Skip to content

২৬শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ | বুধবার | ১২ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যার বই অনূদিত হয়েছে বিশ্বের ৩৫ টি ভাষায়

সাহিত্যের জগতে কিছু নাম থাকে যাঁরা নিজেদের লেখনীর মাধ্যমে সময় ও সংস্কৃতিকে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হন। অ্যামি ট্যান তেমনই একজন লেখক। তিনি চীনা অভিবাসী পরিবারের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতির সংঘর্ষ এবং মা-মেয়ের সম্পর্কের সূক্ষ্মতা তুলে ধরেছেন অসাধারণ দক্ষতায়। তাঁর লেখা পাঠকদের হৃদয় জয় করেছে, একইসাথে বিশ্বজুড়ে অনূদিত হয়ে পেয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।

অ্যামি ট্যান ১৯৫২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার অকল্যান্ড শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা-মা ছিলেন চীনা অভিবাসী। তারা আমেরিকায় একটি নতুন জীবন গড়ার স্বপ্ন নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু এই নতুন দেশে অভিবাসী হয়ে বেড়ে ওঠা সহজ ছিল না। পারিবারিক জীবনে নানা উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন অ্যামি ট্যান। মাত্র ১৫ বছর বয়সেই তিনি বাবা ও বড় ভাইকে হারান মস্তিষ্কের টিউমারের কারণে। এর পর তাঁর মা তাঁকে নিয়ে সুইজারল্যান্ডে চলে যান। সেখানে তিনি উচ্চশিক্ষা লাভ করেন।

এই অভিজ্ঞতাগুলোই পরবর্তী সময়ে তাঁর লেখালেখিতে গভীরভাবে প্রভাব ফেলে। মা-মেয়ের জটিল সম্পর্ক, সাংস্কৃতিক পার্থক্য, অভিবাসী জীবনের টানাপোড়েন এসবই তাঁর লেখার মূল উপজীব্য হয়ে ওঠে।

অ্যামি ট্যানের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও আলোচিত বই ‘দ্য জয় লাক ক্লাব’ প্রকাশিত হয় ১৯৮৯ সালে। বইটি চীনা অভিবাসী চার মা ও তাঁদের চার মেয়ের সম্পর্ক নিয়ে রচিত। এখানে মা-মেয়েদের ভিন্ন জীবনদৃষ্টি, অভিজ্ঞতা এবং সাংস্কৃতিক পার্থক্যের সংঘর্ষ অত্যন্ত সংবেদনশীলভাবে উঠে এসেছে। বইটি প্রকাশের পরপরই বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

পরবর্তীতে এটি ৩৫টি ভাষায় অনূদিত হয়। এই বই অবলম্বনে ১৯৯৩ সালে একটি হলিউড চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। শুধুমাত্র নিউইয়র্কেই বইটির ৬ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছিল।

‘দ্য জয় লাক ক্লাব’-এর অসাধারণ সাফল্যের পর অ্যামি ট্যান একই ধরনের বিষয়বস্তু নিয়ে আরও বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন, যেগুলো পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। তাঁর অন্যান্য বিখ্যাত বইগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘দ্য কিচেন গডস ওয়াইফ’ (১৯৯১), ‘দ্য হান্ড্রেড সিক্রেট সেন্সেস’ (১৯৯৫), ‘দ্য বোনসেটারস ডটার’ (২০০১), ‘সেভিং ফিশ ফ্রম ড্রাউনিং’ (২০০৫) এবং ‘দ্য ভ্যালি অব অ্যামাজমেন্ট’ (২০১৩)। এসব বইতেও চীনা-আমেরিকান অভিবাসীদের অভিজ্ঞতা, পারিবারিক সম্পর্ক এবং সাংস্কৃতিক পার্থক্যের বিষয়গুলো গভীরভাবে উঠে এসেছে।

২০২৪ সালে অ্যামি ট্যানের সর্বশেষ বই ‘দ্য ব্যাকইয়ার্ড বার্ড ক্রনিকলস’ প্রকাশিত হয়। এটি তাঁর অনুরাগীদের জন্য এক বিশেষ সংযোজন ছিল।

তাঁর সাহিত্যকর্মকে মূল্যায়ন করতে ক্যালিফোর্নিয়ার ইউনিভার্সিটির ব্যানক্রফট লাইব্রেরি তাঁর ৬২টি ছবি, নোটবুক, চিঠি এবং সাহিত্যিক পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে তাঁর শৈশবের লেখাগুলো থেকে শুরু করে ‘দ্য জয় লাক ক্লাব’-এর খসড়া পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি।

অ্যামি ট্যান তার লেখার মাধ্যমে চীনা অভিবাসী পরিবারগুলোর আশা-আকাঙ্ক্ষা, দুঃখ-কষ্ট এবং সংস্কৃতির জটিলতাকে শব্দের মাধ্যমে জীবন্ত করে তুলেছেন। তাঁর লেখাগুলো কেবল চীন বা আমেরিকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং যে কোনো অভিবাসীর জন্য তা এক অনুপ্রেরণার উৎস। তাঁর বই আমাদের শেখায় সংস্কৃতির পার্থক্য থাকলেও ভালোবাসা, পরিবার এবং আত্মপরিচয়ের গুরুত্ব সর্বজনীন।

অ্যামি ট্যানের সাহিত্য শুধু বিনোদন নয়, বরং তা আমাদের শেখায়, ভাবায় এবং আমাদের নিজেদের শিকড় ও সম্পর্ককে নতুনভাবে দেখতে সাহায্য করে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