অনেকাংশে দায়ী করলেন ইমোশনাল স্ট্রেন্থ বিল্ডিং-এর ট্রেনিংদাতা শাহরীন রহমান সুরভী। তার মতে পূর্বের তুলনায় বর্তমানে পারিবারিক শিক্ষা এবং রীতিনীতির মধ্যে পার্থক্য দেখা দিচ্ছে, অর্থাৎ সমাজ একটা পরিবর্তনের দিকে যাচ্ছে। এবং বর্তমান সময়ে পারিবারিক শিক্ষার মাধ্যমে আমরা আমাদের ছেলে সন্তানদেরকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে ব্যর্থ হচ্ছি। যেহেতু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, পারিবারিক শিক্ষার বেশিরভাগটাই আমরা পেয়ে থাকি আমাদের মায়েদের পক্ষ থেকে সেক্ষেত্রে মায়েদের স্ট্রং হওয়ার ব্যাপারে উনি জোর দিয়ে বলেন, মায়েরা যদি স্ট্রং থাকে এবং শিশু অবস্থা থেকেই ছেলেমেয়েদের মধ্যে পার্থক্য না করে বরং সমানভাবে বিবেচনা করে লালন করেন তাহলে বড়ো হয়ে এইসব পরিবার থেকে আসা ছেলে শিশুদের মধ্যে ধর্ষক হওয়ার প্রবণতা থাকে না বললেই চলে। ধর্ষণ প্রতিরোধে তিনি বিভিন্ন এডাল্ট ওয়েবসাইট একেবারেই নিষিদ্ধ করার কথা বলেন। কারণ এসব সাইট মানুষের মধ্যে যৌনাকাক্সক্ষা বৃদ্ধি করে, যার মাশুল মেয়েদেরকে গুণতে হয়।
বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং পুরুষদেরকে কাউন্সেলিং করার কথাও তিনি বলেন। তথ্য প্রযুক্তির যুগে দুনিয়াটাই হাতের মুঠোয়। সচেতনতামূলক ছোটো ছোটো ভিডিও তৈরি করে তা সাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও জোর দেন তিনি। তবে, ধর্ষণের প্রতিরোধের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করার সময় সকল মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার উপরে জোর দিয়ে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে সহজেই বোঝা যাবে কে বিকৃত এবং কে সুস্থ প্রকৃতির মানুষ এবং এতে করে ধর্ষণ প্রবণতা সম্পন্ন ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা যাবে এবং ধর্ষণের হার কমবে।
শাহরীন রহমান সুরভীর কথার সাথে অনেকটা সুর মিলিয়েই, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত শিক্ষক এবং সকল কর্মচারীদের মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার কথা বলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত নৃবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড.একেএম মাজহারুল ইসলাম। নারীর প্রগতি হওয়া সত্ত্বেও নারী নির্যাতনের মতো ঘটনা বেড়ে যাওয়ার জন্য তিনিও সামাজিক অবক্ষয়, পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনের শিথিলতা, আইনের শিথিলতাকেই দায়ী করেছেন। তার মতে বর্তমান জেনারেশনে খুব কম সংখ্যক ছেলেমেয়েই নিজেদেরকে উৎপাদনমূলক কাজের সাথে জড়িত।
বাবা, মা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কর্মজীবী হওয়াতে সন্তান বড়ো হচ্ছে আয়ার কাছে ফলে সে খুবই বিনোদনপ্রিয় হচ্ছে বা অনুৎপাদনমূলক কাজে জড়িয়ে যাচ্ছে, যা কাম্য নয়। শিক্ষক সমাজের একটা বড়ো অংশকে স্বাভাবিকের কাতারে রাখলেও শিক্ষা ব্যবস্থায় এবং কতিপয় শিক্ষকের মাঝে যে পচন ধরেছে তা তিনি অস্বীকার করেননি। নারীর ক্ষমতায়ন হওয়া সত্ত্বেও কেন নারী নির্যাতন বৃদ্ধি পাচ্ছে তা নিয়ে গবেষণা হওয়া উচিত বলেই মনে করেন এই অধ্যাপক। যেহেতু একটি শিশ্রু ব্যক্তিত্ব বিকাশে পরিবার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তাই ধর্ষণের প্রতিরোধে পারিবারিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের প্রতিই তিনি জোর দেন। বাবা, মা দুজনের কাছ থেকেই শিশু শিখছে, তাই পারিবারিক শিক্ষাকে এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। তাছাড়া গণসচেতনতা বৃদ্ধি এবং আইনের সঠিক প্রয়োগই এই অন্ধকার অবস্থাকে কিছুটা আলোকিত করতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
