Skip to content

২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | মঙ্গলবার | ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারী শ্লীলতাহানি: দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক

খাদিজা আক্তার

আজও প্রতিনিয়ত নারীরা নানাভাবে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। ঘরে-বাইরে কোথাও এখন নারী নিরাপদ নয়। প্রতিনিয়ত ভয় ও শঙ্কার সঙ্গে নারীকে বাস করতে হয়। কখন কার দ্বারা নারীর ক্ষতি হয়! এই উৎকন্ঠা ও উদ্বেগ নারীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করে। ইদানীং হরহামেশাই দেখা মিলছে ঘরেও নারী নিরাপদ নয়। বাড়িতেই নারী কনস্টেবল আশা রানী দুর্বৃত্তের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া মুক্তি রানী বর্মন, রাবেয়া কেউই নিষ্কৃতি পাচ্ছে না। ঘরে-পথে-যানবাহনে কোথাও নারী নিরাপদ নয়। এমনকি ঘরে ঢুকে নারীর সঙ্গে অসদাচরণ করতেও ক্ষান্ত হচ্ছে না এই শ্রেণি!

গণমাধ্যম বরাত জানা যায়, উপজেলার সোনাকাটা ইউনিয়নের সকিনা এলাকার এক নারীকে বিভিন্ন সময়ে অনৈতিকভাবে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছে এক বখাটে। এতে রাজি না হলে বুধবার ভোরের দিকে ঐ নারীর বাড়িতে গিয়ে একা পেয়ে শ্লীলতাহানি ঘটায়। নারীর চিৎকারে পথচারীরা এগিয়ে আসলে বখাটে জাকির পালিয়ে যায়। এতেও বখাটে জাকির ক্ষান্ত না হয়ে দুপুরে আবারও ঐ নারীর বাড়িতে গিয়ে শ্লীলতাহানি করলে স্থানীয়রা আটক করে পুলিশে খবর দেয়। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত আনোয়ার তুমপা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।

এ সময় জাকির তার দোষ স্বীকার করে। আসামি নিজের দোষ স্বীকার করায় তাকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন।

সম্প্রতি কিশোরী-তরুণী-নারী কেউই এসব বখাটেদের হাত থেকে নিস্তার পাচ্ছে না। এর আগে দশম শ্রেণির ছাত্রী মুক্তি রানী বর্মন স্থানীয় বখাটের প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় স্কুল থেকে ফেরার পথে জনসম্মুখে মুক্তিকে খুন করে! দিন দিন খুন, ধর্ষণ, গুম বেড়েই চলেছে। নারীরা শ্বাস নিতেও ভয় পান। কোথায় ঘাপটি মেরে বসে থাকে এসব অসাধু চক্র, বখাটে-দুর্বৃত্তরা। নারীদের জীবনে এক কালো অমানিশা ভর করেছে!

অভিভাবকবৃন্দ কন্যা সন্তানকে বাইরে দিয়ে প্রতিনিয়ত উদ্বিগ্ন থাকেন, তাদের সন্তান ঠিক মতো বাড়িতে ফিরবে কিনা! পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারী সবসময়ই অনিরাপদ কিন্তু বর্তমানে নারীর জীবনের নিরাপত্তাও হারিয়েছে। এই দুষ্কৃতকারীরা নারীকে জিম্মি করে বিভিন্ন ফায়দা লোটার চেষ্টাও করছে। যখন তা ব্যর্থ হচ্ছে খুন করে গুম করছে। ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, ডিজিটালি যৌন নিপীড়ন কিছুই বাদ নেই! সব বয়সী নারীরাই প্রতিনিয়ত শঙ্কায় কুঁকড়ে যেতে থাকছে। কী এক সময়ে বাস করছি আমরা! যেখানে সমাজের মাঝে বাস করেও নারী হিংস্রতার শিকার!

মানুষ সংঘবদ্ধভাবে বসবাস শুরু করেছিল জন্তুদের হিংস্র আক্রমণ থেকে বাঁচতে, একে অপরের সাহায্য- সহোযোগিতা করার জন্য কিন্তু আজ তা চূড়ান্তভাবে মুখ থুবড়ে পড়ছে। তাহলে তো মানুষের আর সমাজে বাসের দরকার নেই!

নারীর শ্লীলতাহানি সমাজে কোন ভালো নজির নয়! অবক্ষয়ের চিহ্ন মাত্র! দিনে দিনে মানুষের বিবেকবোধ ধ্বংসের পথে। মানবিকতার চরম বিপর্যয় এই ঘটনাগুলো তাই প্রমাণ করে। নারীর সঙ্গে এ ধরনের আচরণে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। নামমাত্র শাস্তি এদের স্পর্ধাকে আরও বাড়িয়ে দেবে। কারণ ক্রোধ, ক্ষোভ। এর আগেও দেখা গেছে, যেই নারীর প্রতি কুদৃষ্টি তাকে না পেলে এইশ্রেণি আরও রূঢ় আচরণ করেছে। জীবন পর্যন্ত শেষ করে দিয়েছে! ফলে এদের শাস্তি এমন হওয়া উচিত যাতে অন্তত নারীর সঙ্গে বাজে আচরণ করার আগে হৃদয়ে কম্পন আসে। নতুবা এদের থেকে নারীদের রক্ষা করা কষ্ট!সমাজ কবে পরিবর্তন হবে? নারীরা কবে মুক্তি পাবে! আইন ও প্রশাসনের কড়া নজর এবং শাস্তি নিশ্চিতকরণ, জনগণের মানবিকবোধের উদয়, অন্যায়কে প্রতিহত করার দীক্ষা, নারীদের সচেতনতা একটি সুন্দর সমাজ উপহার দিতে সক্ষম।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