তুষার মরুর শহর কাজায় স্বাগতম
স্বচ্ছ নীল আকাশের মাঝে বিক্ষিপ্ত সাদা তুলোর মতো মেঘ। সেই নীলের ঔজ্জ্বল্যে চোখ ধাঁধিয়ে যায় না। দুধসাদা মেঘের ভেলা যেন শান্তি দেয়। আকাশের গায়ে সেঁটে থাকে রুখাশুখা পাহাড়ের গা ঘেঁষে সরু একফালি পথ দেখা যায়। তার পাশেই খরস্রোতা স্পিতি নদী বয়ে চলেছে। উইলো গাছের সারির মধ্যেও যেন অ্যাটেনশনের ভঙ্গি। এই উপত্যকার নীরবতাতেও ভীতির ডাক নেই। অদ্ভুত নিস্তব্ধতার মুখোমুখি হয়ে আপনি ভাববেন, এই হয়তো স্বর্গ। তুষার মরুর শহর কাজায় স্বাগতম।
![](https://a.kha.icu/wp-content/uploads/2022/06/3-27-1024x576.jpg)
কাজার স্পিতি উপত্যকাকেই বলা হয় ট্র্যান্স হিমালয়ান কোল্ড ডেজার্ট। এর উত্তরে তিব্বত আর পশ্চিমেই লাদাখ। কাজা শহরে এলে মানুষের ভিড় পাওয়া যাবে না। শুধু মাঝেমধ্যে ভেড়ার ক্যারাভ্যান আপনাকে থামিয়ে পাশ কাটিয়ে যাবে। হঠাৎ মিলিটারি কনভয় হুশ করে গেলে কিছুটা চমকে উঠলেও সামলে নেবেন দ্রুতই। এই পাহাড়ি উপত্যকায় ছোট ছোট কিছু জনপদের দেখা মিলবে। আকপা, মোরাং, স্পোলো, পুহ, খাব, খা।
![](https://a.kha.icu/wp-content/uploads/2022/06/4-22-1024x576.jpg)
দিল্লি থেকে রওয়ানা হয়ে কল্পা পৌঁছুতেই সবকিছু বদলে যাবে। চারদিকে উইলোর নিখুঁত সারি আর প্রচণ্ড ঠাণ্ডা। হিমেল বাতাসের শনশন আপনার মনে স্ফূর্তি জাগাবে নিশ্চিত।
যাওয়ার পথটা বিপদসংকুল। প্রথমেই আসতে হবে না কো আর সেখান থেকে ইয়াংথাং। অবশেষে মালি। পরবর্তী সময়ে পাহাড়ি ধসের আশঙ্কায় ভরা পথ। কাজায় পৌঁছুতেই আকাশের অসহ্য নীল দেখেই হয়তো একটা জীবন কাটিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে জাগবে। সেই নীলে সাদা মেঘের ফসিল। মিশকালো পিচের রাস্তার ধারেই ধূসর রঙের ন্যাড়া পাহাড়। এই রুক্ষতার মাঝেও সবুজের বিদ্রোহ। কাজা সত্যিই প্রকৃতির অদ্ভুত খেয়াল। অনেকে একে মিনি টিবেট বলেন।
![](https://a.kha.icu/wp-content/uploads/2022/06/8-3-1024x576.jpg)
পুরোপুরি ক্যানভাসে আঁকা এক জায়গা কাজা। এখানে ঘুরতে এলে হাতে অন্তত তিনদিন সময় নিয়ে আসতে হবে।
ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩৬০০ মিটার উপরে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা মরু পর্বতের দেশ কাজা। বছরে অন্তত পাঁচ মাস এখানে বরফের রাজত্ব। তবে দেখার জায়গার অভাব এখানে নেই একেবারে। টাবো, পু ও সিচলিং থেকে ৮ কিলোমিটার এগোতে পারলেই ধানকার মনাস্ট্রির দেখা মিলবে। প্রায় এক হাজার বছর আগের এক গোম্ফা এখানে। গোম্ফাটি দূর্গের কাজও করতো। একে ঘিরে আছে নানা রহস্য। আধুনিক সময়ের কমপ্লেক্সের মতোই।
