ঋতু পরিবর্তনের সময় কমলা যেভাবে রোগ প্রতিরোধ করবে
নভেম্বরের শুরু থেকেই ধীরে ধীরে আবহাওয়া শীতল হওয়া শুরু করছে। দরজায় কড়া নাড়ছে শীতকাল। ঋতু পরিবর্তনের সময় আমাদের শরীর রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতার পরীক্ষা দেয়। আর সর্দি-কাশি বা গলা ব্যথার মতো ছোটখাটো অসুস্থতাগুলো সহজেই পেয়ে বসে। কেননা এই সময়ে দিনে বেশ গরম থাকে এবং রাতে হালকা ঠান্ডা পড়ে। দিন ও রাতের আবহাওয়ার এ পরিবর্তনের কারণে মূলত অধিকাংশ মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই সুস্থ থাকতে শীতের আগে থেকে স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। পুষ্টিকর ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী খাবারের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
ঠান্ডা, সর্দি, জ্বর—এসব সাধারণ অসুস্থতা থেকে সুরক্ষা পেতে প্রাকৃতিক উপায়ই হতে পারে সবচেয়ে কার্যকর। এই সময় শরীরের প্রয়োজন বাড়তি পুষ্টি। আর এই পুষ্টির ঘাটতি পূরণে প্রকৃতির অনবদ্য আশীর্বাদ হতে পারে কমলা। শুধু স্বাদেই নয়, পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ফলটি শরীরের নানা উপকারে আসে।
কমলায় একাধিক পুষ্টি উপাদান যেমন- পটাশিয়াম, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফাইটোকেমিকাল ও ফ্লেভোনয়েড থাকে। এসব উপাদান শরীর গঠনে ভূমিকা পালন করে। ফাইটোনিট্রিয়েন্টস, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এ ফল ঠান্ডা-সর্দি-কাশি নিরাময়ে কাজ করে। পাশাপাশি জ্বর কমাতে এবং মুখের রুচি বাড়াতেও কাজ করে। ঋতু পরিবর্তনের সময় শরীরের প্রতিরোধক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়। এই সময় কমলার ভিটামিন সি দেহের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলে। এটি শ্বেতরক্তকণিকার কার্যকারিতা বাড়ায়, যা শরীরকে বিভিন্ন ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
শীত ও শুষ্ক আবহাওয়ায় আমাদের ত্বক শুষ্ক ও প্রাণহীন হয়ে পড়ে। কমলাতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বাড়িয়ে ত্বককে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত কমলা খেলে ত্বকে সহজে বলিরেখা পড়ে না এবং ত্বক থাকে মসৃণ ও উজ্জ্বল।
কমলাতে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে, যা শরীরের হাইড্রেশন বজায় রাখতে সাহায্য করে। শীতকালে অনেকেই পানি কম খান, যা শরীরকে ডিহাইড্রেট করে তোলে। তাই কমলা খেলে এই সমস্যা এড়ানো যায়। কমলায় থাকা ফাইবার হজমপ্রক্রিয়াকে উন্নত করে। ঋতু পরিবর্তনের সময় হজমের সমস্যা, যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য বা পেট ফাঁপার সমস্যা দেখা দেয়। নিয়মিত কমলা খেলে এই সমস্যাগুলো অনেকটাই কমে যায়।
ঋতু পরিবর্তনের সময়ে অনেকের মন খারাপ হয় বা ক্লান্ত লাগে। কমলার মনোমুগ্ধকর সুবাস এবং প্রাকৃতিক চিনি তাৎক্ষণিক এনার্জি যোগায়। এতে থাকা ভিটামিন ও খনিজ আমাদের মস্তিষ্ককে সচল রাখে, যা মুড ভালো করতে সাহায্য করে।
কমলাতে রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েডস নামক এক বিশেষ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা আমাদের শরীরকে ফ্রি র্যাডিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে। এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরের কোষগুলোকে সুরক্ষিত রাখে এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমায়। কমলায় থাকা প্রাকৃতিক শর্করা এবং কার্বোহাইড্রেট শরীরে শক্তি জোগায়। তাই ঋতু পরিবর্তনের সময় ক্লান্তি এড়াতে সকালের নাস্তায় বা স্ন্যাক্স হিসেবে কমলা খাওয়া অনেক ভালো।
ঋতু পরিবর্তনের সময় নিজের শরীরের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। আর সেই যত্ন নিতে প্রাকৃতিক, পুষ্টিকর এবং সহজলভ্য খাবার হলো কমলা। এটি শুধু শরীরকে রোগমুক্ত রাখতে সাহায্য করে না, বরং আমাদের মন, ত্বক ও সার্বিক স্বাস্থ্যের ওপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় একটি করে কমলা যোগ করলেই আপনি পেতে পারেন সুস্থ, সতেজ এবং প্রাণবন্ত এক জীবন।