Skip to content

৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শনিবার | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গোলকধাঁধা

রাস্তার পাশে ঢালু বেয়ে পড়ে আছে এক সিএনজি। মরে পরে আছে কিছু মানুষ। তবে এখানে মানুষ আছে ১৩ জন৷ কিন্তু একটা সিএনজিতে মানুষ থাকে ড্রাইভার সহ মাত্র ৬ জন। ব্যাপারটা গোলমেলে! গ্রামের রাস্তা৷ রাত বাজে ৯ টা। শীতের রাত, ৯ টা মানেই অনেক। গাড়িও খুব একটা চলছে না৷ এই রোডে সন্ধ্যা ৭ টার পর আর সিএনজি অটোরিকশা চলে না। অন্যান্য ব্যক্তিগত গাড়ি চলে। ঝোপের মধ্যে ঢুকে আছে একটি সিএনজি। মানুষের নজরে আসা একদমই অসম্ভব। কে ভাববে এখানে ১৩ জন মানুষ মরে পরে আছে! দুর্ঘটনাটি চোখের পলকেই হয়ে গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে ৭ টার দিকে। আর এই জানুয়ারি মাসে মাগরিবের আযান দেয় ৫.৩০ টায়। রোডটি নিস্তব্ধ নিবিড় হয়ে রইলো। সব খোলাসা হওয়া সকালের জন্য রেখে দিল! 

 

 

দুর্ঘটনার ৩ দিন আগে…

রাগিব তার নানাবাড়ি যাবে। শহর থেকে তার নানাবাড়ি খুবই কাছে। আজ ডিসেম্বরের ৩১ তারিখ। তার নানাবাড়িতে মামা মামাত ভাই, খালা-খালু খালাত ভাই বোন সবাই এসেছে। আজ রাতে ছোট খাটো একটা পার্টি হবে। শুধু নিজেরা বিরিয়ানি রান্না করে সবাই হই-হুল্লোড় করে খাবে, ব্যস! সেজন্যই যাচ্ছে রাগিব। মজা হবে অনেক বছর পর। তর সইছে না রাগিবের। ৪০ মিনিটের রাস্তা পার করে পৌঁছে গেল রাগিব। সবাই তার অপেক্ষায়ই ছিল। রাগিবের মা-বাবা দুজনেই মারা গেছে বাবা ফুসফুসে যক্ষ্মা হয়ে আর মা মারা গেছে শট-সার্কিট হয়ে৷ চাচা-চাচির সাথে থাকে সে। নিজের বাবা মার মতোই ভালোবাসে তারা রাগিবকে। নানাবাড়ি পৌঁছানোর সাথে সাথে তাকে তার দুই মামা আর ৩ খালা মনি ঘিরে ধরল। সবাই অনেক আদর করছে। ব্যস্ততার জীবন ছেড়ে আজ রাতে আড্ডা হবে!

 

একই সময়ে অন্য কোন এক স্থানে, অচেতন আনজামুল শুয়ে আছে টেবিলের উপর। সম্পূর্ণ মাতাল সে। ভাঙাচোরা এক ঘরের ভেতর সে একাই৷ বাহিরে বড় একটা বক্সে গান বাজছে। ২০/২২ জন মাতাল ছেলে পিলে নাচানাচি করছে। চলছে বারবিকিউ এর আয়োজন। এটাই তাদের থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন। এরা সবাই মাস্তান লোফার টাইপের ছেলে। আর এদের লিড দেয় আনজামুল। সবাই তাকে আনজা ভাই নামে চেনে। কেউ কেউ গাঞ্জা নামেও চেনে৷ সবার উদযাপনের ভিড়ে সে নেই। সে ঘরে একা পড়ে আছে, যদিও এসবে তার প্রচুর আগ্রহ। কিন্তু আজ তার এসবে মন নেই। বলতে গেলে ইদানীং তার গুণ্ডামি, অবৈধ ব্যবসার কাজ কর্মে একদমই মন নেই। মনটা তো মালিহা ভেঙ্গে দিয়ে গেছে। হঠাৎ ধরাম করে দরজা খুলে ঢুকে পড়ে রোস্তম। ভাইকে একা পড়ে থাকতে দেখে একটুও ভালো লাগে না তার। মানুষটা পশুর চেয়ে খারাপ হলেও ভালোবাসাতে যেন এক চুলও ছাড় দেয় নি। মনটা উজাড় করে দিয়েছে মালিহাকে। রোস্তম বলে উঠলো, "ভাই, কিছু একটা করি ভাই। এমনে বইসা থাকলে কি চলব?" আনজা বলে,"কি করতে কস? মেয়াডারে জোর কইরা বিয়ে দিলে তুইলা আনতাম, কিন্তু সে তো নিজেই অন্য এক পোলার লগে গেছে, এনে আমি করুম!"

 

… 

একটি টিনসেড ঘরে একজন লোক খাটের উপর চুপচাপ পরে আছে। লোকটি হিন্দু। বয়স ৪২ এর উপরে বা এর কাছাকাছি হবে। ২৩ বছর বয়সে বিয়ে করেছিল সে, তার ৪ বছর পরেই দুইবছরের একটা সন্তান রেখে তার স্ত্রী মারা যায়। তার নাম পিয়ুস রায়। তার ছেলে ধ্রুব, বয়স এখন প্রায় ১৯ বছর, কিন্তু একদম অকর্মা। পিয়ুস মশাইয়ের একটি ছোট-খাটো মুদি দোকান ছিল। যা দিয়েই তার  ছেলেকে সে এত বড় করেছে, কিন্তু এবারের বন্যায় দোকানটা একদম গেছে। রুজি রুটির একমাত্র ব্যবস্থা নিঃশেষ হয়ে গেলে জীবনে একপ্রকারের ধস নেমে আসে। তার এলাকার নামকরা, মন্দিরের পুরোহিতের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে একটি সিএনজি কিনেছে। সেটা দিয়েই চলছে জীবন। ধারের টাকা শুধানোর জন্য প্রতিদিন তার কামানোর কিছু অংশ রেখে দিতেন। টাকাটা প্রায় হয়েই গিয়েছিল। কিন্তু পুরোহিতের আর ধৈর্য থাকছে না। দেখা হলেই পিয়ুসবাবু কে কথা শুনিয়ে দেয়।পিয়ুস বাবুর ছেলের আবার একটি মুসলিম মেয়ের সাথে প্রেম আছে। দুই পরিবারেই জানাজানি হয়ে গেছে। মেনে নেবে না কোন পরিবারই। পিয়ুস বাবু তো কিছুতেই রাজি নন।এদিকে পুরোহিত মশাইকে পিয়ুস বাবু ১ মাস আগে মাস খানেক সময়ের কথা বলেছিল। সামনের সোমবারেই তার ধার শুধানোর কথা কিন্তু, তার অকর্মা ছেলে তার ঋণ শোধ করার সব টাকা নিয়ে  মালিহা নামের একটি মেয়ের সাথে পালিয়ে গেছে। পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে পিয়ুস বাবুর, পুরো আকাশটাই তার মাথায় ভেঙ্গে পরছে। এত বছর পার করে আসা জীবনকে এখন সম্পূর্ণ অচেনা লাগছে। কাকে খাইয়ে দাইয়ে বড় করল সে, এ কেমন এক সন্তানের বাবা হল সে। মাথায় কিছুই আসছে না তার। চোখ ভিজে আসছে, আসে পাশের পরিবেশ কেমন ঘোলা হয়ে যাচ্ছে। দম-বন্ধ হয়ে আসছে। কি হবে এখন তার! টাকাগুলো না দিলে যে সিএনজি নিয়ে যাবে ওরা৷ ভাবতে ভাবতে মাথা ঘুরে পরে গেল বিছানায়। 

