কোরবানী ঈদে হেঁশেলের খোঁজখবর
বছরে দুইটি ঈদ দুই রকমের আনন্দ নিয়ে আসে। দুইটি ঈদের কাজের ধরন গুলো একটু ভিন্ন। রোজার ঈদের পরপরই চলে আসে কোরবানির ঈদ। হাতে খুব বেশি যে সময় আছে তা কিন্তু নয়। ঈদ এলেই হেঁশেলের তোড়জোড় বেড়ে যায়। যদি হয় কোরবানির ঈদ হলে তো কোনো কথাই নেই। দেখা যাবে ঈদের পুরো দিনটা কেটে যাবে হেঁশেলে।
তাই এখনই হেঁশেলে গুছিয়ে এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখতে হবে। যেন কোরবানির মাংস কাটাকুটি বা বণ্টনে বাড়তি ঝামেলা পোহাতে না হয়। আর খুব সহজেই হেঁশেলে ঘরের সকল কাজ সুন্দরভাবে তৈরি করা যায় পাশাপাশি সময় কাটানো যায় পরিবারের সাথেও।
পশু কোরবানির পর মাংস প্রোসেসিংয়ে অনেকটা সময়ের বিষয়। সেই পুরো কাজটাই হয় এই হেঁশেলকে ঘিরে। তাই আগে থেকেই সম্পূর্ণ হেঁশেল ঘরকে পরিষ্কার করে গুছিয়ে রাখতে হবে যাতে কাজের সময় কোন ব্যাঘাত না ঘটে। হেঁশেলকে ঈদের জন্য আগাম প্রস্তুতি ও গুছিয়ে নিতে কিছু কৌশল অবলম্বন প্রয়োজন –
প্রথমেই দা-ছুরি-বটি শাণ দেওয়া
কোরবানির ঈদে অন্যতম প্রয়োজনীয় জিনিস হলো দা, ছুরি বা বটি। এগুলো আগে থেকেই শাণ বা ধার দিয়ে রাখুন। ঈদের আগে আশেপাশে নিকটস্থ কোন জায়গা থেকে এই ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে মাংস কাটতে হয়রানি হবে।
ফ্রিজ পরিষ্কার
কোরবানি ঈদের সঙ্গে ফ্রিজের প্রয়োজনীয়তা বা ফ্রিজের সম্পর্ক কত ভাবে জড়িত তাই ফ্রিজ অবশ্যই সম্পূর্ণ খালি রাখতে হবে এবং পরিছন্ন রাখতে হবে। কারণ মাংস সংরক্ষণের জন্য ফ্রিজের বিকল্প শুধুই ফ্রিজ। তাই আগে ভাগে ফ্রিজটি ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে রাখুন। এছাড়া ঈদকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের অফার থাকে রেফ্রিজারেটর বা ডিপ ফ্রিজে। প্রয়োজন হলে কিনে নেওয়াই যায়।
মশলার আয়োজন
কোরবানি ঈদে সাধারণত মসলার প্রয়োজনীয়তা একটু বেশি। তাই ঈদের দিন এত কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে মশলা নিয়ে আলাদা করে কাজ করাটা একটু বিরম্বনার। তাই আগের দিন মসলার বাটা বাটি কিংবা গুঁড়া করার ব্যবস্থা করে রাখুন। ঈদের আগেই আদা বাটা, রসুন বাটা, পেয়াজ বাটা ও গরম মশলা গুড়া করে রাখুন। এসব বাটা মসলা ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন। গোলমরিচ, জায়ফল, শাহি জিরা, জয়ত্রী, পোস্তদানা, লবঙ্গ, তেজপাতা, তেল, টক দই এবং রান্নার প্রয়োজনীয় উপকরণ কিনে রাখুন। গুঁড়া মশলাগুলো আলাদা আলাদা কৌটায় নাম লিখে গুছিয়ে রাখুন। তাহলে রান্নার সময় সহজেই খুঁজে পাওয়া যাবে। গরম মসলা আর জিরা বেশি আলোতে না রাখা ভালো। এতে গন্ধ বা নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া চাইলে মাংসের সব মশলা হালকা ভেজে ভালো করে গুড়া করে রাখতে পারেন। বেঁচে যাবে অনেকটা সময়।
মাংস রাখার ব্যাগ
কোরবানি ঈদ মানেই মাংস বিতরণ নানান জায়গায়। মূলত কোরবানির সম্পূর্ণ হয় মাংস বিতরণের মাধ্যমে। নিজেদের জন্য সংরক্ষণ, আত্মীয়ের ভাগ বা গরীবের হক দিতে হয়। তার জন্য বাড়তি ব্যাগ লাগবে। এগুলো আগে থেকেই জোগাড় করে বা কিনে রাখুন। তাছাড়া ডিপ ফ্রিজে ফুডগ্রেড পলিব্যাগ বা জিপব্যাগ কিনে রাখুন।
পরিষ্কার করে রাখুন বড় পাতিল
কোরবানির সময় মাংস রান্নার জন্য প্রয়োজন হয় বড় পাতিল। এগুলো সারাবছরে তেমন প্রয়োজন পড়ে না বলে ময়লা হয়ে থাকতে পারে। তাই ঈদের আগেই পরিষ্কার করে গুছিয়ে রাখুন হাতের কাছে। এতে ঈদের দিনের কাজ কমে যাবে আপনার।
বাসন-কোসন
স্বাভাবিকভাবেই অনেক ধরনের বাসনপত্র প্রয়োজন হবে। কারণ এই দিনে মানুষেরই নানান পদ রান্না করা হয় বাড়িতে। মেহমান আসে তাদেরকে খাবার দিতে হয় তাই আগে থেকেই বাসনপত্র নামিয়ে ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে রেখে দিন। যাতে প্রয়োজনে বারবার ধুতে না হয় বা খুঁজতে না হয়।
রান্নাঘরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এখনই
কোরবানির ঈদে রান্নাঘরে যেহেতু মাংস চর্বির ছড়াছড়ি থাকবে, তাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সচেতন থাকা প্রয়োজন। স্বাভাবিকভাবেই রক্ত মাংসের গন্ধ ও দাগে ভরে যাবে। এসব নোংরা যেন তাড়াতাড়ি পরিষ্কার করে ফেলা যায় তার সব আয়োজন করে রাখতে পারেন। ভিনেগার, ক্লিনার, ডেটল, গুঁড়া সাবান, স্যাভলন অথবা ব্লিচিং পাউডার হাতের কাছে রাখুন। ঢাকনাওয়ালা ডাস্টবিনের বাবস্থা করে রাখতে পারেন। তাহলে গন্ধ কিছুটা হলে কমানো সম্ভব।
ঈদের দিনটি আনন্দময় করার জন্য আগে থেকে সকল প্রকার প্রস্তুতি নিয়ে রাখুন। আর সবার প্রথমে অবশ্যই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে যে কোন কাজ করতে শান্তি লাগে।