নারীর পোশাক নিয়ে পুরুষের আপত্তির নেপথ্যে কী
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীকে গৃহবন্দি ও দাসত্বে বাধ্য করার নানা রকম ফন্দি করে পুরুষতন্ত্র। শতভাগ বন্দি করে রাখতে না পারলে তখন নারীর কর্মে দোষ খোঁজে, পোশাকে দোষ খোঁজে। পারলে নারীর চিন্তা-কল্পনার ওপরও প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে। নারী যখন ধর্ষণের শিকার হয়, তখন তার জন্য নারীর পোশাকে দোষারোপ করা হয়, নারীর স্বাধীন চিন্তার স্বভাবকে দায়ী করা হয়। সমাজের এমন মানসিকতা পুরুষতন্ত্রের বিকৃত মানসিকতা বলে মনে করেন সমাজের পেশাজীবী নারীরা। তারা বলছেন, এই স্বভাবের পরিবর্তন ঘটাতে হবে। না হলে নারীর মুক্তি সহজেই হবে না।
কবি সারাফ নাওয়ার বলেন, ‘ইউরোপ থেকে ভারতবর্ষের রাজতন্ত্র পর্যন্ত রাজন্যবর্গের পোশাক, রূপচর্চা, সাজসজ্জার প্রচলন এই গণতান্ত্রিক যুগের নাগরিক মনেও স্মরণীয় হয়ে আছে ঐতিহাসিক কারণে। রাজা-বাদশার গহনা ছিল জহরত-হীরা-পান্না-চুনি-মণিমুক্তা খচিত। রাজপোশাকও ছিল জহরত খচিত। প্রজাদেরও ধারণা, বিশ্বাস ছিল, এমনই হবে রাজ পরিবারের রাজন্যবর্গ। প্রাচীন চীন থেকে বর্তমান চীনেও পুরুষের রূপচর্চার চলন রয়েছে। বর্তমান পপরাজ্যে বিশ্ব মাতিয়ে রাখা ৭ সদস্য বিশিষ্ট দক্ষিণ কোরিয়ান বয় ব্যান্ড BTS-এর সাত পপ তারকা নতুন করে রূপচর্চা, সাজসজ্জা (লিপস্টিক, আইসেডো, ব্লাশঅন), অর্নামেন্ট (কানে, গলায়, হাতে) ব্যবহারের মাধ্যমে সাজগোজকে লিঙ্গবৈষম্যের ঊর্ধ্বে নিয়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী তরুণ প্রজন্মের ছেলেরা এই সপ্ততারকাকে অনুসরণ করে পোশাক, প্রসাধন, অর্নামেন্ট ব্যবহারে নির্দ্বিধায় নিজের সৌন্দর্যকে বিকশিত-প্রকাশিত করছে। হ্যারি-স্টাইলসের মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অনেক তরুণ পপ তারকা মেয়েদের পোশাক পরে সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে নতুন একটি দৃষ্টিকোণের জন্ম দেয় নতুন প্রজন্মের মাঝে।’
সারাফ নাওয়ার বলেন, ‘এই হাল জমানাতেও তাহলে নারীর সাজসজ্জা, পোশাকে পুরুষের বিদ্বেষ কেন? কেন নারী আন্দোলনে পোশাক আন্দোলন বিশ্বব্যাপী চলমান একটি আন্দোলন? যৌক্তিক না হলেও মনস্তাত্ত্বিক কারণ অবশ্যই রয়েছে। নারী-স্বাধীনতাতে পুরুষের বড় ভয়। নারীর বাকস্বাধীনতাকে পুরুষ ভয় পায়। সেই সূত্র ধরে নারীকে একমাত্র নিজের ভোগ্য সম্পত্তি জ্ঞান করে নিজের হাতের মুঠোয় রাখতে, নারীকে শৃঙ্খলিত করে রাখতে বহির্বিশ্ব থেকে চিরবিচ্ছিন্ন রাখতে সার্বিকভাবে সচেষ্ট। আনুষঙ্গিক কারণ স্বরূপ নারীর রূপ-গুণে অন্য কেউ তথা আর অন্যকোনো পুরুষ আকৃষ্ট না হওয়ার বাঞ্চা পুরুষ মনস্তত্ত্বের এক অমানবিক পরম্পরা। এখানেও পুরুষ শ্রেণির বিভাজন-বিশ্লেষণ করার আছে।’ তিনি বলেন, ‘পরিবারের পুরুষ অর্থাৎ পিতা-ভ্রাতা, স্বামী বাইরের নারীকে পোশাক, সাজসজ্জায় যেভাবে দেখতে আগ্রহী (সেই পোশাক, সাজসজ্জা আবার দুর্বলের, কোমল পেশীয়, কখনো কামাতুর। সেক্ষেত্রেও পুরুষই নিন্দুক এবং দ্বিসত্তার) ঘরের নারীকে না তার নিজপছন্দ, না স্বাভাবিক স্বচ্ছন্দপ্রদ পোশাকে দেখতে চায়। চাপিয়ে দেওয়া পোশাকের বাইরে নারীর যেতে মানা। পরিবার, সমাজ নারীকে শৃঙখলিত করে রাখতে স্বত্বি বোধ করে, আশ্বস্ত বোধ করে। স্বাধীনতার মতো নারীর বুদ্ধিমত্তাকেও পুরুষের ভয়। নারীর অধিকার বোধকে পুরুষের ভয়। এমন নেতিবাচক চিন্তা, কখনো বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নারীর নিজের পছন্দে বেছে নেওয়া পোশাক, সাজসজ্জার প্রতি পুরুষ বিদ্বেষী, নির্দয়।’
এই কবি বলেন, ‘পুরুষ নির্দেশনায় হতে হবে নারীর পোশাকাশাক৷ সবকিছু। তার নিজের ইচ্ছা থাকতে নেই। নারীসৃষ্ট ব্যবস্থা থাকতে নেই। পছন্দ থাকতে নেই। স্বাধীনতা থাকতে নেই। নিজস্ব রুচি থাকতে নেই। ধর্ম এবং রাষ্ট্র দু-ই পুরুষসৃষ্ট। যে বলয়ের ভেতর নারী মানুষের সমমর্যাদা পেতে পারে না। ঝুঁকি নিতে ভয় পাওয়া নারী বলয়ের বাইরেও আসতে পারে না। পুরুষনির্ভর জীবনকে সে নিরাপদ মনে করে, অথচ এরজন্য কম মূল্য তাকে দিতে হয় না। পারিবারিক সম্পত্তিতে অধিকার এবং অর্থনৈতিক মুক্তি নারীকে মানুষের সমমর্যাদার স্থান দিতে পারে। যেমনটা মাতৃপ্রধান অঞ্চলগুলোতে দেখা যায়। নারীর যে-শ্রেণিটির হাতে অর্থ আসে সেই শ্রেণি নিজের পছন্দ অনুযায়ী পোশাক নির্বাচন করে নিতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের শ্রমজীবী নারীদের হাতে যখন অর্থ এলো পুরুষনির্ভর মধ্যবিত্ত নারীকে পেছন ফেলে শ্রমজীবী নারী শ্রেণি কর্মোপযোগী, স্বচ্ছন্দসই এবং আরামপ্রদ পোশাক বেছে নিয়েছে। অর্থনৈতিক মুক্তি ও পোশাক নির্বাচনে সম্পর্ক রয়েছে। এভাবে ধীরে-ধীরে বদলে যায় সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিও। একইভাবে অর্থনৈতিক মুক্তির সঙ্গে স্বাধীনতার সম্পর্কও অবিচ্ছেদ্য।’
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কামরুন নাহার শীলা বলেন, ‘প্রাচীনকালে নারী পুরুষের পোশাকে কোনো ভেদাভেদ ছিল না। পোশাক ছিল কেবল প্রয়োজনের বিষয়। মানুষ সূর্যের উত্তাপ আর শীতের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে গাছের বাকল, পাতা এইসব ব্যবহার করতো। সভ্যতার অগ্রগতিতে সমাজে পুরুষতন্ত্র কায়েম হয়, ফলে আগের মাতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার নারীর সেই স্বাধীনতা ব্যাহত