 

রাগিবকে তার বড় খালা বিরিয়ানি খাইয়ে দিচ্ছে। রাত ১০.৩০ টা বাজে। কিন্তু কারো মধ্যে বিন্দুমাত্র ক্লান্তি নেই। তার মামাতো ভাই আছে ছোট শ্রাবণ, রাগিবের খুব ভক্ত সে। আসার পর থেকেই রাগিবকে ঘিরে রেখেছে সে। এক সেকেন্ডও চোখের আড়াল হতে দেবে না। তার থেকে একবছরের ছোট খালাত বোন আছে ঝর্ণা। ছোটবেলা থেকেই রাগিব আর ঝর্ণা একসাথে বড় হয়েছে। সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ঠ ছিল তাদের, কিন্তু ইদানীং আর তাদের সম্পর্ক আগের মতো নেই। কারণ তারা এখন বড় হয়ে গেছে। মানসিকতা বদলে গেছে। ঝর্ণা রাগিবকে ভালবাসতে শুরু করে দিয়েছে। সেটা রাগিব খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছিল৷ তারপর একদিন ঝর্ণা সাহস করে বলেই ফেলে রাগিবকে, "শোন রাগিব, আমি জানি ব্যাপারটা খুবই বাজে দেখায়, আমি সরি বাট আমি তোকে খুব পছন্দ করি। আসলে, আমি তোকে ভালোবাসি।" কথাটা শুনে রাগিব ধাক্কা খায়। রাগিব কখনোই ঝর্ণার ব্যাপারে এসব ভাবে নি। বুঝতে পারলো, ঝর্ণার ভালোর জন্যই এখন ওর থেকে দূরে থাকতে হবে। রাগিব বলে," দেখ ঝর্ণা, এসব বলিস না। ভুলেও না! আমাকে খালা খুব আদর করেন। আমি তাকে মায়ের মতো দেখি। উল্টা-পাল্টা কিছু হইলে আমি আমার এই পরিবারটাও হারাবো, তুই নিশ্চয়ই সেটা চাইবি না?" ঝর্ণা আর উত্তর দেয় না। সে নিজেও জানে, তার ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা সম্পূর্ণই অবাস্তব। তাই এবার আসার পর ঝর্ণার সাথে অতোটা কথাই হয় নি রাগিবের, হঠাৎ চোখে চোখ পরাতে এসব ভাবছিল রাগিব। ছোটমামার সাথে রাগিবের সম্পর্কটা সবচেয়ে আলাদা৷ মামা- ভাগ্নে হলেও একদম বন্ধুর মতো তাদের সম্পর্ক। কিছু ব্যক্তিগত বিষয় ছাড়া বাকি সব কিছুই রাগিব তার ছোট মামাকে বলে। আজ দুজনে একসাথে ঘুমাবে। প্রায় ঘণ্টা খানেক গল্প করার পর দুজনেই ঘুমিয়ে পড়ল নতুন বছরের নতুন সকালের আশায়৷ কে জানে সামনে তার জন্য কি রোমাঞ্চকর ব্যাপার  অপেক্ষা করছে!

আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে আনজা। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পানি পড়ল। হঠাৎ ওঠে দারিয়ে রোস্তম আর বাবনকে ডাক দেয় আনজা। দৌড়ে এসে বলল, "কন ভাই, কিছে?" আনজা বলে, "আমি গাঞ্জা আনজামুল, আমার একটা মেয়ার লিগা কান্না করা মানায় না, একটা মেয়ার ব্যবস্থা কর, নতুন বছর নতুন মেয়ার সাথে শুরু করুম। খুঁইজা লইয়া আহই, আইজ যা ইচ্ছা তাই করুম!" রোস্তম আর বাবন মেয়ে খুঁজতে গেলো। আধাঘণ্টা পরে এক মেয়ে আসলো আনজার ঘরে। রাতটা তার সাথেই পার হবে আনজার তবুও কেন যেন বারবার আনজার চোখ ভিজে আসছে। রাত গভীর হচ্ছে, সকাল ধেয়ে আসছে। অনেকটা সময় পার হল। নিস্তব্ধ এই রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে ফোন বেজে উঠল আনজার। একবার বাজলো ধরল না। ঘুমটা ভাঙ্গেনি তার। শেষ হওয়া মাত্র আবার ফোন আসলো আনজার, এবার একটি নড়াচড়া দিলো আনজা কিন্তু চোখ খুলে নি তার। ৩য় বারের মতো ফোন আসলো, এবার চোখ খুললো আনজা। আশ-পাশ একদম ঘোলা অন্ধকার লাগছে। কিছুই বুঝে ওঠতে পারছে না, কোথায় সে কি করছে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না। মনে হচ্ছে মাথাটা কেও চাপ দিয়ে আছে। হুম, মনে পরছে আস্তে আস্তে। প্রচুর মদ খেয়েছে সে, এখনো নেশা কাটে নি, এখন কেন সকাল হলেও তার নেশা কাটবে বলে মনে হয় না। এসব ভাবতে ভাবতে কেটে গেল ফোন টা, আবার কল এসে পরল। মেজাজ খারাপ করে দিচ্ছে আনজার, হাতটা সরিয়ে ফোনের কাছে নিয়ে ফোনটা তুললো সে.. 

