শরীর বুঝে শরীর চর্চা
শরীর সুস্থ থাকলে মন ভালো থাকে। আর মন ভালো থাকলে যেকোনো কাজেই মনোযোগ বসে। ভালো থাকার জন্য আমরা প্রায় সময়ই শরীরচর্চা করে থাকি। অনেক সময় ডায়েট ও শরীরচর্চা উভয়ই করে থাকি। শরীরের জন্য শরীরচর্চা করা ভালো কিন্তু সেটা অতিরিক্ত করা ঠিক না। আবার অনেক সময় দেখা যায় শরীরে সহ্য হয় না তারপরও শরীর চর্চা করা হয়, যা শরীরের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকারক। তাই শরীরচর্চা সবসময় শরীর বুঝে করতে হবে।
শরীরচর্চা তো সকাল-বিকেল, রাত কিংবা অফিসে বসেও করা যায়। কিন্তু সেটি আমাদের শরীর কতখানি নিতে পারে বা পারবে সেদিকে নজর দিতে হয়। শরীর সক্ষমতার ওপর নির্ভর করেই শরীরচর্চা করা উচিত। আর যারা যখন সময় পান সেই সময় অনুযায়ী শরীরচর্চা করতে পারেন। যেমন অনেকে সকালে উঠে শরীরচর্চা করতে পছন্দ করেন।
সেক্ষেত্রে তারা সকালে যে যে শরীরচর্চা করতে পারেন সেগুলো হলো:
ভোরে ঘুম থেকে উঠে আধঘণ্টার মতো শরীরচর্চা করা খুবই ভালো। এতে সারাদিন অনেক ভালো কাটে। নিয়মিত শরীর চর্চার ফলে এন্ডরফিরন নামক এক হরমোনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। এতে মন ভালো থাকে। তাই শরীরচর্চার পর খারাপ লাগে না। কাজ করার ইচ্ছা-আগ্রহ বেড়ে যায়। এমনকি সামাজিক মেলামেশা বা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডাতেও বিরক্তিকর ভাব আসে না। এছাড়া সকালের দিকে ব্যয়াম করার আরও সুফল রয়েছে। এতে করে খুদা বৃদ্ধি পায় ও হজম ভালো হয়। খাওয়ার ইচ্ছা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পৌঁছাবে। ফলে স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে।
বিকেল কিংবা সন্ধ্যায় যে শরীরচর্চা খারাপ হবে তা কিন্তু না। এই সময়ে যারা ফ্রি থাকেন, তারা এই সময়েই শরীরচর্চা করতে পারেন। কারণ সকালে শরীর চর্চা যেমন উপকারী তেমনই কর্মব্যস্ত মানুষের জন্য সন্ধ্যার শরীরচর্চাও ভালো। এতে করে রাতে ভালো ঘুম হয়। যা কিনা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। যারা অনাকাঙ্ক্ষিত ওজন কমাতে চান তাদের জন্য সন্ধ্যার শরীর চর্চার বিকল্প কিছু নেই। কেননা, সারাদিন পরিশ্রমের পর আবার রাতে ঘুমানোর আগে একটু শরীর চর্চা হলে খারাপ হয় না। অর্থাৎ যারা সকালে শরীর চর্চা করার জন্য সময় বের করতে পারেন না তাদের জন্য সন্ধ্যা হতে পারে সঠিক সময়। নিয়মিত শরীর চর্চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এজন্য সেটা দিনে হোক কিংবা রাতে হোক।
সকাল-সন্ধ্যা ছাড়া যারা কর্মজীবী মানুষ তারা অফিসে বসেও শরীর চর্চা করতে পারেন। টানা অফিস ডেস্কে বসে কাজ করার ফলে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় যেমন, ঘাড়, কোমর, হাত সহ নানা জায়গাতে ব্যথা হয়। আবার সারাক্ষণ বসে বসে কাজ করার ফলে শরীরের মেদ ও বেড়ে যায় যা খুবই স্বাভাবিক। আর সেই সাথে ক্লান্তি ভাব তো আছেই। এই ক্লান্তি ভাব এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা এবং অতিরিক্ত মোটা হওয়া কমাতে চাইলে অফিসে কাজের ফাঁকে ডেস্কে করতে পারেন কিছু সহজ ব্যায়াম। ডেস্কে বসে করা যাবে এমন কিছু ব্যায়ামের কথা আজ বলবো আপনাদের। এতে বেশ উপকার হবে তাদের জন্য যারা স্বাস্থ্য সচেতন।
ডেস্ক পুশ আপ ব্যায়াম
ব্যায়ামটি শুরু করবেন, প্রথমে দুই হাত ডেস্কের উপর দিবেন। তার পর একটু পিছনে নিন পা দুটো। এইবার ডেস্কের উপর ঝুঁকে সামনের দিকে পুশ করুন। এতে করে আপনার ডেস্কের উপর পুরো ভড় থাকবে। মিনিমাম ২০টা পুশ আপ দিবেন।
স্কোয়াট
স্কোয়াট দেওয়ার জন্য প্রথমেই আপনার পিছনের বসার চেয়ারটা সরিয়ে নিন। এইবার হাঁটু একটু ভাজ করে (চেয়ারে যেভাবে বসেন) সেই ভাবে সামনের দিকে বসুন। এক্ষেত্রে কোমর সোজা রেখে দুই হাত সামনের দিকে সোজা রাখবেন। এইভাবে ৩০ বার করুন। ভালো ফল পাবেন।
স্ট্রেচিং
হাত, পা, ঘাড়, কোমর ও কাঁধের স্ট্রেচিং করার জন্য পেশিকে ৩-৫ সেকেন্ড ধরে টান টান করে আবার ছেড়ে দিতে হবে। এরপরে বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে আস্তে আস্তে ছাড়তে হবে। এর পর আবার ও স্ট্রেচিং করে নিবেন।
শরীর চর্চা করার সময় মনে রাখতে হবে প্রথম থেকেই শরীরে খুব চাপ দেওয়া উচিত নয়। যেহেতু নতুন অভ্যাস। তাই শরীরকে নতুন নিয়মের সঙ্গে মানানোর সময় দেওয়া প্রয়োজন। নয়তো শরীর খারাপ হতে পারে। সবার জন্য ভারী ওজন নিয়ে ব্যায়াম করা উচিত নয়। ডাক্তারের পরামর্শ মেনে, শরীর বুঝে তবেই ওয়েট এক্সারসাইজ করা উচিত। আবার টানা জিম করা উচিত না। মাঝে মাঝে বিশ্রাম নিতে হবে। শরীরচর্চার সময় প্রশিক্ষকদের যাবতীয় পরামর্শ মেনে চলুন। প্রয়োজনের তুলনায় কখনও বেশি এক্সারসাইজ করা ঠিক নয়। ধীরে ধীরে প্রশিক্ষকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে। মাঝে প্রয়োজন নিখাদ বিশ্রামও। শরীর চর্চা করা ভালো কিন্তু শরীর যতটুকু নিতে পারবে ততটুকুই করা উচিত এর বেশি করা উচিত না।