ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নারীদের স্বাবলম্বী করতে উদ্যোগ
দেশের বিভিন্ন দুর্যোগ বা সংকটের সময় সমাজের অসহায়-দুস্থ, সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে আসে সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা। নেওয়া হয়, বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ। ব্যক্তিপর্যায়ে উদ্যোগ নিয়েও সহায়তা করা হয় সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের। আবার নারীদের স্বাবলম্বী করার জন্যও রয়েছে নানান উদ্যোগ। কিন্তু ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারীরা বরাবরই অবহেলিত। তাদের স্বাবলম্বী করতে কোনো উদ্যোগ সচরাচর চোখে পড়ে না। তবে ইদানীং সচেতন মহল বিষয়টি ভাবছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারীদের স্বাবলম্বী করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নারীদের মধ্যে ছাগল ও সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়। ৮ আগস্ট দুপুরে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে ২টি ছাগল বিতরণ করা হয়।
তবে তাকে স্বীকৃতি দিতে সরকারের সময় লেগেছে কয়েক দশক। ২০১২ সালে বীরাঙ্গনা হিরামনি সাঁওতালকে মুক্তিযোদ্ধার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয় সরকার৷
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অগ্রদূত বাংলাদেশের আয়োজনে ও স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নারীদের ক্ষমতায়ন প্রকল্পের আওতায় ১৪ জনকে এই ছাগলগুলো তুলে দেওয়া হয়।
দেশের বিভিন্ন খাতে তাদের অবদান থাকলেও তাদের স্বীকৃতি দেয়া হয় খুব।সেখানে তাদের সুবিধার্থে উদ্যোগ নেয়া তো দূরের ব্যাপার। বীরাঙ্গনা হিরামনি, একজন সাঁওতাল নারী৷ এই হিরামনি সাঁওতাল চা শ্রমিকদের মধ্যে প্রথম নারী, যিনি মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নেন৷ পাক হায়েনাদের বর্বর নির্যাতনের শিকার হন৷ তাঁর বীরত্ব গাঁথা সবার জানা৷ তবে তাকে স্বীকৃতি দিতে সরকারের সময় লেগেছে কয়েক দশক। ২০১২ সালে বীরাঙ্গনা হিরামনি সাঁওতালকে মুক্তিযোদ্ধার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয় সরকার৷
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নারীর নিরাপত্তায়ও রয়েছে অনেক ঘাটতি। দেশে যখন কোন নারীই নিরাপদ নয়, সেখানে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারীরা আরও বেশি সহিংসতার শিকার হচ্ছে। মূলত ন্যায় বিচার পাওয়ার আইনি প্রক্রিয়াটাই নারীবান্ধব নয়। ফলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বা প্রান্তিক নারী আরও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। এমনিতেই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা সুবিধার নয়। তার উপর নারীরা আর্থিকভাবে তেমন সচ্ছল না হওয়ার ভোগান্তি যেন বাড়ে আরও কয়েকগুণ।
আর স্বাবলম্বী করার এটি উদ্যোগ চাঁপাইনবাবগঞ্জের এই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নারীদের মধ্যে ছাগল ও সেলাই মেশিন বিতরণ।
যেসব আদিবাসী নারীরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে কিংবা আত্মপরিচয় তৈরির তাগিদে শহরমুখী হচ্ছে, তাদেরও পোহাতে হয় বিভিন্ন ভোগান্তি। শুধু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শতাংশ কোটা দিলেও, তাদের থাকতে হয় আলাদা এক জগৎ তৈরি করে। চাকরির ক্ষেত্রেও আদিবাসী নারীরা সুযোগ সুবিধা পায় কম। তবুও শহরমুখী আদিবাসী নারীরা আত্মপরিচয় তৈরি করে, স্বাবলম্বী হচ্ছেন। বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি সংগঠনের থেকে কিছু সহযোগিতা পাচ্ছেন। কিন্তু প্রান্তিক নারীরা বরাবরই অবহেলিত জীবনযাপন। আর তাদের নিয়ে ভাবার খুব একটা প্রয়োজন মনে করেন না, তথাকথিত সুশীল সমাজ।
বিভিন্ন গবেষণা বলছেন, গত কয়েকবছরে আদিবাসীর সংখ্যা কমেছে, বিলুপ্ত হচ্ছে তাদের সংস্কৃতি। তাই মাঝেমধ্যেই বিতর্কের মুখে টনক নড়ছে সচেতন মহলের। আর চেষ্টা করছেন, তাদের স্বাবলম্বী করার। আর স্বাবলম্বী করার এটি উদ্যোগ চাঁপাইনবাবগঞ্জের এই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নারীদের মধ্যে ছাগল ও সেলাই মেশিন বিতরণ। এ বিষয়টিকে সচেতন মহল দেখছে আশার আলো হিসেবে। তাই এমন উদ্যোগ সরকারি, বেসরকারিভাবে আরও নেয়া উচিত। তাতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারীরা স্বাবলম্বী হতে পারবেন। তাদের যে কষ্ট করতে হচ্ছে তা কিছুটা হলেও লাঘব হবে।
অনন্যা/এসএএস