-হ্যালো। 
-অই  ফোন কি পাতালে রাখছোস?
-সরি অনিক ভাই।
-তরে কাম দিছিলাম না? তুই ঘুমাইতাছোস কেন?
-কি কাম জানি ভাই?
-মানে কি? অই, তুই কি খাইছোস? 
-আরে ভাই, পুলাপান থার্টি-ফাস্টের লেইগা খাওয়াইছে। 
-তরে গত পরশু দিন আমি কল কইরা সব কাম বুঝাইলাম না? আর বারবার কইছিলাম যে ১ তারিখ রাইতে খাবি না! 
-ভাই, গতকাল মালিহা পালাইছে না? সব আউলা-ঝাউলা হইয়া গেছে। 
-আরে এইটা কোন ঘটনা হইলো? পুলাপান কি কম আছে আমগো?
-ভাই, যতই পুলাপান থাকুক, ও তো নিজ ইচ্ছায় গেছে। এনে আমি আর কিছুই করুম না। 
-আইচ্ছা ঠিকাছে, তোর মর্জি। এখন কামডা কর রাত ৪ ডা বাজে এখন যা আর ৬ ডার মধ্যে মাল লইয়া আয়।
-আইচ্ছা। 

 

কথা ঠিক মতো গুছিয়ে বলতে পারছে না আনজা। কথা যেন নাক দিয়ে বের হচ্ছে। চোখের সামনের পৃথিবী ঘুরছে, ঢুলছে। অবস্থা খুবই খারাপ। কি করতে গিয়ে কি করে ফেলবে কোন নিশ্চয়তা নেই আনজার। অই অবস্থাতেই শরীরের উপর থেকে মেয়েটাকে সরিয়ে শার্ট পরে নিল, কিন্তু বোতাম সবগুলো লাগাতে পারল না। বোতাম যে বাকি আছে তা আনজা জানেই না৷ সিগারেট ধরিয়ে বের হয়ে গেল ঢুলতে ঢুলতে। অনিক ভাইয়ের কথা ফেলা আনজার জন্য অসম্ভব!

পাহাড়ি এক রাস্তা বেয়ে দৌড়াচ্ছে রাগিব, সামনে আছে তার বাবা-মা। রাগিব বারবার ডাকছে তাদের। তারা কোন শব্দ না করে দৌড়ে চলেছে। হঠাৎই সামনের কিছু গাছ-গাছালি আর ঝোপঝাড়ের মাঝে তারা হারিয়ে গেল। রাগিব সহ্য করতে পারছে না গতি বাড়াচ্ছে। কোন প্রকার দ্বিধা না করে ঝোপে ঢুকে গেল সে। ঝোপটা পার করা মাত্র দেখে আর পাহাড় নেই। এক মূহুর্তের মধ্যেই সে উপলব্ধি করে তার নিচে মাটি নেই। অসীম উচ্চতা থেকে সে নিচে পড়ে যাচ্ছে রাগিব, আর জোরে জোরে ডাকছে, "আব্বু আম্মু!" উচ্চতা শেষ হয়ে মাটিতে পরবে এমন সময়ে ঘুম ভেঙ্গে গেল রাগিবের৷ ঘেমে একদম ভিজে গেছে সে। কম্বল সরিয়ে ফেলল গা থেকে ঘড়িতে এখন ৪ টা বাজে। স্বপ্ন দেখে ভয় পেয়েছে রাগিব। তার ছোট মামা পাশে ঘুমাচ্ছে। নিঃশব্দে বের হয়ে এল। সে ঘেমে গেলেও বাহিরে প্রচুর শীত। বের হওয়ার পর ঠাণ্ডা লাগছে। জ্যাকেট পরে বারান্দায় বসে ফোন বের করল সে। বাবা মার ছবি ওপেন করে চেয়ে রইল বিনা কোন শব্দে। সময় পার হয়ে যাচ্ছে অনেক।  কিজানি সন্তানের সাথে বাবা-মার কি এত কথা চলছে! 

 

সেই শহরেই একটি ঘরে এক নবদম্পতি। রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করেছে কাল। পালিয়ে এসেছে তারা বাসা থেকে। ধ্রুব আর মালিহা। এক বন্ধুর বাড়ির ছাদে কাটাচ্ছে প্রথম রাত। রাত ৪ টা বেজে গেছে এখনো অক্লান্তভাবে গল্প করছে তারা। দুজনে দুজনকে নিয়ে কতো আলাপ! কিন্তু ধ্রুবর মাথায় ঘুরছে একটাই বিষয়, "টাকা নেই হাতে। কি করবো এখন?"। মালিহার তেমন কোন চিন্তা নেই বললেই চলে। ধ্রুব মালিহার সব কথার উত্তর দিচ্ছে আর ভাবতেছে, "দিনে কারো মোবাইলই মারা লাগবে তাছাড়া উপায় নেই। চুরির নিয়ত করে ঘুমিয়ে পরল ধ্রুব, বিষয়টা মালিহাকে জানানো যাবে না কিছুতেই!

 

পিয়ুস বাবুর জ্ঞান ফিরেছে। চোখ খুলে দেখল চারিদিক অন্ধকার। বুকের ভেতরের কষ্টটা যায় নি। ক্ষুধা পেয়েছে তার৷ নিজে নিজেই উঠে পরল। কিছু ভাত আর ডিম ভর্তা বানিয়ে খেয়ে নিল। চোখ দিয়ে পানি পরছে। তার ছেলে না জানি কি খেয়ে আছে রাতে। কিভাবে থাকবে সে এখন তার ছেলে ছাড়া। স্ত্রী থাকলে পাশে অন্তত কেউ তো থাকতো। নেই আজ কেউ তার সাথে। ভাবতে ভাবতে নিজেকে এত অসহায় লাগছে তার। তার ভগবান তার সাথে এ কি আচরণ করল৷ তার ছেলে কি তার কথা একটুও ভাবল না। ধ্রুবের কি তার বাবাকে মনে পড়বে না? বাসায় বসে থাকতে ভালো লাগছে না একটুও। বুকটা ভার হয়ে আসছে। তখনই পুরোহিতের কথা মনে পরে গেল৷ কামানোর ব্যবস্থাটাও থাকবে না আর৷ বেচে কি করে থাকবে৷ বাচতে ইচ্ছাও করছে না পিয়ুস বাবুর!

 

ভ্যানে করে ঢুলতে ঢুলতে পৌঁছে গেছে আনজা। দুইজন এক ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে আছে কলেজ গেটের সামনে। ভ্যান থেকে নেমে, ঢুলতে ঢুলতে আগাচ্ছে আনজা। পা কখনো এদিক তো ওদিক। নাহ এভাবে হাটা যাচ্ছে না বিরক্ত লাগছে। দাঁড়িয়ে পরল সে, লোক দুটিকে ডাক দিল। তারা আসলো৷ জিজ্ঞেস করল," তুই কি গাঞ্জা আনজামুল?" অস্পষ্ট গলায় আনজা বলল, " অই… মাদারের বাচ্চা, গাঞ্জা আমার লোক বলে, তরে বলার সাহস কেরা দিছে? কোপ দিমু কইলাম, ব্যাগ দে আর চুপচাপ কাইটা পর।" লোকগুলো আর কথা বাড়ালো না। ব্যাগ দিয়ে দিল। এদিকে আযান দিয়ে দিয়েছে। মানুষের আনাগোনা শুরু হবে। এখন একটি গাড়ি পেলেই চলে যেতে পারবে আনজা।  কিন্তু গাড়ি তো একটাও নজরে পরছে না তার, কি বিপদ! 

