Skip to content

১৯শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | মঙ্গলবার | ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঋতুর পরিবর্তন মানেই ফ্যাশনে ভিন্নতা

বাংলাদেশ ষড়ঋতু দেশ। এক এক করে সবগুলোই ঋতুই দেখা দিয়ে গিয়েছে। এখন শীত আসি আসি করছে। তবে শীতের আগেই হেমন্তের ছোঁয়া সবাইকে উষ্ণ করে দেয়। শীতের পূর্বাভাস নিয়ে আসে। এই সময়ে প্রকৃতিতে আসে পরিবর্তন। দিনগুলো হয় কিছুটা শীতল, আর রাতের আবহাওয়ায় ঝরে পড়ে শীতের আগমনী বার্তা। হেমন্তের এই রূপ পরিবর্তনের সঙ্গে পোশাকেও আনতে হয় কিছুটা ভিন্নতা। পরিবর্তন আনতে হয় বললে ভুল হবে পরিবেশ প্রকৃতি পরিবর্তন নিয়ে আসে। এই সময় পোশাক-আশাক, স্টাইল নানান ধরনের ফ্যাশন অনুসঙ্গ সবকিছুই একটু অন্যরকম হয়, অন্যান্য ঋতুর তুলনায়।

হেমন্তে দিনের বেলা কিছুটা উষ্ণ হলেও রাতের দিকে ঠাণ্ডা অনুভূত হয়। তাই এ সময় পোশাকে এমন ভারসাম্য রাখতে হয় যাতে উভয় পরিস্থিতিতে আরাম দিয়ে থাকে। হেমন্তের সময়ে লেয়ারের ধারণা ফ্যাশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়ায়, যা প্রয়োজন অনুসারে পোশাক বাড়ানো বা কমানোর সুযোগ দেয়।

হেমন্তকালের পোশাকের ধরন পরিবেশ ও প্রকৃতির সাথে মিলিয়ে যে রকম হওয়া উচিত-

হালকা গরম কাপড়ের ব্যবহার:
হেমন্তের আবহাওয়ার জন্য আদর্শ হলো হালকা গরম কাপড়। মেয়েদের ক্ষেত্রে হেমন্তে লম্বা হাতা বা থ্রি-কোয়ার্টার হাতার পোশাক বেছে নেওয়া যায়, যা শীতের প্রাথমিক আঘাত থেকে সুরক্ষা দেয়। সুতির পাশাপাশি কিছুটা মোটা ফ্যাব্রিক যেমন লিনেন বা রেয়নের ব্যবহার এ সময় উপযুক্ত। লম্বা স্কার্ট বা পালাজ্জো, যা শরীরকে আচ্ছাদিত রাখে, হতে পারে একটি ফ্যাশনেবল এবং আরামদায়ক বিকল্প। এছাড়া, ফুলহাতা কুর্তা বা টিউনিক এই সময় বেশ জনপ্রিয়।

লেয়ারিংয়ের কৌশল:
পোশাকের লেয়ারিং হেমন্তের ফ্যাশনের অন্যতম প্রধান দিক। এতে পোশাকে বিভিন্ন স্তর তৈরি করে আরাম বজায় রাখা যায়। যেমন, একটি স্লিভলেস টপের ওপর কার্ডিগান বা কোট যোগ করা যেতে পারে। হালকা জ্যাকেট, শাল, বা স্কার্ফও সহজেই ব্যবহার করা যায়, যা প্রয়োজনে খুলে ফেলা যায়। লেয়ারিং শুধু ফ্যাশনে নয়, আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে চলতেও সহায়ক।

উজ্জ্বল রঙের পোশাকের ব্যবহার
হেমন্তে প্রকৃতির পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পোশাকে উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার করা যেতে পারে। এ সময়ের জন্য উষ্ণ রঙের কাপড় যেমন গাঢ় লাল, কমলা, সরিষা, বা গাঢ় সবুজ বেশ মানানসই। তবে একইসঙ্গে নিরপেক্ষ রং—সাদা, খাকি, বা হালকা ধূসর—ফ্যাশনে ভারসাম্য এনে দেয়। উজ্জ্বল রঙের সঙ্গে এসব রঙ মিশিয়ে লেয়ারিং করলে পোশাকে একটা বৈচিত্র্য আসে।

শাল ও স্কার্ফের ব্যবহার
হেমন্তকালে শালের ব্যবহার মেয়েদের পোশাকে একটি বহুল জনপ্রিয় অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়। শাল বা স্কার্ফ শুধু শীত প্রতিরোধেই কাজ করে না, এটি ফ্যাশনে একটি আভিজাত্যও নিয়ে আসে। হালকা পশমের শাল বা কটনের রঙিন স্কার্ফ ফ্যাশনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আরামও প্রদান করে।

জুতা ও আনুষঙ্গিক পরিবর্তন:
হেমন্তকালের ফ্যাশনে স্যান্ডেল বা খোলা জুতার পরিবর্তে বুট বা কেডসের দিকে ঝোঁক করা যেতে পারে। লেদার বা স্যুডের মতো কিছু ভারী উপকরণের জুতা পায়ের শীতলতা দূর করতে সহায়ক। এছাড়াও, হেমন্তকালের পোশাকের সঙ্গে মানানসই ব্যাগ, বেল্ট, এবং জুয়েলারির ব্যবহারও ফ্যাশনকে আরও সম্পূর্ণ করে তোলে। হেমন্তের ফ্যাশনে কিছুটা কাঠ বা ধাতব উপকরণের জুয়েলারি ব্যবহার করা যেতে পারে, যা ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার মিশ্রণ এনে দেয়।

ফ্যাশনে নতুনত্ব আনার কিছু টিপস

ফ্যাব্রিকের বৈচিত্র:
হেমন্তে হালকা উলের পোশাক পরা যায়, যা আরামদায়ক হওয়ার পাশাপাশি স্টাইলিশও। নরম ফ্যাব্রিক যেমন মোটা সুতির পোশাক শীতের প্রাথমিক ধাক্কা সামলাতে সাহায্য করে।
সিলুয়েটের ভিন্নতা:
এই সময় ঢিলেঢালা পোশাকের পাশাপাশি কিছুটা ফিটেড পোশাক পরা যেতে পারে, যা লেয়ারিংয়ের সুবিধা দেয়।
প্রিন্ট এবং টেক্সচার:
হেমন্তে ফ্লোরাল প্রিন্টের পাশাপাশি জ্যামিতিক বা ট্রাইবাল প্রিন্টও বেশ জনপ্রিয়। এছাড়া বুননের বিভিন্ন টেক্সচার এবং কারুকাজ পোশাককে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।

হেমন্তকাল আমাদের ফ্যাশনে নতুনত্ব এবং সৃজনশীলতার সুযোগ এনে দেয়। হেমন্তের পোশাকে লেয়ারিং, উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার, এবং আরামদায়ক ফ্যাব্রিকের সংমিশ্রণই হতে পারে আদর্শ। ঋতুর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পোশাকে পরিবর্তন এনে শুধু আরামই নয়, বরং ফ্যাশনে নতুনমাত্রা যোগ করা সম্ভব। হেমন্তের ফ্যাশন তাই হতে পারে আভিজাত্য, আরাম, এবং ঋতুর প্রকৃতিকে আলিঙ্গন করার এক অসাধারণ মাধ্যম।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