কয়েকজন কর্মজীবী নারী এবং শিক্ষার্থীদের কাছে প্রশ্ন করেছিলাম ‘বর্তমান সমাজে নারীদের সুরক্ষা এবং ধর্ষণের প্রতিকারের ক্ষেত্রে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করলে তা ফলপ্রসূ হবে’ বলে তারা মনে করেন। নিচে তাদের কয়েকজনের মতামত তুলে ধরা হলো :
“পদক্ষেপ বলতে চাইলে হয়তো অনেক কিছুই বলা যায়, যেগুলো কাগজেকলমে মনে হবে ফলপ্রসূ। আইন বাস্তবায়ন ছাড়া কিছুই হবে না। খুব কঠোর শাস্তি আর সেটার বাস্তবায়ন দরকার। এবং সেটা হতে হবে অল্প সময়ের মধ্যে। এক দেড় বছর পর শাস্তি দিলে সেটা সমাজে ওভারঅল কোন প্রভাব ফেলে না। আর দ্বিতীয় কাজ যেটা করতে হবে সেটা হলো মানসিকতার পরিবর্তন। যারা এরমধ্যেই বড়ো হয়ে গেছে তাদের ব্যাপারে কিছু বলার নেই। এখনো যেসব ছেলে শিশু তাদের বাবা-মায়ের অনেক দায়িত্ব। তারা যেন নিজের ছেলেকে শেখান যে মেয়েদের সম্মান করতে হবে।” হ
তাহসীন রাহনুমা তরফদার
লেকচারার, অর্থনীতি বিভাগ, ইডেন মহিলা কলেজ।
“প্রতিটা দিনই বেশ কষ্টদায়ক, যন্ত্রণার এবং দম বন্ধকর পরিস্থিতি সবখানে। আগে মনে হতো হয়তো ধর্ষকদের ধরে ধরে মৃত্যুদ- দিলেই এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। কিন্তু এখন আর সেটা মনে হচ্ছে না। পুরুষদেরকে যে-কোনো উপায়ে কাউন্সেলিং করানো উচিত। সরকারি, বেসরকারি যে-কোনো সংস্থার মাধ্যমে প্রতিটি জেলায়, প্রতি সপ্তাহে কিংবা মাসে পুরুষ এবং শিশুদের কাউন্সেলিং-এর ব্যবস্থা করা উচিত। একটা ভালো ফলাফল পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এখানে।”
রূম্পা চন্দ
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
“প্রথম ধাপে কিছু ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। এখানে রোজ নতুন নতুন ইস্যু তৈরি হচ্ছে। অনেক সময় নেয়ার কারণে মামলাগুলোও ফোকাসে থাকছে না যা কাম্য নয়। অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা এবং রায় কার্যকরের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতার অবসান ঘটাতে হবে। দ্বিতীয়ত, সঠিক সামাজিকীকরণের দিকে নজর দিতে হবে।”
মীম জাহান তন্বী
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
“জটিল ক্ষমতা সম্পর্কের জাল পুরুষের ধর্ষক হয়ে উঠার জন্য খুব অনুকূল পরিবেশ। আমাদের সামাজিক জীবনে বা শিক্ষা ব্যবস্থায় জেন্ডার স্টাডিজ-এর কোনো বালাই নেই। অনেক উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিও নারী প্রশ্নে লিঙ্গীয় রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত। তারপরও একেকটা ঘটনায় সাধারণ মানুষ ফুঁসে উঠে। তার কারণ সবকিছুর পরও হয়ত মানবিক জায়গা থেকে জনমানস একটা সিগনাল পায়। এক্ষেত্রে শ্রেণিটাও খুব ইম্পরট্যান্ট। একটা সাধারণ মেয়ের রেইপের চেয়ে ঢাবির একটা মেয়ের রেইপ মিডিয়ায় হাইলাইট পায় বেশি। তখন এটা নিয়ে চর্চা হয় বেশি। কিন্তু শুধু চর্চা হলেই বিচার নিশ্চিত হয় না। ধর্ষক যদি শ্রেণিগতভাবে দুর্বল হয় তবে প্রতিবাদ করলে এর একটা ফল মিলে। কিন্তু ধর্ষক যদি হয় শ্রেণি বা রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমতাশালী তাহলে শত প্রতিবাদেও তার বিচার হবে না। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে চট করে ম্যাজিকের মতো ধর্ষণ বন্ধ করা যাবে না। যে-কোনো সময় অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে যাওয়া এখানে খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। সেজন্য মানসিকভাবে শক্ত থাকতে হবে। নারীদের সম্মান/ইজ্জত শুধু যোনীতে থাকেÑ এ ধরনের ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ধর্ষণ ও যৌনহয়রানির বিদ্যমান আইন ও তার প্রয়োগে লিঙ্গসচেতনতা বৃদ্ধি খুব জরুরি। ধর্ষককে ধরার পাশাপাশি ধর্ষিতের শারীরিক-মানসিক-সামাজিক ও আইনগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে বড়ো কথা রাষ্ট্রকে প্রশ্ন করার মতো সাহস রাখতে হবে বুকে।”