 

রাগিব অনেকদিন পর আজ ফজরের আযান পেয়েছে, ভাবতেছে মসজিদে যাবে। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। নামাজ পড়তে চলে গেল মসজিদে। পড়া হয়ে গেল ফিরে এল বাড়িতে। ওঠানে একটি স্টুল নিয়ে বসে ফেসবুকে ক্রল করছে রাগিব৷ ঘরের ভাতরে খাট থেকে নামার আওয়াজ। সেদিকে খেয়াল করল না রাগিব। কিন্তু ঘরের দরজা খুলার শব্দে পেছনে তাকালো সে, ঝর্ণা আসছে। রাগিব অপ্রস্তুত হয়ে গেল৷ ঝর্ণা যত কাছে আসছে রাগিবের মনের ভেতর ততটাই কিসের যেন চাপ বাড়ছে। ঝর্ণা কাছে এসে দাঁড়ায়। স্তব্ধতা ভেঙ্গে রাগিবই আগে বলে উঠলো, " কিরে ঝর্ণা, এখনই ওঠে পরলি?" "হুম, ঘুম ভেঙ্গে গেল।" উত্তর দেয় ঝর্ণা। "কিছু বলবি?" প্রশ্ন করে রাগিব৷ "হুম, কিন্তু এখানে না। চল হাঁটতে হাঁটতে বলি।" অনেকদিন পর ঝর্ণা আর রাগিব পাশাপাশি হাঁটছে। শেষবার হয়েছিল ক্লাস ৬ এ৷ বাড়ি থেকে একটু দূরে গিয়ে থেমে যায় ঝর্ণা। "শোন," হ্যাঁ বল" এই কথাটাই শোনার কথা ভাবছিল রাগিব।

 

"আমার মা যদি আমাদের মেনে নেয় তাহলেও কি তুই আমাকে কাছে টেনে নিবি না?" "তুই আবার শুরু করেছিস?" রাগিব একটু কঠিন গলায় বলল। ঝর্ণা আবার বলে ওঠে, " যা জিজ্ঞাস করেছি তার উত্তর দে।" "আরে আমাদের মেনে নেবে না, কেন বুঝতে চাইছিস না?" "যদি নেয়? আমি সবার মধ্যেই এখন তোকে দেখতে পাই। তুই কাছাকাছি আসলেই আমার অস্থির লাগে।" "তাহলে তো আমার আসাটাই ভুল হল, তাই না?" "আমি কি একবারো তা বলেছি?" "তোর কথা শুনে তাই মনে হচ্ছে।" "আমরা এক পরিবারেরই অংশ, তাই কারো আসা যাওয়া কোনোভাবেই ভুল হবে না।" "শোন, এসব নিয়ে যত ভাববি ততই মন উলটা-পাল্টা লাগবে, আমরা আর কতদিনই একসাথে থাকবো, বড়ই তো হয়ে গেছি পড়াশোনা শেষ হলে কোথায় না কোথায় চলে যাব, তোর কোথায় না কোথায় বিয়ে হবে! শুধু শুধু এসব ঝামেলার কি কোন দরকার আছে?" " তো আমি তোর কাছে ঝামেলা হয়ে গেছি?" কাতর গলায় ঝর্ণা বলল। রাগিব হতাশা ভরা কণ্ঠে বলে, "আমি সেটা বোঝাই নি, তোকে কেন ঝামেলা মনে হবে, তুই যা চাচ্ছিস সেটা ঝামেলা।" ঝর্ণা আর কথা বলে না চোখ লাল হয়ে গেছে। দুচোখ বেয়ে অশ্রু পরল তার৷ রাগিব অপ্রস্তুত হয়ে বলল, "কাঁদছিস কেন, আমি তোর ভালোর জন্য বলছি।" এই বলে নিজ হাতে চোখ মুছে দিল রাগিব। তার পর আবার বলল, "ধুর বোকা মেয়ে, কাঁদিস না। এসব কিছুই না। দুইদিনের মায়া, কেটে যাবে আবার দুইদিনেই।" কথাটা শোনা মাত্র ঝর্ণা বড় কদম ফেলে চলে আসতে থাকে। মেয়েটা কষ্ট পেয়েছে রাগিবের কথায়। প্রচণ্ড ভালোবেসে ফেলেছে সে রাগিবকে! 

 

 

অনেকক্ষণ পার হয়ে  গেলো কিন্তু গাড়ি নজরে পরছে না আনজার। একটা সিএনজি নজরে পড়লো তার। কিছুতেই মিস করা যাবে না গাড়িটা। মাতাল গলায় জোরে ডাকাডাকি শুরু করলো আনজা। থেমে গেলো সিএনজি আনজা দৌড়ে সিএনজির কাছে গেলো, "মামা রামপুরা যাবা তো?" ড্রাইভারকে  কোন উত্তর না দিতে দিয়েই আবার বলে উঠলো,"না গেলেও এখন যান লাগবো।" বলেই উঠে পরলো আনজা। ছেড়ে দিলো সিএনজি। পৌঁছানোর ব্যাপারে এক প্রকার নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরলো মাতালটা। 

 

 