হয়। সে ঘরে ঢুকতে বাধ্য হয়। তার গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘মাতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নারী-পুরুষ উভয়েই বহুগামী ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে পুরুষের বহুগামিতা অক্ষুণ্ণ থাকলেও নারীকে এক স্বামীতে একনিষ্ঠ রাখার জন্য স্বামীর কল্যাণার্থে তার গলায় মঙ্গলসূত্র পরিয়ে দেওয়া হলো, স্বামীর মঙ্গল কামনা করে প্রতিদিন কপালে সিঁদুর দিতে বলা হলো, যেন সে তার পূর্ববর্তী বহুগামিতা ভুলে এক স্বামীতেই সমর্পিত থাকে। তাকে এমনভাবে গৃহে অন্তরীণ থাকার শিক্ষা দেওয়া হতে লাগল যেন সে অসূর্যম্পশ্যা হয়। ইতিহাস ঘাঁটলে আমরা দেখতে পাই সনাতন ধর্মের নারী গঙ্গায় পুণ্যস্নানে যাচ্ছে পালকি করে। পালকিশুদ্ধ তাকে গঙ্গায় চুবানো হচ্ছে, যেন অন্য পুরুষ তাকে দেখতে না পায়।’
কামরুন নাহার শীলা বলেন, ‘‘ইসলাম ধর্মে নারীকে সুরক্ষিত থাকার জন্য কব্জি পর্যন্ত ঢিলেঢালা পোশাক পরার এবং চুল ঢেকে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে , নারী ওপর পুরুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সমাজে তার পোশাক নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, ‘এই নারী আমার, এর দিকে কেউ তাকাতে পারবে না, তাই তার গঙ্গাস্নান পালকিসহ হোক কিংবা সে আপাদমস্তক ঢেকে বাইরে যাক।’ কিন্তু সমাজ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গ নারীর বহির্গমন বাড়তে লাগলো। সে শিক্ষিত হতে লাগলো, আত্মনির্ভরশীল হতে লাগলো এবং নিজের পোশাক নিজে পছন্দ করার স্বাধীনতা অর্জন করতে লাগলো। আত্মনির্ভরশীলতা ও পোশাকের স্বাধীনতা নারী স্বাধীনতার অন্যতম প্রতীক। সাংসারিক প্রয়োজনে পরিবারের কর্তাটি আত্মনির্ভরশীল নারীকে কোনোমতে মেনে নিলেও তার পোশাকের স্বাধীনতাকে মানতে পারেন না, কারণ তিনি মনে করেন, এই বুঝি নারী তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলো।’’
এই শিক্ষক আরও বলেন, ‘‘নারীকে নিয়ন্ত্রণের অন্যতম হাতিয়ার তার পোশাককে নিয়ন্ত্রণ। পরিবার ও সমাজ থেকে বলা হচ্ছে, ‘নিয়ম মেনে পোশাক না পরলে তুমি সহিংসতার শিকার হবে।’ (এই সহিংসতা কিন্তু পুরুষই করবে, কোনো নারী নয়)। কখনো ধর্মের দোহাই দিয়ে কখনো শালীনতার প্রশ্ন তুলে নারীর পোশাককে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। আবার একজন নারী যখন তার ইচ্ছে অনুযায়ী (ধরা যাক, টাইট কিংবা ছোট) পোশাক পরে সেজেগুজে বের হচ্ছে, তখন তাকে দেখে পুরুষের ভালো লাগছে, সে আকর্ষিত হচ্ছে এবং তার কামনা জাগছে। কিন্তু সে জানে ‘এসব ভেবে কী লাভ, এই নারী তো তার শয্যাসঙ্গী হবে না।’ তখন সে হতাশ হচ্ছে।’’ তিনি আরও বলেন, নারীর পোশাক ও সাজগোজ তাকে উত্তেজিত করছে, কিন্তু সেই নারীকে কেন্দ্র করে তার অচরিতার্থ কামনাকে চরিতার্থ করার কোনো উপায় নেই বলে, সে নারীর পোশাকের ওপর বিরক্ত হচ্ছে। নারীর পোশাককে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। নারীর ছোট পোশাকে উত্তেজিত হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। সহিংস না হয়ে, কটূক্তি না করে সেই উত্তেজনাকে প্রশমনও কিন্তু সেই পুরুষই করতে পারে। সেই কষ্টটুকুও তারা করতে চায় না বলে নারীর পোশাক নিয়ে পুরুষের এত আপত্তি।’
সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা ইসরাত জাহান দিপা বলেন, ‘পুরুষ নারীর সাজসজ্জা নিয়ে শঙ্কিত, না কি বিব্রত। এই একুশ শতকে এসেও আমাদের সমাজ, পরিবারে পুরুষ শঙ্কিত। কারণ সে নারীর নিরাপত্তা খুঁজে পাচ্ছে না। এর জন্য নারীর সাজসজ্জাকে দায়ী করা হচ্ছে। অথচ পুরুষ নিজেই বর্বর হিংস্র পশুপুরুষদের ভয়ে আতঙ্কিত।আমরা কতটা নির্বোধ জাতি, সমাজের এই হলুদ ব্যাধির সঠিক কারণ যাচাই না করে ভুল জায়গায় ওষুধ প্রয়োগের চেষ্টা করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘কোনো সাজ-পোশাকে থাকা নারী শপিংমল, বাস, ট্রেন, বাসস্টেশন যেকোনো জনবহুল স্থানে প্রতিদিন ইভটিজিং, রেপ, গুম ও যৌন-হয়রানির শিকার হচ্ছে। আবার সাজসজ্জাহীন মস্তিষ্ক বিকৃত যে নারী রাস্তার কাছে পড়ে আছে, সেও হয়রানির শিকার হচ্ছে। সেই নারীও এই সমাজে নিরাপদ না। তাহলে পরিবর্তনটা কোথায় প্রয়োজন? নারীর সাজসজ্জায়? না কি সেই সব দুশ্চরিত্র পুরুষ, যারা ঘৃণ্য চরিত্র নিয়ে সমাজে বসবাস করছে, যাদের লোলুপ দৃষ্টির কারনে বোরখা-হিজাব, শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, প্যান্ট-শার্ট, স্কার্ট যে ড্রেসই চয়েস করুন না কেন, আপনি কখনোই নিরাপদ হবেন না। আপনার সাজসজ্জা যেমনই হোক না কেন, আপনি কোনোভাবেই নিরাপদ নন ওই সব নরপশুর কাছ থেকে।’
ইসরাত জাহান দিপা বলেন, ‘আমাদের সমাজে নৈতিক অবক্ষয় ঠেকাতে হবে। নারীকে আইনের আশ্রয় নিতে জানতে হবে। মনুষ্যত্ব বিকাশে শিশু শ্রেণি থেকেই পাঠ্যপুস্তকে শ্রদ্ধাবোধ, সামাজিকতা,নৈতিকতা,শুদ্ধাচার সম্বন্ধে জ্ঞানের বিকাশ বাড়াতে হবে। সাজসজ্জার দোহাই দিয়ে নারীকে পিছিয়ে রাখা যাবে না। নারীর মেধা, মনন, প্রজ্ঞা, কর্মই একুশ শতকে তার অহঙ্কার। একজন ভদ্র, বিবেকবান নারী জানে কোন সাজে সে মার্জিত, কোন রূপে সে শোভন। সময়ের প্রয়োজনে আজ সাজ-পোষাক পরিবর্তনশীল, আজ আমরা স্বাচ্ছন্দ্যে বিশ্বাসী। নারী আজ স্বাধীন, মুক্ত বিহঙ্গ। কুসংস্কার দূর করে সে তার ব্যক্তিত্বে, রুচিতে, চিন্তা-চেতনায়, মত প্রকাশে স্বাধীন।’
