অন্তঃসত্ত্বাকে গলা কেটে হত্যা: নৃশংসতা আর কত!
আমাদের সমাজে নারীর প্রতি হিংস্রতা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে! সব আক্রোশের শেষ গিয়ে থামে নারীর প্রতি। পরিবার, সমাজের যেকোনো সমস্যা-সংকটে দোষী সাব্যস্ত করা হয় নারীকে। তাই পরিবার এবং সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পর্যবেক্ষণ করে মনেই হয়, পৃথিবীর যত সমস্যা নারীরাই সৃষ্টি করে। কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নারীর প্রতি এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা হয়েছে। যেন সব সমস্যা চাপিয়ে দিয়ে দায়মুক্ত থাকতে পারে পুরুষতন্ত্র! শুধু দায় চাপিয়েই ক্ষান্ত থাকে না পুরুষতন্ত্র এমনকি নারীর প্রতি হিংস্রতার বহিঃপ্রকাশ ঘটায় সর্বোচ্চভাবে।
পারিবারিক-সাংসারিক-সামাজিক নানাবিধ জটিলতাকে কেন্দ্র করেও নারীর প্রতি হিংস্রতা গড়ে উঠেছে। এক কথায় নারী হলো সবকিছু উগ্রে দেওয়ার একটা চূড়ান্ত জায়গা। যেখানে হিংস্রতা পৌঁছালেও সমাজ, রাষ্ট্র মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকে!
এ ধরনের হিংস্রতার চূড়ান্ত শিকার অন্তঃসত্ত্বা নারী। ভোলায় রাতের আঁধারে তিন সন্তান নিয়ে ঘুমিয়ে থাকা বিবি কুলসুম (৪০) নামের চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক নারীকে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত কুলসুম সদর উপজেলার ইলিশা ইউনিয়নের ৩নম্বর ওয়ার্ডের সাজিকান্দি গ্রামের মো. তছির মাঝির স্ত্রী। আজ সোমবার (১৫ মে) সকাল ৯টার দিকে ওই এলাকার তাদের বসত ঘর থেকে এই নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তবে রবিবার (১৪ মে) দিবাগত রাতে যেকোনো সময় এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলে ধারণা করছেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রতিপক্ষের সঙ্গে জমিসংক্রান্ত মামলার ভয়ে তার স্বামী বেশ কয়েকদিন ধরে অন্যত্র পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু কুলসুম তার তিন সন্তান নিয়ে রাতে নিজের বাড়িতেই ছিলেন। এরফলে দুর্বৃত্তরা সুযোগ বুঝে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলেই জানিয়েছে নারীটির পরিবার এবং স্থানীয়রা।
যে বা যারা কুলসুমকে হত্যা করেছে তা হিংস্রতার চূড়ান্ত রূপ। নারীর প্রতি এ ধরনের হিংস্রতা আজ নতুন নয়। পরিবারিক যেকোনো সমস্যার বলি হন নারী। কিন্তু এই ধরনের মানসিকতা কিভাবে সমাজে গড়ে উঠছে? প্রতিনিয়ত নারীকে শিকারে পরিণত করা হচ্ছে। ঘটনাগুলো প্রমাণ করে নারীর প্রতি পরিবার, পরিজন, সমাজের যেনো কোন দায় নেই! যেখানে নারীর তেমন লেনদেন নেই তার আক্রোশও নারীর প্রতি! জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরেও নারীকে প্রাণ হারাতে হচ্ছে। এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। কিন্তু সুষ্ঠু এবং দৃষ্টান্তমূলক বিচারের অভাবে আক্রোশ আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ঘটনাটি যতটা সাদাচোখে দেখা যাচ্ছে ঠিক ততটা সহজ নয় বলেই মনে হয়! সুষ্ঠু তদন্ত করে অপরাধীকে বিচারের আওয়াত আনতে হবে যত দ্রুত সম্ভব। এভাবে নারীরা আর কত হিংস্রতার শিকার হবে! মানসিকভাবে এ সমাজ কত নিচে নামবে! নারীর প্রতি আক্রোশ কমাতে পারিবারিক, সমাজিক শিক্ষা জরুরি। নতুবা এ ধরনের হিংস্রতা দমন করা সম্ভব নয়। নারীর প্রতি পুরুষতন্ত্রের আরোপিত সমস্যা – সংকট- হিংস্রতা রুখে দিতে হলে পরিবার- সমাজ- আইনী কর্যকরী পদক্ষেপ জরুরি।
কুলসুমের মতো আর কোনো নারী এ ধরনের হিংস্রতার শিকার না হোক। জমিসংক্রান্ত সমস্যা – সংকটকে ঘিরে সমাজে বেশ অস্থিতিশীলতা লক্ষ করা যায়। কেউ কেউ এই ঘটনাকে বিনাশ করতে এবং প্রতিপক্ষকে জেলের ঘানি টানাতেও নৃশংসতম পরিকল্পনায় অংশ নেয়। যার শিকার হয় নারী। ঘটনা যেটায় হোক না কেনো এ ধরনের বিরোধকে কেন্দ্র করে নারীকে হত্যা, গুম, ধর্ষণ অহরহ ঘটছে।
সমাজে এগুলোর যেন এক ধরনের ট্রেন্ড চলছে। সবকিছু নারীর ওপর চাপিয়ে, নারীকে হত্যা করায় একশ্রেণির কাছে সমস্যার সমাধানে রূপ নিয়েছে। এসবের নিষ্কৃতি হওয়া চায়। পরিবারে, সমাজে নারীর সঙ্গে যেনো এ ধরনের আর কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে সেলক্ষে সবার সচেতনতা জরুরি। বিশেষ করে আইনের কঠোর এবং দৃষ্টান্তমূলক প্রয়োগ হলে মানুষের মনে ভয় সৃষ্টি হবে। যা এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকে মানুষকে বিরত রাখবে। নতুবা এ সমাজে নারীর বেঁচে থাকা দায়।