দুর্ঘটনার ৩ ঘণ্টা আগে…

রাগিব সিএনজি স্ট্যান্ডের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এক সিএনজির সামনে গিয়ে বলল,"পাইকড়ার গাড়ি কোনটা মামা?" এক লোক যার নাম পিয়ুস বাবু দৌড়ে এসে বলল,"বসেন, এইটাতে।" রাগিব ভেতরে গিয়ে বসল। পাশে দুইটা ছেলে আগে থেকেই বসা আছে। রাগিবকে দেখেই তাদের একজন যার নাম আনজা জিজ্ঞেস করল," ভাই, কোন গ্রাম?" রাগিব উত্তর দিলো,"পাইকড়া।" আনজা আবার উত্তর দিলো,"ওহ, কখনো দেখি নাই তো তাই জিগাইলাম।" "আচ্ছা।"।  সামনে একজন বসলেই পিয়ুস বাবু গাড়ি টান দিলো। সচরাচর সামনে দুইজন না বসলে কোন সিএনজিই সেখান থেকে ছাড়ে না। একজন যাত্রী ছেড়ে দিতে কেউই রাজি হতে চায় না। গাড়ি চলতে থাকে। রাগিবের মুখটা মলিন হয়ে আছে। কোন কারণে ভেতরে অপ্রকাশিত কষ্ট জমে আছে তার। পাশে আনজা আর বাবন আলাপ করছে। এমন সময়ে বাবন বলে উঠলো," ভাই সিম চালু হয় নাই?" আনজা বলে," না রে বাল। কি যে হইতাছে আমার লগে। এইদিকে কোডও আইসা পড়ব মেসেজে। তুই না কল দিছিলি?" বাবন বলে," জ্বী ভাই, রং নাম্বার কইলো। এইদিকে সিম তো আপনার কাছেই আছে।" গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে সজোরে। শহুরে পরিবেশের অভাব দেখা দিতে শুরু হয়েছে। গ্রাম্য পরিবেশ এসে যাচ্ছে হাতের নাগালে। হঠাৎ রাগিবের ফোনে ছোট খালার কল আসলো,"এই রাগিব, চোর ধরেছে পুলিশ। সব ঠিক হয়ে গেছে। তুই কাজ শেষ করে চলে আয় বাবা।" "আলহামদুলিল্লাহ, থাকো খালামণি, কাল বিকালের আগেই চলে আসবো।" আনজা ড্রাইভার পিয়ুস বাবুর দিকে তাকিয়ে বলল, "অই চালক ভাই, তুমিই আছিলা না? ১ তারিখ সকালে??" পিয়ুস বাবু শান্ত গলায় বলল, "মনে হয় না। সকাল কয়টার দিকে?" "৬টা" "এত সকালে আমি গাড়িই বের করি না।" "তাও মামা, আপনে ছাতিহাটি গাড়ি ১০ মিনিট রাইখেন আমি একটু খেয়াল করুম, আপনের গাড়ি আমি গত দুইদিনে একবারো দেখি নাই সন্দেহ লাগতাছে।" শেষ হল তাদের কথা। কিন্তু শেষ হয়েও যেন কথা শেষ হল না পিয়ুস বাবুর কথা। হঠাৎই তার গাড়ি চালানোর গতি অত্যধিক বেড়ে গেল। একটু আঁকাবাঁকা চালানো শুরু করল। ঘেমে যাচ্ছে তার শরীর তবে কেউ খেয়াল করছে না। রাগিবের মলিন মুখটা হালকা উজ্জ্বল হয়েছে খালামণির কলের পরে। চোরটা ধরে পরে গেছে, তার মানে খুব একটা ক্ষতি করতে পারলো না চোরটা রাগিবের। কাল দিনটা রাগিবের জন্য খুবই স্পেশাল। পকেটে সাড়ে চার হাজার টাকা নিয়ে এসেছে, আড়াই হাজার তার একবছরের জমানো, আর ১ হাজার তার বড় খালা, বাকি ১ হাজার তার ছোট মামা দিয়েছে। এমন সময়ে আনজা আছে খুব টেনশনে, প্রচণ্ড উলটাপালটা শুরু হয়েছে তার সাথে। কি এক এলোমেলো অবস্থা তার জীবনের। কিচ্ছু ভালো লাগছে না তার। কয়েকটা দিনে তার জীবন পুরো নরক হয়ে গেছে। মনে সব দোষ সে দিতে থাকে মালিহাকে৷ মেয়েটা তাকে ধোঁকা দিয়ে এই দুর্নীতিবাজের গুছানো জীবনটা কেড়ে নিয়েছে। বাবনের কাছ থেকে ফোনটা চেয়ে রোস্তম কে কল দিল আনজা, "অই, ৭/৮ জন পোলাপান নিয়া আমগো ব্রিজে দাড়াইস, আমি টাকা লইয়া আইতাছি, তোগোরে কেউ চালু কইরা টাকাডা পৌঁছাইয়া দিস, আর সিমের কি হইলো অইডাও ব্যবস্থা করা লাগব। আর শুন, সিএনজি একটা পাইছি চেক করমু আর ড্রাইভার রে ধরমু।" তার কিছুক্ষণ পর হঠাৎ কল আসলো বাবনের_

 

-বলেন ভাই৷ 
-আনজা রে দে।

-জ্বী অনিক ভাই 
-কনে আছস?
-ভাই আইতাছি টাকা লইয়া, সিএনজিতে। 
-আবার সিএনজিতে? তোরে না বাইকে যাইতে কইছিলাম?আর তোর নাম্বারে কল দিলে রং নাম্বার কয় ক্যান?
-ভাই ওই সোহাগের লগে আমার ঝামেলা হইছে, আমার বাইক ওর কাছে রাখছিলাম। আর ফেরতই চাই নাই। 
-আইচ্ছা, ভুল করিস না আবার। টাকা আনতাছস তো?
-হ ভাই পুরা সাতান্ন ই আনতাছি। 
-পাইলি কই? 
-পুলাপান লাগাইয়া দিছিলাম। মাইরা কাইটা লইয়া আইছে। 
-তা, যাই হোক টাইমে পৌছাইস। ওহ শোন, তোর নাম্বারে কল দিলে রং নাম্বার কয় ক্যান কইলি না? 
-ভাই আমিও জানি না, আইজ দুপুরের পর থিকাই বন্ধ হইয়া গেছে, কি যে হইছে বুঝতাছি না। কল দিলে অন্য মাইনসে ধরে।
-হায় হায়, কস কি! পাসওয়ার্ড আসবো তো । 
-জ্বী ভাই, কি করুম কিচ্ছু বুঝতাছি না। ভাই আপনে একটু দেখেন যদি আমার মেসেঞ্জারে পাঠান যায়। 
-এখনে কইলে কি চলব? এক ঘণ্টাও নাই, তুই কি বুঝতাসস এইডা আমগো লিগা কত বড় লটাড়ি?
-জ্বী ভাই, কিন্তু এনে আমার হাত নাই একটুও। 
-আগে কস নাই ক্যান?
-ভাই, এমনেতেই সাতান্ন লাখের লস এ আপনে রাইগা আছিলেন, আমি ভাবছিলাম টেকাডি ফেরত দিয়া কমু। 
-ধুর, এখন যে বিপদে ফালাইলি। আইচ্ছা দেখি। 

 

