এএসপি মাহমুদা বেগমের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
সমাজ আধুনিক থেকে আধুনিকতর হলেও আমাদের সমাজের অত্যন্ত ভুল একটি ধারণা এখনো রয়ে গেছে। আর সেই ধারণাটি হলো ‘নারীরা শুধু সহজ কিছু কাজই করতে পারে। চ্যালেঞ্জিং কোনো পেশায় নারীরা নিজেদের জায়গা করে নিতে পারে না। সবথেকে ভালো হয়, যদি নারী কেবল সংসারই সামলায়।’
তবে, এসব ধ্যান-ধারণা প্রগতিশীল নারীরা বহু আগে থেকেই ভাঙা শুরু করেছে । এবার কেবল অর্জনের পালা। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীতে নারীদের টিকে থাকা খুব একটা মুখের কথা নয়। তবু, দায়িত্ব সামলাতে ভয় পান না নারীরা। তেমনি একজন নারী মাহমুদা বেগম। বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশ) তিনি। কাজের জন্য পাচ্ছেন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব উইমেন পুলিশ অ্যাওয়ার্ডের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন মাহমুদা।
২৮তম বিসিএসের পুলিশের এই কর্মকর্তা ২০১০ সালে সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসেবে যোগ দেন বাংলাদেশ পুলিশে। পরে প্রশিক্ষণ শেষ শিক্ষানবিশ হিসেবে যোগদান করেন সিলেট জেলা পুলিশে। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ সিএমপিতে দায়িত্ব পালন করেছেন সহকারী কমিশনার সদর ও ট্রাফিক হিসেবে।
সিএমপিতে থাকাকালীন ২০১৩ সালে আমেরিকার ভার্জিনিয়াতে সোয়াত প্রশিক্ষণে অংশ গ্রহণ করা ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম নারী পুলিশ কর্মকর্তা তিনি। সিএমপিতে থাকা অবস্থায় ২০১৬ সালে জাতিসংঘ মিশনে যান মাহমুদা। মিশনে থাকাকালীন একই বছর পদোন্নতি পেয়ে হন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। সেখান থেকে ফিরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে যোগ দেন চট্টগ্রাম রেঞ্জে।
২০১৯-২০ সালের বাংলাদেশ সরকারের দেয়া প্রধানমন্ত্রী স্কলারশিপ (পিএম) পেয়ে অপরাধবিজ্ঞানে (Criminology) স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) অধ্যয়ন করতে ২০২০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটিতে যান মাহমুদা বেগম। এর আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্সসহ মাস্টার্সও সম্পন্ন করেন। দীর্ঘ দেড় বছর অধ্যয়ন শেষে গত ৩১ আগস্ট-২০২১ ইংরেজি তারিখে অপরাধবিজ্ঞানে মেধাতালিকায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন বাংলাদেশ পুলিশের মেধাবী এই কর্মকর্তা। এরপর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদেন রাঙামাটি জেলা পুলিশের। বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশে।
তার চাকরিজীবনে তিনি বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কাজ করে প্রশংসা কুরিয়ে নেন। নিয়মিত বাজার মনিটরিং করে ফরমালিনের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে তার ভূমিকা অস্বীকার করার জো নেই। সিএমপিতে দায়িত্বরত অবস্থায় ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে কাজ করার সুযোগ পান মাহমুদা বেগম। তৎকালীন ১১ বছর বয়সী একজন ভারতীয় শিশু কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের মাধ্যমে বাংলাদেশে চলে আসে। সেই সময় শিশুটি শুধু নিজের দেশের নাম ভারত ছাড়া আর কোনো তথ্য দিতে পারেনি। মাহমুদা বেগম ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের সহায়তায় অসহায় ভারতীয় শিশুটিকে ভারতে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেন। কর্মজীবনে দায়িত্বের সঙ্গে এক চুলও আপস করেননি সাহসী এই নারী। দেশজুড়ে নয় তার কাজের খ্যাতি যে তাকে সমাদৃত করেছে বিশ্বজুড়ে এই সম্মাননা তারই প্রমাণ।
মাহমুদা ছাড়াও এ বছর আরও পাঁচ জন নারী ও একজন পুরুষ এ সম্মাননা পাচ্ছেন। আইএডব্লিউপি অ্যাওয়ার্ড ২০২৩ এর জন্য নির্বাচিতরা হলেন, কমিউনিটি সার্ভিসে ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা বেগম, ব্রেভারি (সাহসিকতা) ক্যাটাগরিতে বেডফোর্ডশার পুলিশের কনস্টেবল পাত্রিজিয়া ভেটেরি , মেন্টরস অ্যান্ড কোচিং ক্যাটাগরিতে জর্জিয়া ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের পুলিশ ইন্সপেক্টর ইভ রোজার , লিডারশিপ ক্যাটাগরিতে ইউক্রেনের পুলিশ মেজর ওলহা ইউসকেভিচ, প্রিভেনশন অ্যান্ড ডিটেকশন অব ভায়োলেন্স এগইনেস্ট ওমেন ক্যাটাগরিতে কেনিয়ার পুলিশ সুপার জিপ্পুরাহ এনদেরিতো , সিভিলিয়ান অব দ্য ইয়ার দুবাই পুলিশের সিভিল এমপ্লয়ি রিম আল মুহাইরি , এক্সিলেন্স ইন পারফরমেন্স ক্যাটাগরিতে অস্ট্রেলিয়ার পুলিশের ডিটেক্টিভ পুলিশ সুপার সিমুন ভান দের স্লয়িস, হি ফর শি ক্যাটাগরিতে ইন্দোনেশিয়া পুলিশের পুলিশ জেনারেল লিস্টঅও সিগিত প্রাভো।
আইএডব্লিউপি আন্তর্জাতিকভাবে পুলিশ নারীদের স্বার্থ রক্ষাসহ মানবাধিকার সুরক্ষিত বিশ্বজুড়ে কাজ করছে। ১৯১৫ সাল থেকে নারী পুলিশ অফিসারের মানোন্নয়ন, শক্তিশালী, ঐক্যবদ্ধ এবং সক্ষমতা বাড়াতে বিশ্বজুড়ে কাজ করছে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ পুলিশ উইমেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৫৬ সাল থেকে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব উইমেন পুলিশ (IAWP) নামে সংস্থাটি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
অনন্যা/জেএজে