![](https://a.kha.icu/wp-content/uploads/2022/06/6-8-1024x576.jpg)
এখানে দুটি গুহা আছে। লা ওড পাইলাখাং আর লোব লাসা সা খাং। ভেতরে শিল্পকলা ও চিত্রকর্মের সমাহার। তীব্র বাতাস ও মাটি ক্ষয়ের ফলে এখানে অদ্ভুত শিল্পকর্মের জন্ম।
কাজায় প্রবেশ তখনো আপনারা করেননি। অথচ এত কিছু দেখা হয়ে গেলো! কাজায় প্রবেশের আগেই স্পিতি নদী আপনার সঙ্গ নেবে। এখানে এলেই কিছু লামাকে ক্রিকেট খেলতে দেখবেন। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা। ক্রিকেট খেলেই উষ্ণতা ছড়ায় তারা।
![](https://a.kha.icu/wp-content/uploads/2022/06/9-3-1024x576.jpg)
কাজা শহরের অলিগলি আর পুরো কলেবর যেন তিব্বতের ফ্রেম থেকেই কুদে নেওয়া। এখানে প্রায় সবই আছে। আধুনিক সরঞ্জামের মাঝেও কেমন পুরোনো ঐতিহ্যের ছোপ লেগে আছে। দিনের অসহ্য নীল বিদায় নিলেই কাজার রাত আসে নক্ষত্রকে সঙ্গী করে।
কালচে আকাশে একটু নীল অভিব্যক্তি। কেমন যেন আলোর আভাস দিতে চায়। বাইকারদের চাহিদা মাথায় রেখে ‘বাইক ফর রেন্ট’-এর ব্যবস্থাও আছে। বাইক ভালো না লাগলে গাড়িতেই চষে বেড়ান।
![](https://a.kha.icu/wp-content/uploads/2022/06/10-3-1024x576.jpg)
দিনে কাজায় ঘুরলে রাস্তার পাশে অনাদরে ফুটে ওঠা ফুলের বাহার দেখতে পারবেন। ২২ কিলোমিটার দূরে এক বৌদ্ধমন্দির দেখে আসতে পারেন। ৪১১৬ মিটার ওপরে স্পিতি নদীর বাপাশেই তিনতলা এক গুহা। এই বৌদ্ধগুহায় এখনো লামাদের দেখা মিলবে। ভেতরের থাঙ্কা ও ফ্রেস্কো চিত্রপটের জন্যেই এখানে আসা। প্রাচীন পুঁথি, পানছেন লামার জীবনী, বাদ্যযন্ত্রও দেখতে পারবেন।
স্পিতি উপত্যকাকে পাখির চোখে অবলোকন করতে হলে চলে যাবেন জিম চু। এটিই কি গুহার সবচেয়ে উঁচু স্থান। উচ্চতায় ভয় থাকলে যাবেন না।
![](https://a.kha.icu/wp-content/uploads/2022/06/5-13-1024x576.jpg)
তার ৮ কিমি উত্তরপূর্ব দিকে গেলেই শ্যামল গ্রাম কিব্বের দেখতে পারবেন। হীম ও সবুজের সংমিশ্রণ এখানে। চাষবাস এখানের প্রধান আকর্ষণ। শীতের সময় আসলেই এখানকার বাসিন্দারা কাজায় চলে আসেন।
কিব্বের থেকে পাহাড় ভেঙে আরও এগিয়ে গেলে শুধু ঠাণ্ডাকেই আকর্ষণ করা। আর নির্জনতা। সেইসঙ্গে নতুন কিছু দেখা। ধূসর প্রকৃতি।
![](https://a.kha.icu/wp-content/uploads/2022/06/11-1-1024x576.jpg)
ন্যাড়া ন্যাড়া পাহাড়ের অদ্ভুত প্রকৃতি আর মাঝে কিছু পাথরের ঘর। সেখানে সামান্য বাসিন্দা। কাজাইয় ভ্রমণটি আপনার ব্যস্ত ও কোলাহলপূর্ণ জীবনের মাঝে একটুকরো স্বস্তির বাতাস বয়ে দিতে পারে।
অনন্যা/এআই