নারী-পুরুষের সমানাধিকারে এফবিসিসিআই: সফল হোক এই উদ্যোগ
নারী তার যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে গেলেও সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা আজও হয়নি। বরং নারী সহকর্মীর প্রতি অফিসের বস থেকে শুরু করে সহকর্মীবৃন্দের নানাবিধ ছলচাতুরী পরিলক্ষিত হয়। নারী সহকর্মীর প্রতি সহোযোগিতার হাত যতটা না প্রসারিত হয় তারচেয়ে দ্বিগুণ পরিমাণে নেতিবাচক, লালসা পূর্ণ দৃষ্টি, কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য উঠে আসে বেশি। তাই নারীরা কার্মক্ষেত্রে স্বাভাবিক পরিবেশ পান না বেশিরভাগক্ষেত্রে। এতে কাজের যেমন ক্ষতি হয় তেমনই বৈষম্য- নিরাপত্তাহীনতা চোখে পড়ে। নারীরাও গুটিয়ে নেন নিজের কাজের জগৎ। প্রাণোচ্ছল কাজে তাই স্বাভাবিকভাবেই অংশগ্রহণ করতে পারেন না অনেকেই।
অধিকাংশ নারী কর্মক্ষেত্রে যেমন নিরাপত্তাজনিত কারণে ভোগেন ঠিক তেমনই কাজের ক্ষেত্রে তাকে শুধু নারী হওয়ার কারণে বৈষম্যের শিকার হতে হয়। বিশেষ করে বেসরকারি সেক্টরগুলোতে এ ধরনের বহুবিধ সমস্যা উঠে আসে গণমাধ্যমে। নারী হওয়ার কারণে বিশ্বের অনেক দেশেই নারী- পুরুষের বেতন বৈষম্য রয়েছে। যুক্তরাজ্যের মতো আদি সভ্য দেশেও নারীর প্রতি এমন বৈষম্যের কথা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। আর আমাদের দেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে নারী শ্রমের ক্ষেত্রে সস্তা বা গঁদবাধা কিছু নিয়ম আরোপিত হয়। যাতে বৈষম্য গড়ে ওঠে।
বিশেষ করে বেসরকারি বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনে এমনটা দেখা যায়। বহুজাতিক কোম্পানি, গার্মেন্টস, শ্রমিক হিসেবে নিযুক্ত নারীরা পুরুষের তুলনায় কম বেতন পান। পুরুষ শ্রমিক যে কাজে ৩০০ টাকা পান সেখানে নারীকর্মী পান ২০০-২২০ সর্বোচ্চ। কিন্তু শ্রম একই। এই বৈষম্য যেমন রয়েছে তেমনই নারীকে দিয়ে অধিক কাজের রেকর্ড রয়েছে এসব সেক্টরে। ফলে কাজের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সম অধিকার আজও নিশ্চিত করা যায়নি। নিরপত্তাহীনতা, কাজের ক্ষেত্রে বৈষম্য সবই পরিলক্ষিত হয় নারীর কর্মক্ষেত্রে।
নারীর নিরাপত্তা জনিত বহুবিধ সমস্যা তো আছেই। অফিসের বসের মনোপুত না হলে হুমকি-ধমকি চলে। বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়। মোদ্দাকথা সেখানে নারীর প্রতি রেড এলার্ম আসে। যদিও বা দেখা যায় অনেকক্ষেত্রে নারীর দিক থেকে কোন ঘাটতি থাকে না। এখানে বৈষম্য বা নেতিবাচকতার জন্ম নেয়। যার নেপথ্যে থাকে পুরুষের লালসাপূর্ণ দৃষ্টি। সম্প্রতি এসব কথা বিবেচনা করে নারী-পুরুষের সম অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে এগিয়ে এসেছে এফবিসিসিআই। কর্মক্ষেত্রে নারী -পুরুষের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা ও নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে সরকারের সঙ্গে কাজ করবে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। এরফলে নারীরা কিছুটা হলেও সুফল ভোগ করবে আশাকরা যায়।
দেশের নারীরা অনেক এগিয়ে গেলেও লিঙ্গ বৈষম্য, অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে এখনও অনেকটা পিছিয়ে। তবে এর জন্য রয়েছে নারীর অনিরাপদ কর্মপরিবেশ। যথোপযুক্ত সাহায্য -সহোযোগিতা। তবে এফবিসিসিআই – এর কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে এদেশের নারীরা আরও ভালোভাবে নিজেদের সাফল্যের চূড়ায় উঠতে সক্ষম হবে। নারীদের পাশে থেকে তাদের জীবনকে উন্নত করতে, অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে এবং বৈষম্যহীন কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করার উদ্যোগ গ্রহণে এফবিসিসিআই’কে সাধুবাদ জানায়। তাদের কর্ম পরিকল্পনা নির্দিষ্ট লক্ষে এগিয়ে যাক। নারীরাও এর আওতায় এসে নিজেদের লক্ষে পৌঁছে যেতে সক্ষম হোক। চলমান অর্থনৈতিক সংকট, বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তন, সম- অধিকার প্রতিষ্ঠা, বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের কথা মাথায় রেখে তাদের কাজের সম্পৃক্ততা বজায় থাক। এবং সফলভাবে দেশের নারীদের উন্নয়নের পথে হাঁটতে থাকুক এসব সরকারি-বেসরকারি অঙ্গসংগঠন। যাতে নারী তার আপন গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে।