২২ গজের রাণী
উঠতি ক্রিকেটাররা কোন না কোন আইডলকে অনুসরণ করে থাকেন। তার মতো হওয়ার স্বপ্ন দেখেন, তাকে ঘিরেই লালিত হতে থাকে তার বড় হওয়ার স্বপ্ন। এক্ষেত্রে ইংল্যান্ড জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের সাবেক উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান সারাহ টেলর হতে পারেন যেকোন নারী খেলোয়াড়ের জন্য 'রোল মডেল'।
ইংল্যান্ডের হয়ে দশটি টেস্ট ম্যাচ, ১২৬ টি ওয়ানডে ইন্টারন্যাশনাল এবং ৯০ টি টি-২০ খেলা এ নারী ক্রিকেটারের জন্ম ১৯৮৯ সালের ২০ মে। একেবারে ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি প্রচণ্ড নেশা ছিল সারাহ টেলরের। ক্রিকেটই ছিল তার একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান। সারাহ ছোটবেলা থেকে এতোটাই ট্যালেন্টেড ক্রিকেটার ছিলেন যে একজন নারী হয়েও ব্রাইটন কলেজের ছেলেদের টিমে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি।
সারাহ টেলরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় ভারতের বিপক্ষে ২০০৬ সালে। এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি এ প্রতিভাবান ক্রিকেটারকে। একের পর এক রেকর্ড গড়েছেন আবার নিজেই সে রেকর্ড ভেঙেছেন। ২০০৮ সালে সবচেয়ে কমবয়সী নারী ক্রিকেটার হিসেবে এক হাজার ওয়ানডে ইন্টারন্যাশনাল রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি।
সারাহ ২০১৬ সালে হঠাৎ মিডিয়াতে প্রকাশ করেন, মানসিক অবসাদে ভুগছেন তিনি। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেন ক্রিকেট থেকে কিছুদিনের জন্য নির্বাসনে যাবেন, যাতে করে তিনি তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারকে আরো সুদীর্ঘ করতে পারেন। ২০১৭ সালে নারী বিশ্বকাপ দিয়ে আবার ক্রিকেটে ফিরেন এই স্টাইলিশ ব্যাটসম্যান। ক্রিকেটে ফিরেই সারাহ তার ক্যারিয়ার সেরা ১৪৭ রানের সেই মহাকাব্যিক ইনিংসটি খেলেন এবং ইংল্যান্ডকে বিশ্বকাপ জেতানোয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
২০১৯ সালের জুলাই মাসে, নারী টি-২০ বিশ্বকাপের ঠিক আগমুহূর্তে সারাহ মিডিয়াকে জানান তিনি আবারো মানসিক অবসাদে ভুগছেন এবং তিনি জাতীয় দল থেকে অবসর নিতে চান। এরপর ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকেই 'গুডবাই' বলে দেন।
অবসর গ্রহণের বেশ কিছুদিন পর ক্রিকেট কোচিং এর প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি। ২০২১ সালে আরো একটি রেকর্ডে নিজের নাম লেখান সারাহ টেলর। প্রথম নারী স্পেশালিষ্ট কোচ হিসেবে ইংলিশ পুরুষ কাউন্টি ক্রিকেট টিমের উইকেটকিপিং কোচ হন সারাহ টেলর।
ইংল্যান্ড নারী ক্রিকেট দলের হয়ে ২০০৯ এবং ২০১৭ সালে দুইটি বিশ্বকাপ জিতার কৃতিত্ব রয়েছে সারাহ টেলরের। তার অর্জনের ঝুলিতে রয়েছে ২০১২ ও ২০১৩ সালের 'আইসিসি নারী টি-২০ ক্রিকেটার অফ দ্যা ইয়ার' এবং ২০১৪ সালের 'আইসিসি নারী ওয়ানডে ক্রিকেটার অফ দ্যা ইয়ার' পুরস্কারটি। তাছাড়া ২০২০ সালে তিনি আইসিসির গেল দশকের সেরা নারী ক্রিকেটার হিসেবেও মনোনয়ন পান।
তার এতোসব সাফল্য, অর্জন তাকে দিনের পর দিন আরো জনপ্রিয় করে তুলেছে। খেলার মাঠে ব্যাট হাতে যেমন তিনি সৃষ্টি করেছেন নতুন নতুন রেকর্ড, আবার পুরুষ দলে নারী কোচ হিসেবে যোগদান করে ভেঙেছেন বহুকাল ধরে প্রচলিত প্রথা। বর্তমানে ক্রিকেট মাঠে ব্যাট হাতে তাকে দেখা না গেলেও ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে সর্বদাই থাকেন ২২ গজের এই মুকুট বিহীন রানী।