আনজা একটা সিগারেট ধরালো, খুব টেনশন। কিছুই ভালো লাগছে না তার। এদিকে ড্রাইভার পিয়ুসের গতি কিছুতেই কমছে না। ঘেমে একদম ভিজে গেছে। জানুয়ারি মাসে যদি কেউ সিএনজিতে বসে এভাবে ঘামে তাহলে তাকে দেখে বিশ্বাস করা নিজের চোখে হলেও কষ্টকর। রাগিব নিশ্চিন্তে বসে আছে, কিন্তু খুশি আর কষ্টের মাঝামাঝি এক পর্যায়ে। মানুষের অল্প কিছু বিষয়েই আনন্দ বেশি হয়, আর এখানে তো কষ্টের ব্যাপারটা তার জন্য মেনে নেওয়াই দ্বায়। কেমন যেন লাগছে তার। পিয়ুস বাবুর এলোমেলো গাড়ি চালানোতে সিট একটু নড়াচড়া করছে। সচরাচর কোন সিএনজিতে এমনটা ঘটে না। তখন বাবন বললো ভাই, "আপনার নাম্বারে একটা কল দেই, শালারে থ্রেট দেই যদি সিমটা দেয়।" "দে, তোর ফোনটা দে।" বাবন পকেট থেকে ফোন বের করতে খানিকটা উচু হয়ে নিল। তখনই সিটটা একটা কাপুনি দিল কারন পিয়ুস বাবু একটি ছোট গর্তের উপর দিয়ে চালিয়ে দিয়েছে, খেয়াল করে নি। বাবন বিরক্ত হয়ে পিয়ুস বাবুকে দু-চারটে কথা শুনিয়ে দিল। এই সময়ে আনজা কল দিচ্ছে তার নিজের ফোনে, গ্রামের এলাকা তাই নেট পেতে একটু দেরি হচ্ছে। বাবন আনজাকে বলে বালের সিট এমন ক্যান, বলে সিটটা উচু করে দেখতে চায়। আনজা বলে," ধুর কি করস, চুপচাপ বয়।" বাবন ভাইয়ের কথা শুনে না, "না ভাই বহুত ক্ষণ ধইরা এই সিট এমন করতাছে, এইডারে ঠিক করুম। আয়নায় বিষয়টি লক্ষ্য করছিল পিয়ুস বাবু। হাত কাঁপছে প্রচণ্ড তার। সামনের রাস্তায় লক্ষ করতে পারছে না। গতির সাথে চাকা এমন ক্যারাব্যারা করলে দূর্ঘটনা নিশ্চিত। কল লেগেছে আনজার সিমে। বাবনও আনজা ভাইকে একটু উচু হতে বলে ভেতরে হাত ঢুকিয়ে দিয়েছে। সামনে ব্রিজে ৮ টা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে, আনজার পোলাপান সব। সেদিকে খেয়াল নেই পিয়ুস বাবুর। কল বেজে উঠলো রাগিবের ফোনে। পকেট থেকে একটা বাটন ফোন বের করে কানে নিয়ে হ্যালো বলা শেষ৷ এদিকে আনজার সিমে কল যাওয়ায় ওপাশ থেকে হ্যালো আসার সাথে সাথে আনজা বুঝে গেল, পাশে বসে থাকা ছেলেটার ফোনেই কল দিয়েছে সে। হাত ঢুকাতেই বাবনের চোখ কপালে ওঠে গেল। ভেতরে আছে " রিভলভার" তাও একটা না। হাতে শুধু একটার পর একটা পাচ্ছেই সে। বিষয়টা আয়নায় পিয়ুস বাবু দেখে ভয় পেয়ে যায়৷ কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। সামনে ব্রিজে বসে থাকা ছেলেগুলা অপেক্ষায় আছে আনজার। আনজা ফোন সরিয়ে রাগিবের দিকে তাকালো রাগিবও আনজার দিকে তাকালো। আনজা রাগিবকে বলল,"আমার সিম তোর কাছে কিভাবে?" পাশ থেকে বাবন বলে ওঠল,"ভাই সিটের নিচে আমাগো রিভলবার" এক সিএনজিতে এত্তসব কি হচ্ছে!

 

 

 

১ জানুয়ারি, শুক্রবার 

 

 

ঘুম ভেঙ্গে গেছে পিয়ুস বাবুর। কিছু খেয়েও নিয়েছে। ছেলের কাজের জন্য নিজের কাছে নিজেই অপমানিত অনুভূত হচ্ছে। ঘরে আর ভালো লাগছে না তার। সিএনজিটা নিয়ে বের হল সে। যদি এক দুইটা যাত্রী পাওয়া যায়। কিছুক্ষণ চালানোর পরই আনজা তার গাড়িতে ওঠে হাতে একটা ছোট্ট ব্যাগ নিয়ে। নেশায় পুরোদমে মাতাল সে। পিয়ুস বাবু ভয়ে ভয়ে চালিয়ে রামপুরা পর্যন্ত নিয়ে যায়। মাতালটার ঘুম ভাঙ্গে না। পিউস বাবু কোন মতে আনজাকে জাগিয়ে সিএনজি থেকে বের করে। আনজা হালকা হালকা চোখ খুলে বের হয়ে আসে। হাত থেকে অনেক আগেই ব্যাগটা সিএনজিতে পরে গেছে যখন সে ঘুমিয়েছিল। ব্যাগের কথা আর খেয়াল নেই ব্যাগ সিএনজিতে ফেলেই সে চলে যায় বাড়িতে গিয়ে ঘুম। পিয়ুস বাবু সিএনজি নিয়ে এগিয়ে যায়। শুরুতে খেয়াল করেনি সে ব্যাগটা। এক চায়ের দোকানে চা খেয়ে আবার গাড়িতে বসার সময় ব্যাগটা তার নজরে আসে। তখন সকাল ৭ সবে। মানুষ বাহিরে আছে কিন্তু খুব বেশি না। সে গাড়িটা এক শুনশান স্থানে থামিয়ে ব্যাগটা খোলে। সে সচরাচর অসৎ কাজ করে না। এদিকে পুরোহিতের টেনশন। সে জানে ঘরে লোক আসবে তাই সে ঘরে আর ফিরবে না এই কয়দিন নিয়ত করেছিল। সিএনজি নিয়ে বাহিরেই কাটিয়ে দিবেন সারাদিন সারারাত। তাই ব্যাগটা খুলে ফেলেছে কৌতুহলে। প্রায় ৬টা রিভলবার আর অনেকগুলো ড্রাগস এর প্যাকেট। ছোট একটা ব্যাগে প্রায় ৫৭ লাখ টাকার মাল! তৎক্ষণাৎ সে বুঝে ফেলল তার সকল সমস্যার সমাধান এই ব্যাগ। জীবন পার করে দেওয়া যাবে এই ব্যাগের মাল থেকে টাকা বানাতে পারলে। অসৎ কাজ মানুষের মধ্যে টেনশন এনে দেয়, আর সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে বিচ্যুত করে। সে ভাবলো সে এগুলো নিয়ে ঘরে যাবে না। সিটের নিচের ফাকা অংশ রিভলবার আর ড্রাগস এর প্যাকেটে ভরে ফেললেন। তার পর একদিনের জন্য টাঙ্গাইলের বাহিরে চলে গেলেন। যাতে আনজা তাকে খুঁজে না পান। এদিকে আনজা শুধুই ঘুম। অপরদিকে সকালটা ঝর্ণার কান্না দিয়ে শুরু হয়েছে রাগিবের। কতদিন এভাবে এড়িয়ে চলবে, একদিন যদি সে নিজেও ওর কথার সাথে একমত হয়ে যায়, এসব চিন্তা করে সে ঠিক করল যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে যাবে। কিন্তু ব্যাপারটা তার পরিকল্পনা অনুযায়ী হল না। সকালে ওঠে সে দেখতে পেল তার বড়মামা আর বড়খালা ঢাকা চলে যাবে। এখন যদি রাগিবও চলে যেতে চায় তাহলে তাকে ঝর্ণার সাথেই যেতে হবে তাই সে মনে মনে পরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। তার মেঝো খালা ১১টা নাগাদ তার শ্বশুর বাড়ির দিকে রওনা হল। বাড়িতে রইল শুধু ছোট মামা, ছোট খালামণি, নানা আর নানি। গোসল সেরে নানা, মামা আর রাগিব জুমু'আ এর নামাজ পরতে চলে গেল। বাড়িতে নানু আর খালা, খালামণি কাপর ধুচ্ছে বাথরুমে আর নানি ঘুমচ্ছিল।আবার রাতেই ফোন চুরি করার নিয়তে থাকা ধ্রুবের চোখ খুলল ১০ টার দিকে৷ মালিহা আগেই উঠেছে। বন্ধুর বাসা থেকে একটু পরেই চলে যেতে হবে। এই গ্রামে তাকে কেও চেনে না এটাই পার্ফেক্ট জায়গা। এসব ভাবতে ভাবতে জুম্মার সময় হয়ে গেছে। তার বন্ধুর বাড়ির ঠিক পেছনে একটি বাড়িতে নিঃশব্দে ধ্রুব ঢুকলো। আগেই খেয়াল করেছে সে বাহিরের ঘরে কেও নেই৷ ভালোভাবে খেয়াল করে দেখল কারো নজরে সে পরছে না, তার মধ্যে জুম্মার সময় পুরুষরা মসজিদে থাকবে সে জানে। আস্তে করে ঘরে ঢুকে টিভির উপরে দুটো ফোন চার্জে দেওয়া পেল সে। এমন সুযোগ আর কে ছাড়ে। নিয়ে চলে গেল সে। রাগিব আর তার মামা ফিরে এসে মাথায় হাত দিল, তাদের ফোন নেই। বাড়িতে এক হুলুস্থুল লেগে গেল। অনেক কিছুই চিন্তা করা হল কিন্তু কার উপর সন্দেহ করতে গিয়ে কার উপর করে ফেলবে! কিছুই বুঝে ওঠতে পারছিল না রাগিব। শেষমেষ আইএমাই কোড দিয়ে থানায় গিয়ে জিডি করল সে আর তার মামা। ফোন অন করলেই পাওয়া যাবে। এদিকে ধ্রুবের ফোন বিক্রি করে দেওয়া শেষ। যার কাছে বিক্রি করেছে সে জানত না রাগিব জিডি করেছে। সে ফোনটা আজ আর অন করল না। রাগিবের মনটা খারাপ হয়ে গেল। এদিকে আনজার ঘুম ভেঙ্গে হুশ ফিরেছে। সে সিএনজি স্ট্যান্ডে গিয়ে হাঙ্গামা করল। কেউই রাজি হয় না। দুচারটে যে সিএনজি গুলোকে দেখে মিল পেল তাদের উপর অত্যাচার করল। জানতে পারল প্রায় ৫ জন সিএনজি শহরে নাই। তাদের আসার অপেক্ষায় আনজা চলে আসে। নেশা করা মানুষদের মস্তিষ্ক কাজ করে কম। আনজার মাথা ব্যথা শুরু হয়ে যায়। সাতান্ন লাখ টাকার লস। অনিক ভাই যে কি করবে তার। বিড়ি ধরালো সে। বুঝতে পারল ইমিডিয়েটলি ব্যাগটা ফেরত দিতে সে পারবে না। কিন্তু টাকাটা ম্যানেজ করতে হয়তোবা পারবে। আনজা তার সব চ্যালাগুলারে কাজে নামতে বলল। মার্কেটের সব দোকান থিকা টাকা তুলতে, চুরি করতে ডাকাতি করতে, কারো কাছে টাকা থাকলে আপাতত সেটা আনজাকে দিতে বলল সে। দুইদিনের মধ্যে এত টাকা পাওয়া অনেক কঠিন৷ এমন সময় আনজা এক ছেলেকে কিডন্যাপ করে ফেলল, মুক্তিপণ হিসাবে নিল ১০ লাখ টাকা। এইভাবে আরো ৪/৫ টা কিডন্যাপিং করে টাকা হয়েই গেল শেষ পর্যন্ত। অসৎ পথে টাকা বেশি শান্তি কম। বছরের প্রথম দিন সবার একধরনের টেনশনের মধ্যে দিয়ে কাটল আনজার, রাগিবের, পিয়ুস বাবুর। 

