Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শারদীয় দুর্গা পূজার মাহাত্ম্য

পূজা শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে সংবর্ধনা, সম্মান প্রদর্শন, শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, মহান দর্শন বা আদর্শ অনুসরণ। সনাতন ধর্মের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে শারদীয় দুর্গাপূজা। দুর্গা মায়ের আগমনী ছন্দে ছন্দায়িত হয় ভক্তের তনুমন। দুর্গা পূজা মূলত শুভ শক্তি আবাহনের পূজা। প্রবাদ আছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বার মাসে তের পার্বণ। তবে প্রতিটি পূজা বা পার্বণের নির্দিষ্ট তিথি বা সময় আছে। তেমনি দুর্গা পূজাও একটি। তবে শারদীয় দুর্গাপূজা বর্তমানে সার্বজনীন রুপ লাভ করেছে। এই সার্বজনীন দূর্গা পূজাকে ঘিরে দেশ মহাদেশ ছাড়িয়ে বিশ্বজুড়ে গড়ে উঠেছে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির এক অনন্য মেলবন্ধন। আমাদের দেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা আশ্বিন মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথি থেকে দশমী পর্যন্ত দেবী দুর্গার আরাধনা করে থাকে।

দেবী দুর্গা হলেন দূর্গতিনাশিনী অর্থাৎ সকল দূঃখ দূর্দশার বিনাশকারী। পুরাকালে দেবতারা মহিষাশুর এর অত্যাচারে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হয়েছিল। তখন ব্রহ্মা বিষ্ণু ও মহেশ্বর এর শরীর থেকে আগুনের মতো তেজোরশ্মি একত্রিত হয়ে বিশাল আলোকপুঞ্জে পরিনত হয়। ঐ আলোকপুঞ্জ থেকেই আবির্ভূত হলেন দেবী দুর্গা। দিব্য অস্ত্রে সজ্জিত দেবী দুর্গা অসুরকুলকে বধ করে স্বর্গ তথা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে শান্তি স্থাপন করেন। দেবী দুর্গা মহামায়া, মহাকালী, মহালক্ষ্মী, মহা সরস্বতী, শ্রীচন্ডী প্রভৃতি নামেও পরিচিত। সর্ব শক্তির আধার আদ্যশক্তি হলেন মা দুর্গা। মা দুর্গা নামের মধ্যেই তার পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি দূর্গমাসুর নামক এক দৈত্য কে বধ করে দুর্গা নামে খ্যাত হন। মা দুর্গা শত্রুর কাছে, পাপীর কাছে যেমন ভয়ংকর তেমনি সন্তানের কাছে তিনি স্নেহময়ী। ঈশ্বরের মাতৃরুপের নাম হচ্ছে মা দুর্গা, দেবী মহামায়া। দেবী দুর্গা ১০৮ টি বিশেষনে ভূষিত হন। ত্রেতাযুগে রামচন্দ্র অকালে ১০৮ টি নীলপদ্ম দিয়ে দেবীর পূজা করেছিলেন। বর্তমানে আমরা রামচন্দ্র অকালে দেবী দুর্গার বোধন করে যে পূজা করছিলেন সেটাই অনুসরণ করছি। রাম চন্দ্র শরৎকালে যে দুর্গা পূজা করেন সেটা কে বলা হয় অকালবোধন। নিদ্রিত সময়ে দেবতাদের জাগ্রত করাকেই বলা হয় অকালবোধন।

রাবণের লংকা থেকে প্রিয়তমা স্ত্রী সীতাকে উদ্ধারের জন্য ত্রেতাযুগে ভগবান শ্রীরাম চন্দ্র শারদীয় দুর্গাপূজা র প্রচলন করেছিলেন। আর অন্য যে দুর্গা পূজা যেটা ছিল মূল পূজা সেটা এখন বাসন্তী পূজা নামে পরিচিত । অসুরদের রাজা মহিষাসুরকে বধ করে দেবী দুর্গা হলেন মহিষাসুর মর্দিনী। তিনি আদ্যশক্তি মহামায়া। সকল পাপ ও অন্যায় কাজের আধার অসুর নিধন করে দেবী দুর্গা পৃথিবী তে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন। পাপীর বিনাশে দেবী রণসাজে সজ্জিত হয়ে বিনাশ করেন বলে দেবী রণদেবী। পশুরাজ সিংহ দেবীর বাহন। সাথে দুই পুত্র সেনাপতি কার্তিক ও সিদ্ধিদাতা গণেশ এবং দুই মেয়ে ধনের দেবী লক্ষ্মী ও বিদ্যার দেবী সরস্বতী। দেবী দুর্গার চার সন্তানের সাথে ধর্ম, অনন, কাম ও মোক্ষ জড়িত। দেবী স্বামীগৃহ কৈলাস থেকে পিত্রালয় মর্তে বেড়াতে আসেন প্রতি বছর আশ্বিন মাসের পঞ্চমী তিথিতে। দেবীর তিনটি চোখ বলে তাকে ত্রিনয়নী বলা হয়। দেবীর বাম চোখ চন্দ্র, ডান চোখ সূর্য এবং কপালের চোখ অগ্নিকে নির্দেশ করে। দেবী দুর্গার দশ হাতে দশটি অস্ত্র শক্তির প্রতীক। দেবীর বাহন সিংহ শক্তির ধারক। দেবীর ডানদিকের পাঁচ হাতের অস্ত্রগুলি হচ্ছে যথাক্রমে ত্রিশুল, খড়গ, চক্র , বাণ ও শক্তি। বাম দিকের পাঁচ হাতের অস্ত্রগুলি হচ্ছে ঢাল ,ধনুক , পাশ , অঙ্কুশ ও কুঠার। দেবীর অসীম শক্তির প্রতীক হচ্ছে এসব অস্ত্র। বিজয়ার দিনে মহিষাসুরকে বধের মাধ্যমে বিজয়ের উৎসব পালিত হয় । বিজয়া দশমী হল ঐক্যের প্রতীক , ন্যায় প্রতিষ্ঠার দিন । বিজয়ার দিনে অনেকেই পূর্ব শত্রুতা ভুলে আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয় এবং বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয়। তাই পারিবারিক, সামাজিক , রাষ্ট্রীয় এমনকি বৈশ্বিক সংহতি রক্ষায় এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠায় দুর্গা পূজার গুরুত্ব অনেক । দেবী দুর্গা মানুষের দূর্গতি নাশ করেন বলে তার নাম দূর্গতিনাশিনী ।

“রাবণস্য বিনাশায় রামসানুগ্রহায় চ অকালে বোধিতা দেবী”। অর্থাৎ রাবণকে বিনাশের জন্য রামের প্রতি অনুগ্রহ বশত অকালে দেবী দুর্গা বোধিত হয়েছিলেন। দুষ্ট শক্তি রাবণকে বধ করার জন্য রাম নিদ্রিত সময়ে দেবীর পূজা করেছিলেন অকাল বোধনের মাধ্যমে । দূর্গম নামক অসুরকে বধ করে দেবীর নাম হয়েছিল দূর্গা ।
” যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরুপেন সংস্থিতা
নমস্তৈস্যই নমস্তৈস্যই নমস্তৈস্যই নমো নমঃ।”
অর্থাৎ যে দেবী শক্তিরুপে সর্বজীবে বিরাজিতা তাকে নমস্কার ,নমস্কার , নমস্কার।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