স্নেহা ভট্টাচার্য্য স্বর্ণা
শিক্ষার্থী, এম.সি কলেজ।
“আমার মতে প্রতিকারের জন্য উদ্যোগটা নিতে হবে কয়েকটা স্তরে স্তরে। পারিবারিকভাবে,স্কুল পর্যায়ে এই বেসিক লেভেলে যদি দৃষ্টিভঙ্গির যথাযথ পরিবর্তন আনা যায় তাহলেই শুধুমাত্র ধর্ষণ প্রতিরোধ সম্ভব। ন্যায় বিচার আইনের শাসন অবশ্যই জরুরি কিন্তু এগুলো বেশি কার্যকর ভিক্টমের সার্পোটের জন্য। এগুলোর মাধ্যমে ধর্ষণ অবশ্যই কমবে কিন্তু আমরা চাই প্রতিরোধ অর্থাৎ ধর্ষণের মতো ঘটনা যেন ঘটতেই না পারে। আর এরজন্য নৈতিক শাসন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সরকারকে নিতে হবে জিরো টলারেন্স নীতি। প্রান্তিক পর্যায়ে পরিবারগুলোকে বুঝাতে হবে ধর্ষণ কি, এর ভয়বহতা। একজন ধর্ষক যে কখনোই বিনাবিচারে ছাড় পেয়ে যেতে পারে না সেই বোধটা পরিবার থেকে সৃষ্টি করতে হবে। দুঃখজনক হলেও সত্যি পরিবারই ধর্ষক সৃষ্টির পেছনে ভূমিকা রাখে,পরিবারই অনেকক্ষেত্রে ধর্ষকদের রক্ষাও করে। এখনও ধর্ষণের পর গ্রাম্যবিচারে যেখানে ধর্ষিতাকে ধর্ষককেই বিয়ে করতে বাধ্য করে সেখানে সুশাসনের পাশাপাশি পারিবারিক নৈতিকতা শিক্ষার বিষয়টিকে গুরুত্ব না দেয়ার আর অবকাশ আছে বলে মনে করি না।”
সাবিহা চৌধুরী স্বস্তি
শিক্ষার্থী, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ।
না ঘরে, না বাইরে, না রাস্তায়, না যানবাহনে, না কর্মস্থলে, না শিক্ষাস্থলে আমাদের নারীরা আজ কোথাও নিরাপদ না। যেখানে একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী সুরক্ষিত নয়, সেখানে একজন শিশুর নিরাপত্তা আসলে কতটুকু? একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী যেখানে নিজেকে রক্ষা করতে পারছেন না, সেখানে একজন শিশুর অবস্থা যে কতটা নাজুক সে ভাবনা কী তবে আমাদের আর আন্দোলিত করে না? প্রতি মুহূর্তে দেশের কোথাও না কোথাও কোনো না কোনো নারী, শিশু নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশু ধর্ষিত হচ্ছে আবার সপ্তম, অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশু হচ্ছে ধর্ষক। এর চেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি আসলে আর কী হতে পারে? ধর্ষণ একটি বিকৃত মানসিক অবস্থার ফলাফল। কিন্তু কতদিন এই বিকৃতির মাশুল আমাদের নারী এবং কোমলমতি শিশুদের দিতে হবে? বর্তমান সমাজে নারীর অগ্রগতি বৃদ্ধি পাচ্ছে একই সাথে নারী নির্যাতনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। নারীর মনোবল ভাঙার জন্য, তাকে ভীত করে রাখার জন্য এই ধর্ষণের বৃদ্ধি বিকৃত মানসিকতার আড়ালে কোনো পরিকল্পিত উপায় যে নয় তা কে বলতে পারে?
উপরের সবার আলোচনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, সামাজিক অবক্ষয়, মূল্যবোধের অবক্ষয়, পারিবারিক শিক্ষা ও নীতি নৈতিকতার অভাব, আইনের শিথিলতা, সামাজিক মেলবন্ধনের অভাব ধর্ষণ বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বড়ো প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। ধর্ষণ প্রতিরোধ করতে হলে পারিবারিক শিক্ষা ও নীতি নৈতিকতার শিক্ষা বৃদ্ধি করার বিকল্প নেই। আর প্রতিকার করতে হলে আইনের সঠিক প্রয়োগের বিকল্প নেই। তাছাড়া ধর্ষণের পর নারীকে দায়ী করার এবং তাকে একঘরে করে রাখার মানসিকতা থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। দিনশেষে ধর্ষণের জন্য কেবলমাত্র ধর্ষকই দায়ী, বিচার যদি কারো হয় তাহলে ধর্ষকেরই হওয়া উচিত, একঘরে করে যদি কাউকে রাখতে হয় তাহলে ধর্ষককেই রাখা উচিত। গণসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং একই সাথে সমাজের সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষকে সজাগ হতে হবে এবং একে অন্যের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের নারীদেরও হতে হবে আরো শক্ত মনোবলের অধিকারী। কারণ নারী শক্তিশালী হলেই দেশ শক্তিশালী হয়।