পরদিন রাগিব তার বাসায় অর্থাৎ তার চাচা চাচির বাসায় চলে যাবে। যেমন ভাবনা তেমনই কাজ। চাচা চাচির ও ওর জন্য মন খারাপ। চাচি তার এক পুরাতন বাটন সেট দিয়ে বলল,"বাবা কিছুদিন নাহয় এটা দিয়ে কাজ চালাও, পরে সুযোগ হলে আবার কিনে দিব।" রাগিব বলল,"আচ্ছা, আর ফোন পাব একটু সময় লাগবে জাস্ট।" তার পুরোনো সিমটা তুলে এনেছে চাচি। একটা স্কিটো সিম দেখতে পেল রাগিব বাটন ফোনে। চাচিকে জিজ্ঞাসা করতেই সে জানালো অনেকদিন ধরে রাগিব তার কাছে একটা স্কিটো সিম চাচ্ছিল। পরে কিনে দিব বলেছিল তার চাচি। আর তার নিয়মিত ব্যবহারের সিম চাচার নামে রেজিস্ট্রেশন করা, চাচা অফিসের কাজে শহরের বাহিরে গিয়েছে। এদিকে গত বছর তার একটা সিম হারিয়ে গিয়ে ছিল। কিভাবে হারিয়ে ছিল তা জানে না তার চাচি। সে সিমটাই তুলেছে সে রাগিবের জন্য৷ দুটো সিম সহ তার বাটন ফোন দিয়ে তার নতুন বছরের যাত্রা শুরু হচ্ছে। কিন্তু স্কিটো সিমে প্রচুর কল আসছে রাগিবের৷ সবাই কল দিয়ে আনজা নামে কাওকে চায়৷ রাগিব রং নাম্বার বলে কেটে দেয়। রাগিব বুঝতে পারে, সিমটা হারিয়ে গিয়ে কোন আনজার কাছে গিয়েছে। সে সেটা ব্যবহার করেছে। অন্যদিকে আনজার সিম বন্ধ হয়ে গেছে। সে জানেও না। তার সিমে কাল বিকালের আগেই একটা এসএমএস আসার কথা। সেখানে মাল কখন কোথায় ডেলিভারি আর একটা ব্যাংক একাউন্টের পিন পাঠানো হবে, এগুলো আনজার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অনেক টাকার ব্যাপার এগুলো। সিম যেহেতু রাগিবের কাছে তাই মেসেজ কিছুতেই আনজার কাছে পৌঁছাবে না। গোলকধাঁধা তৈরি হয়ে গেছে তাদের মধ্যে। দিনটা চলে যায় এভাবেই। 