এই ব্যাংক কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘স্বাধীনতা মানে উগ্রতা নয়। স্বাধীনতা মানে শুভ্ররুচির মূল্যায়ন। এই ন্যানো টেকনোলজির যুগে, কিংবা যে শতক জলবায়ুর মডেল তৈরি করে বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত অথবা করোনার বিভীষিকাময় দিনগুলোকে পেছনে ফেলে যখন আবিষ্কার হলো ফাইজার-বায়োএনটেক, মর্ডানা ইত্যাদি করোনা ভ্যাকসিন, তখন নারীর সাজসজ্জা, সাজপোশাক নিয়ে আলোচনা করে সময় নষ্ট করার ফুসরত কি পুরুষ বা নারী কারও আছে? সুস্থ, ব্যক্তিত্ববান, কর্মদক্ষ মানবের কাজ এটা নয়।’
কুমিল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী অর্পনা দেবী বলেন, ‘বাঙালি পুরুষতান্ত্রিক সমাজ হওয়ার মূলকারণ হলো আমাদের পরিবারের কর্তা হয় সবসময় পুরুষ। পুরুষ বলতেই ধরে নেওয়া হয়, তিনিই পরিবারের খাদ্যসংস্থান ও ভরনপোষণের দায়িত্ব বহন করবেন। একজন নারীর ভূমিকা তার পরিবারে যতই গুরুত্বপূর্ণ হোক না কেন, আমাদের সমাজের নারীকে সর্বদাই নিম্ন মর্যাদাই রাখা হয়। বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে আর্দশ, কোমলমতি, ভদ্র, নম্র, গৃহলক্ষ্মী হিসেবে দেখতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। বর্তমান সমাজে নারীরা পুরুষের অধীনস্থ থাকতে চায় না, তারা নিজেদের অবস্থার উন্নতি করছে দিনদিন।’ তিনি আরও বলেন, ‘নারীদের এই পরিবর্তন পুরুষতান্ত্রিক সমাজ মেনে নিতে পারছে না। নারীদের প্রতি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। নারীর সাজসজ্জা, পোশাক আসলেই কিছু না। কারণ সমাজের শিশুরাও নরপিশাচদের হাতে নির্যাতিত হয়। নারীদের সংসারের পুতুল হিসেবে গণ্য করা বন্ধ করতে হবে। নারীদের সাজসজ্জা, স্বাধীনভাবে চলন দেখলে, পুরুষতান্ত্রিক সমাজের সেই তথাকথিত উচ্চ মর্যাদাবান পুরুষদের পুরোনো মনোভাবে ঘা লাগে।’
অর্পনা দেবী আরও বলেন, ‘নারীরা সাজসজ্জা করে নিজেদের আত্মবিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করার জন্য। আমাদের উচিত সমাজে নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা। সমাজের সব পুরুষকে ছোটবেলা থেকেই মূল্যবোধের শিক্ষা দিতে হবে। পরিবারের কাঠামো পরিবর্তন করতে হবে। নারীদের সিদ্ধান্তের সম্মান করতে হবে। নারীদের একজন মা, বোন, খালা, মামি, স্ত্রী হিসেবে দেখার আগে একজন মানুষ হিসেবে গণ্য করতে হবে। তাহলেই কেবল সমাজে নারীরা আত্মসম্মান নিয়ে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকতে পারবে। আসুন সবাই একসঙ্গে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করি, একটি সুস্থ সমাজ গড়ে তুলি।’