মালয়েশিয়ায় নারী উদ্যোক্তাদের মেলা, উন্মুক্ত হোক বিশ্ববাজার
সম্প্রতি নানা প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে নারীদের এগিয়ে চলা লক্ষ করা যাচ্ছে। নারীরা প্রাচীনকালের মতো ঘরে বন্দি থেকে নিজেদের মেধা এবং প্রতিভাকে ধ্বংস করছে না। দুর্মূল্যের বাজারে সংসারের ঘাটতি পূরণ করতে এখন নারীরাও তৎপর। যে-যার জায়গা থেকে যতটা সম্ভব সংসারিক স্বচ্ছলতা ধরে রাখতে কাজে অংশগ্রহণ করছে। কেউ ঘরের বাইরে গিয়ে কাজ করছেন। কেউবা ঘরে থাকলেও উপার্জনটা অব্যাহত রাখছেন। নারীদের এই অংশগ্রহণ নিঃসন্দেহে প্রশংসার।
করোনাকালে দেশের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেকেই চাকরি হারিয়ে গ্রামে ফিরতে বাধ্য হন। তবে করোনার সময়টা একটা সম্ভবনার দুয়ার খুলেছে অনেকের জন্য। কারণ করোনার সময় থেকেই দেশে অনলাইন ব্যবসার প্রতি ঝুঁকে পড়ে নারী-পুরুষ। যেহেতু লকডাউন এবং দূরত্ব বজায় রেখে চলার ওপর বিধিনিষেধ ছিল ফলে ঘরে থেকে সময়টাকে কিভাবে কাজে লাগানো যায় সবাই সেই প্রচেষ্টায় করেছেন।
তবে এ সময়টাতে বহির্বিশ্বের প্রতিটি দেশই ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা জানি যে, সে সময় অনেকে প্রবাসে চাকরি হারিয়ে ঘরে ফিরতে বাধ্য হন। কিন্তু সেই দুঃখের অমানিশা কাটিয়ে সবাই এখন একটু স্থির হওয়ার চেষ্টা করছেন। যদিও যুগটা যান্ত্রিক, অস্থিতিশীল ও অবক্ষয়ের যুগ। তবু মানুষ নিজের জায়গা থেকে উত্তরণের সর্বোচ্চ চেষ্টাটা চালিয়ে যাচ্ছে। পুরুষের পাশাপাশি নারীর অংশগ্রহণ বাড়ার ফলে দেশের অর্থনীতি অনেকটা স্বাভাবিক পর্যায়ে দাঁড়িয়ে আছে। এত বড় একটা মহামারীর ধাক্কা কাটিয়ে উঠে আবার নতুনভাবে শুরু করার অদম্য সাহসই দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে সহয়তা করেছে।
করোনার সময় থেকে দেশে এবং বিদেশের মাটিতে নারীদের উদ্যেক্তা হয়ে ওঠার মনোভাবটা বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। কথায় আছে, সবকিছুরই ভালো এবং খারাপ দিক আছে। মানুষকেই তা খুঁজে বের করতে হবে। শূন্য থেকে শুরু করার যে বাসনা সেটাও করোনা মহামারীই শিখিয়ে গেছে। সে যাইহোক একটা বড় ধাক্কা সামলে পুরো বিশ্ব এখন নিজেদের অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার ব্যাপারে সচেতন। বিশেষ করে নারীরা লক্ষ করেছেন, তার অংশগ্রহণ কতটা জরুরি। ফলে দেশের নারীরা যেমন তেমনই প্রবাসী নারীরাও তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। যার মাধ্যমে শুধু নিজের আর্থিক উন্নয়নই নয় বরং বহির্বিশ্বের কাছে দেশের সুনাম রক্ষিত হয় সে ব্যাপারেও উদ্যোগ গ্রহণ করছেন। বর্তমান অস্থিতিশীল এবং সংকটকালীন নারীদের এই উদ্যোগ বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের নামকে আরও সুপরিচিত করবে।
আমরা জানি, দেশীয় পণ্যের কদর না বাড়লে দেশের অর্থনৈতিক খাতকে সচল রাখা সহজ নয়। ফলে দেশকে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষে পৌঁছে দিতে হলে দেশীয় পণ্যের বাজার বৃদ্ধি করতে হবে। তবে সে কাজ শুধু সরকারের একার দায় নয়। সাধারণ নাগরিকদেরও দায়িত্ব যে-যার জায়গা থেকে দেশীয় পণ্যের বাজার সৃষ্টি করা। বহির্বিশ্বে যাতে দেশীয় পণ্যকে সুপরিচিত করানো যায় সে উদ্যোগ গ্রহণ করা। তবে এবার সে ব্যাপারে বিশেষভাবে সচেতন হয়েছেন বাংলাদেশী প্রবাসী নারীরা। প্রবাসী এই নারী উদ্যোক্তাদের আয়োজনে মালয়েশিয়ায় মেলার আয়োজন করা হবে।
নারী উদ্যোক্তাদের সংগঠন উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ট্রাস্ট (উই) বৃহস্পতিবার কুয়ালালামপুরে বুকিত বিংতানের ভিআইপি পিঠাঘরে এক সংবাদ সম্মেলনে মেলার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। জি টাওয়ারের বলরুমে সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত চলা এ মেলায় অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশি প্রবাসী নারী উদ্যোক্তারা।
আয়োজকরা জানান, আকর্ষণীয় মূল্যে বিদেশে বসে দেশীয় পণ্য কেনার সুযোগ মিলবে এবারের মেলায়। বিভিন্ন স্টলে থাকছে খেজুর-কাঁঠাল থেকে শুরু করে সব ধরনের আচার, নিজস্ব ডিজাইনের ব্লক কুর্তি, টাঙ্গালের শাড়ি, জামদানি, নকশিকাঁথা, মাটির তৈরি জিনিসপত্র, দেশীয় তৈরি কাপড়, দেশীয় অলংকার ও হস্তশিল্পের জিনিসপত্র।
সংগঠনের মালয়েশিয়ার প্রধান পাপিয়া আক্তার বলেন, ‘উই হাটবাজার’ মেলার এ ধরনের উদ্যোগ প্রবাসী নারীদের আরও উদ্বুদ্ধ করবে। দেশীয় পণ্য উৎপাদন ও প্রসারে ভূমিকা রাখবে।
ছোট ছোট পরিসরে এমন মেলা স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সম্ভাবনার খাত তৈরি করবে। নারীদের স্বাবলম্বী করে তোলা, কর্মসংস্থান তৈরি, দেশীয় পণ্যের প্রসার এবং প্রবাসী নারীদের উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যেই উই হাটবাজার মেলার আয়োজন। উই হাটবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব কর্তৃপক্ষ এবং আয়োজকদের সাধুবাদ জানায়। তাদের এই যাত্রা অব্যাহত থাক।
প্রবাস জীবনে নারীদের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা এবং দেশীয় পণ্যের প্রচার-প্রসার বৃদ্ধি নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। নারীদের এই অগ্রযাত্রা সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে আশা করা যায়। নারীরা তাদের স্বাবলম্বী করে তুলুক একইসঙ্গে দেশের সুনাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হোক। জেগে উঠুক নারী। সব প্রতিবন্ধকতাকে পেরিয়ে আপন লক্ষ্যে পৌঁছে যাক নারী।