৩ জানুয়ারি, রবিবার 

৪ জানুয়ারি রাগিবের বাবার মৃত্যুবার্ষিকী। সে তার গ্রামের বাড়ি পাইকড়া যাবে আজ৷ কাল বিকালে চলে আসবে। দাদা-দাদুর সাথে দেখা করবে আর সাড়ে চার হাজার টাকা মসজিদে দান করবে সে। পাইকড়া রামপুরার আগের গ্রাম। সিএনজিতে যেতে হয়৷ এদিকে একটু পর পরই তার ফোনে রং নাম্বার থেকে কল আসে। পুলিশরা রাগিবের ফোন ট্রেস করে ফেলেছে। কোন বলদ ফোন চুরির দুইদিন পরই ফোন অন করেছে। সে অবশ্য অন করে একদমই সময় নষ্ট করে নি। আবার অফ করে ফেলেছিল৷ কিন্তু ওই অল্প সময়ই পুলিশদের জন্য যথেষ্ট ছিল। স্থান ট্রেস করে ফোন পেয়ে গেছে আর ধ্রুবকেও ধরেছে পুলিশ। বেচারি মালিহার এখন এদিকও নেই ওদিকও নেই। তাও যাই হোক কোন ভাবে নিজের বাড়ি চলে যায় মালিহা, "যা হবে দেখা যাবে" এই বলে। পিউস বাবু জানতে পারে তার ছেলেকে পুলিশ ধরেছে, এই শুনে সে শহরে ফেরত আসে৷ ছেলের সাথে দেখা করে ছাড়িয়ে নিয়ে বাড়িতে নিয়ে যায়। বাড়িতে নিয়ে গিয়ে উত্তম-মধ্যম দেয় বাবা ছেলেকে। এর পর বের হয় সিএনজি নিয়ে। জিনিসগুলোর কথা মাথায় আছে। ছেলেকে না বলেই টাকা গুলো রেখে দিতে হবে তার নাহলে এই অকর্মা ছেলে আবার কিছু একটা করে ফেলতে পারে৷ তাই এবার সে তার ছেলেকে জানাবেই না৷ গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যায় সে ছেলেকে দেখানোর জন্য৷ সে আজ একটু কলেজ গেটের সামনে যায়। এদিকে আনজার মাথা নষ্ট। সিম বন্ধ হয়ে গেছে৷ কি হবে। কিন্তু তার আগে অনিক ভাইকে টাকা দিতে হবে। ভাগ্যের কি পরিহাস, কাকতালীয় ভাবে তারা তিনজন একই সিএনজি তে ওঠে, একসাথে সফর করতে থাকে তারা। তারপর কি হয় সেটা তো আগেই জেনেছি। 

 

রিভলবার পেয়ে গেছে বাবন। আনজা বুঝতে পেরে গেছে। বাবন বলল, "গাড়ি সাইড কর। আমাগো লগে বাটপারি? গাড়ি থামা।" সেদিকে খেয়াল নেই পিয়ুস বাবুর। "তর কাছে আমার সিম কেমনে! সিম খোল আমার।" এই বলে থাপ্পড় ঘুষি লাগিয়ে দিল আনজা রাগিবের মুখে। রাগিব কিচ্ছু বুঝতে পারছে না, "ভাই এটা আমার সিম, আপনার কেমনে হয়। আর আমার সিম কেন দিব আমি। আমার পরিবা…" কথা শেষ করতে দেয় না আনজা,"দিবি না মানে" বলে ধস্তাধস্তি লেগে গেল। যার ফলে গাড়ির অবস্থা খারাপ হয়ে গেল। পিয়ুস বাবুর বাজে চালানো তার সাথে বাবনের থ্রেট, আর রাগিব-আনজার ধস্তাধস্তি। এক পর্যায়ে ডান চাকা উঁচুতে ওঠে যায় গাড়ির, তাল হারিয়ে ফেলে পিয়ুস বাবু। সামনে ৮ টা ছেলেকে নিয়ে ব্রিজের সাথে সংঘর্ষ হয়ে ঝোপ বেয়ে গাড়ি ক্ষেতে পরে যায়৷ ব্রিজের সাথে সংঘর্ষে দুটো ছেলে স্পট ডেড হয়ে যায়। গাছের সাথে বারি খেয়ে মারা যায় একটি ছেলে। ভেতরের সবার অবস্থাই খারাপ। পিয়ুস বাবুর মুখে প্রায় ৯ খণ্ড কাচ ঢুকে গিয়েছে। মৃত্যু এসে গিয়েছে তার কাছে। নিজের স্ত্রীর কথা খুব মনে পরছে তার, হয়তো একটু পরেই দেখা হবে দুজনের! অল্প সময়ের মধ্যেই চোখ দুটো বন্ধ হয়ে যায় পিয়ুস বাবুর। বাবনের শরীর ক্ষত বিক্ষত হলেও মারা যায় নি। এদিকে আনজার ঘাড় মটকে গিয়েছে। কিছু একটা বলতে চাচ্ছিল কিন্তু পারল না। হৃদপিণ্ডটা স্থির হয়ে গেল তার। কিন্তু ধস্তাধস্তির সময় রাগিবকে এক প্রকার মুড়িয়ে ফেলেছিল আনজা। রাগিবের গায়ে যে কয়টা আঘাত লাগার কথা ছিল সেগুলো আনজার উপর দিয়ে গিয়েছে। ছেলেটার হায়াত আছে। বেচে গিয়েছে সে এ যাত্রায়৷ বাবন সহ আরো ৩ জন রাগিবকে মারতে ধেয়ে আসছে। রাগিবকে মেরে আনজা কে নিয়ে হাসপাতালে যাবে তারা। কিন্তু না, এখন রাগিব হিংস্র হয়ে ওঠলো। নিমিষেই মেরে ফেলল চারজনকে, হাতের কাছে যা ছিল তা দিয়ে আক্রমণ চালালো সে। নিজেকে বাচাতে মানুষ আসলেই অনেক কিছু করতে পারে। ব্যাগে কাপড় ছিল তার। পুরো গায়ে রক্ত লেগে গেছে। গাল কেটে গেছে, হাত ছিলে গেছে। পায়ের কিছু যায়গা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল৷ হাঁটুতে ভালো ব্যথা পেয়েছে সে৷ মাথায় ঘুরছে একটা বিষয় কাল বাবার কবর যিয়ারত করতে হবে, কাল বাবার জন্য সাদকা করতে হবে। এসব ভাবতে ভাবতে চোখ দিয়ে পানি চলে আসে তার। জীবন কি থেকে কি হয়ে গেল। উঠে দাড়িয়ে অন্ধকারে লক্ষ করে একটা পুকুর। আস্তে আস্তে হেটে সেখানে গিয়ে কাপড় খুলে সম্পূর্ণ শরীর ধুয়ে ফেলে, উঠে যায় সে। এই ঠাণ্ডায় বেশি ক্ষণ থাকলে নিউমোনিয়া হয়ে যাবে। ব্যাগ থেকে ভালো কাপড় পরে নিল সে। আর রক্তাক্ত কাপর এক জায়গায় জড়ো করল। বাবনের পকেটে লাইটার পেল। পুড়িয়ে ফেলল তার কাপড়। ক্ষেতের বাতর দিয়ে একটু দূর গিয়ে গ্রামের বাজারে ঢুকে পরে সে। কোন ভাবে তার বাড়িতেই পৌঁছেই যায়, মাথায় চিন্তা একটাই বাবার কবর যিয়ারত করতে হবে। জীবনে যতটা সম্ভব সৎ থাকার চেষ্টা করেছে সে। আজ তার সততার কারণেই হয়ত সৃষ্টিকর্তা তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন। বাকিগুলো তো অসৎই ছিল। 

 

রাগিব বাড়ি পৌঁছে গেল। তার সাথে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা শুধু সেই ক্ষেত পুকুর আর ব্রিজই জেনে রাখল। তার পরিবারের কাছে তা আজও অজানা হয়ে রইল!

 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