ন্যান্সির অ্যাওয়ার্ড চুরি: সামাজিক অধপতনের অশনিসংকেত
একজন শিল্পীর কাছে তার কাজ গুরুত্বপূর্ণ। আর কাজের সম্মাননা হিসেবে একটা অ্যাওয়ার্ড তার কাছে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর যদি তা হয়, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, তাহলে সেই সম্মাননার বিশেষত্ব একটু আলাদাই বটে। যখন শিল্পীর এত গুরুত্বপূর্ণ সম্মাননা চুরি হয়, তখন বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ তো থাকবেই।
সম্প্রতি এরকম একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে কণ্ঠশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সির বাড়িতে। অনেক জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন তিনি। ‘প্রজাপতি’ সিনেমার গানে কণ্ঠ দেওয়ায় পেয়েছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। তার এই স্বর্ণ পদক চুরি হয়েছে। কতটুকু অমানবিক একটি বিষয়, একজন শিল্পীর সম্মাননা চুরি করা।
মানবিকতা ও মানসিক মূল্যবোধের বড়ই অভাব এখন। প্রযুক্তির দিক থেকে তো আমরা উন্নত হয়েছি, তবে আমাদের মানসিকতার দিক থেকে আমরা এখনো উন্নত হতে পারিনি। ন্যূনতম শিক্ষা যাদের মধ্যে নেই, তাদের দ্বারাই সম্ভব এরকম কাজ করার। পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন অনেক আমাদের। শিক্ষা আমাদের মূল্যবোধকে উন্নত করে। বর্তমানে যদিও এই কথার মূল্য অনেকাংশেই নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাতেই আবদ্ধ না থেকে শিশুদের মূল্যবোধ শেখানো জরুরি।
সাধারণত, নিম্নবিত্ত পরিবারে মেয়েদের পড়ালেখা নেই বললেই চলে। অনেক বাবা মা দারিদ্র্যের জন্য মেয়েদের খুব অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেন। আবার অনেকেই ছোট বয়স থেকে অন্যের বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ করে। এই শিশুদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই বললেই চলে। সরকার থেকে করা নিয়ম, সবার প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু মূল্যবোধ শেখানোর ব্যাপারে কজন কথা বলে? বর্তমানে বইবিদ্যার থেকেও বেশি জরুরি মূল্যবোধ শেখার।
চুরি করা নিঃসন্দেহে একটি জঘন্য কাজ। মানছি, অনেকেই অভাবের তাড়নায় চুরি করে। অন্যান্য জিনিস চুরি করা এক ব্যাপার। কিন্তু শিল্পীর কাজের পুরস্কার হিসেবে পাওয়া সম্মাননা চুরি! অনেক অনলাইন পত্রিকা এই বিষয় নিয়ে নিউজ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে আবার এই চুরির বিষয় নিয়ে মজা করছেন, হাসির খোরাক হিসেবে নিচ্ছেন। তাদের কাছে প্রশ্ন, আপনারা অন্যায়ের ব্যাপার নিয়ে হাসাহাসি করে উসকে দিচ্ছেন না তো? একজন সাধারণ মানুষের ১০০ টাকা চুরি হলে তিনি এই বিষয়টি নিয়ে ভাবেন। সেখানে কারও কাজের সম্মাননা যদি কেউ চুরি করে, তাহলে এটি বিদ্রূপের বিষয় হয় কীভাবে?
এই বিষয়টি নিয়ে বিদ্রূপ করার মানে হচ্ছে অন্যায়কে সঙ্গ দেওয়া। একপ্রকার নিজেও অন্যায় করা। নিজের নিচ মানসিকতার পরিচয় দেওয়া। তাই, অপরাধমুক্ত সমাজ গড়তে আমাদের সবার আগে মূল্যবোধ শিখতে হবে। অন্যায়ের সঙ্গে আপস না করে অন্যায়কে অন্যায় হিসেবেই মানতে হবে। বিদ্রূপ করা যাবে না।