পথচারীদের তৃষ্ণা মেটাতে শারনিলার- প্রজেক্ট তৃষ্ণা
ফরিদপুরের মেয়ে শারনিলা নুজহাত কবির। পড়ছেন রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে। পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে যুক্ত আছেন সামাজিক সংগঠন ফুটস্টেপর ‘প্রজেক্ট তৃষ্ণা’র সাথে। ২০১৫ সালে ফুটস্টেপ সংগঠন শুরু করে ‘প্রজেক্ট তৃষ্ণা’ যা উন্মুক্ত স্থানগুলোতে পানি বিশুদ্ধকরণ ফিল্টার এবং পুরো সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে পথচারী এবং রিকশা চালকদের জন্য বিনামূল্যে নিরাপদ পানি সরবরাহ করছে। শুধু তাই নয়, ২০১৮ সালের আগস্ট থেকে ‘প্রজেক্ট তৃষ্ণা’ শুরু করে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্কুলসহ বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিরাপদ পানি সরবরাহের কাজ। যেন তারা ডায়রিয়া, আমাশয় ইত্যাদি পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত নাহয় এবং স্কুলে নিয়মিত উপস্থিত হতে পারে। এই প্রজেক্টের আওতায় বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীসহ প্রতিদিন গড়ে প্রায় ত্রিশ হাজার মানুষ বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানির সুবিধা নিচ্ছে। প্রজেক্টটি প্রথমে বিভিন্ন ব্যক্তির অর্থায়নে চললেও এখন ২০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবে সহায়তা করছে। যাদের মধ্যে রয়েছে সিটি ব্যাংক লিমিটেড এবং ব্যুরো বাংলাদেশ যারা সবচেয়ে বেশি সহায়তা করেছে।
কথা হয় প্রজেক্ট তৃষ্ণার প্রধান সমন্বয়ক শারনিলা নুজহাত কবিরের সাথে। তিনি বলেন, ‘পানির অপর নাম জীবন’ কথাটি আমরা ছোটবেলা থেকে জেনে এসেছি কিন্তু কথাটি বোধহয় কিঞ্চিৎ পরিবর্তন করে বলা উচিত। অর্থাৎ ‘বিশুদ্ধ পানির অপর নাম জীবন’। কারণ জীবাণুযুক্ত পানি পান মৃত্যুর কারণ পর্যন্ত হতে পারে। আর এই ব্রত নিয়েই আমরা ফুটস্টেপ সংগঠনের আওতায় ২০১৫ সালে প্রজেক্ট তৃষ্ণার কাজ শুরু করি। এই কাজকে আমরা কয়েকটা ধাপে সম্পন্ন করি। প্রথমত, আমরা বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন করি এবং আশপাশের মানুষের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হই, সেখানে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট আছে কিনা। তারপর, সেখানে বিশুদ্ধ পানির সংকট থাকলে পানির সিস্টেম স্থাপন করি। সর্বশেষ সেই পানির সিস্টেমগুলো শুধু স্থাপনই করি না শুরু থেকে পানির সিস্টেমগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ এবং বিভিন্ন মানুষের মাঝে বিশুদ্ধ পানি ব্যবহারে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজও করে যাচ্ছি। আমরা আগে পানির সিস্টেম বসাচ্ছি তারপর রাস্তার বিভিন্ন মোড়ে এবং স্কুল কলেজে গিয়ে বিশুদ্ধ পানি ব্যবহারে সচেতনতা সৃষ্টি করছি। যাতে কেউ বলতে না পারে, আপনারা সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছেন; কিন্তু বিশুদ্ধ খাবার পানি পাব কোথায় সেই ব্যবস্থা কি করেছেন?
এছাড়াও তিনি বলেন, ‘একজন মেয়েকে মাঠ পর্যায়ে কাজকে পেশা হিসেবে নির্বাচনেই যেখানে অনেক ভাবতে হয়, সেখানে সেচ্ছাসেবীর কাজ করাটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জের। তবে, আমার ক্ষেত্রে এই চ্যালেঞ্জটা মোকাবেলা করা খুব একটা কষ্টকর ছিল না। কারণ, আমার পরিবারের প্রায় সবাই পরিবেশ এবং সামাজিক কাজের সাথে কোনো না কোনোভাবে জড়িত। আমার বাবা পরিবেশবিদ বাবর কবির প্রায় ৩০ বছরেরও অধিক সময় নিরাপদ পানি এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করেছেন।
ছোটবেলায় নিজের প্রজেক্টের কাজ দেখানোর জন্য বাবা আমাকে বিভিন্ন গ্রামে নিয়ে যেতেন। যেদিন আমি যেতে পারতাম না, বাবা সেদিন বাড়ি ফিরে গল্প করতেন এবং অভিজ্ঞতা শেয়ার করতেন যেন আমি এমন কাজে উৎসাহিত হয়ে মানবীয় গুণসম্পন্ন একজন মানুষ হয়ে উঠি। তাছাড়া, আমাদের সকল সেচ্ছাসেবীই খুবই আন্তরিক, যা আমাকে পথ চলতে সবসময় উৎসাহিত করে। আমরা বিশ্বাস করি, একদিন সকল বাধা উপেক্ষা করে এই সমাজের মানুষগুলোকে বিশুদ্ধ পানির নিশ্চয়তা দিতে সক্ষম হবে আমাদের প্রজেক্ট তৃষ্ণা।’
ছবি: তানভীর আহমেদ