মেয়েরাও খেলা বোঝে, স্বীকার করুন
সমাজের কিছু বিষয় থেকে নারীদের বেশ অনেকটা দূরে রাখা হয় এই বলে যে, ‘মেয়েরা এসব বুঝবে না’। এই এসবের মধ্যে রাজনীতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, খেলাধুলা অন্যতম। এসব বিষয়কে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ খুব জটিল হিসেবে ধরে। আর নারীদের এসব বিষয় থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করে। এই যেমন বর্তমানে ফুটবল বিশ্বকাপের উন্মাদনায় ভাসছে পুরো বিশ্ব। ভক্তদের নিজ নিজ পছন্দের দল ও খেলোয়াড়কে নিয়ে উন্মাদনার যেন শেষ নেই। তবে এই ভক্ত তালিকায় নারীদের সংখ্যা অতি সামান্য। এ বিষয়ে যাকেই প্রশ্ন করবেন উত্তর আসবে , ‘মেয়েরা খেলা বোঝো না, অথবা মেয়েদের খেলাধুলায় আগ্রহ কম’। আদৌ কি বিষয়টি তাই?
ছোটবেলায় বাচ্চাকে খেলনা কিনে দেওয়ার সময় থেকেই লিঙ্গবৈষম্য টেনে আনা হয়। ছেলে শিশুকে দেওয়া হয় ব্যাট – বল , গাড়ি আর অন্যদিকে মেয়ে শিশুকে দেওয়া হয় পুতুল আর থালাবাসন। ছেলেদের মাঠে খেলতে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা থাকে না, তবে মেয়েদের বেলায় কড়া নিষেধাজ্ঞা। তখন থেকেই মূলত শিশুদের মনে বীজ বপন করা হয় যে, এই খেলাধুলা বিষয়টি নারীর জন্য নয়। ছেলেরাও বুঝতে শুরু করে প্রিয় দলের জন্য উন্মাদনা শুধু তারাই প্রকাশ করতে পারবে, নারীরা নয়। এভাবেই সমাজের কিছু কিছু বিষয় থেকে নারীদের দূরে রাখা হয়েছে এই বলে যে, নারীরা এসব বুঝবে না।
নারীর পায়ে শেকল বেঁধে রেখে তাকে নিয়ে উপহাস করা হচ্ছে, সে হাঁটতে পারে না। ছোটবেলা থেকে নারীকে যে দিকে হাত বাড়াতে নিষেধ করা হয়, সেদিকে তার আগ্রহ কম জন্মাবে, এটাই স্বাভাবিক নয়। এই যেমন ছেলেরা রান্না না পারলে সমাজ তো হেয় করে বলে না, ‘ছেলেরা আবার রান্না পারে নাকি’, তবে নারীর বেলায় কেন উপহাস?
বহুকাল ধরেই নারী অধিকার আদায়ের আন্দোলন করে এসেছে ৷ সময় এগোচ্ছে, দিন পাল্টাচ্ছে। সমাজ আধুনিক থেকে আধুনিকতর হচ্ছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীর বিচরণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্রীড়াঙ্গনে দেশের নারীদের অবদান নেহাত কম নয়। বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের অর্জন অনেকটা বেশি। এই তো কিছুদিন আগে সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়ে ফিরলো বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। সানজিদা, ঋতুপর্ণারা বাংলাদেশের নারীদের কাছে নতুন অনুপ্রেরণার নাম। জাতীয় দলে অংশ নেওয়া প্রত্যেক নারী ফুটবলারের জীবনের গল্পও খুব একটা সহজ না। তাদেরও শুরুতে শুনতে হয়েছিলো, ‘মেয়েরা আবার খেলা বোঝে নাকি!’ কিন্তু সমাজের চোখে আঙুল দিয়ে তারা দেখিয়েছেন মেয়েরাও পারে।
নারীর পায়ে শেকল বেঁধে রেখে তাকে নিয়ে উপহাস করা হচ্ছে, সে হাঁটতে পারে না। ছোটবেলা থেকে নারীকে যে দিকে হাত বাড়াতে নিষেধ করা হয়, সেদিকে তার আগ্রহ কম জন্মাবে, এটাই স্বাভাবিক নয়। এই যেমন ছেলেরা রান্না না পারলে সমাজ তো হেয় করে বলে না, ‘ছেলেরা আবার রান্না পারে নাকি’, তবে নারীর বেলায় কেন উপহাস?
নারীকে কথা বলতে দিন, এগোতে দিন। কন্যা-শিশুর হাত থেকে ব্যাট বল কেড়ে না নিয়ে তার সামনে পুতুল আর ব্যাট-বল দুটোই রাখুন। তাকে স্বাধীনতা দিন তার মত করে পছন্দ করার। জন্মের পর তাকে বাক্সবন্দি করে দিয়ে বড় হতে হতে তাকে উপহাসের পাত্র বানাবেন না। বিশ্বজুড়ে প্রতিটি ক্ষেত্রে নারী সমান অবদান রাখছে, নারী খেলা বুঝে না, বিজ্ঞানের জটিল সমাধান নারীর কর্ম নয় বলে তাকে ছোট করার আগে তার অর্জনগুলো দেখুন।