Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ছুটির দিনে পুরান ঢাকা

ছুটির দিনে ঢাকা শহরে ঘুরার কথা চিন্তা ভাবনা করাই যায় ছুটির দিন ঢাকা শহর অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশ শান্ত সুন্দর জ্যামহীন থাকে। এছাড়াও একদিন ঘুরাঘুরি করার জন্য ঢাকা শহরে বেশ অনেকগুলো জায়গা রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পুরান ঢাকা। পুরান ঢাকার সে আদিম ঐতিহ্য এখনো পর্যন্ত বেশ অনেক জায়গায় অক্ষত রয়েছে। সারাদিনের ঘোরাঘুরি এবং খাওয়া দাওয়া করার জন্য ঢাকার অন্যতম একটা জায়গা হচ্ছে পুরান ঢাকা। পুরান ঢাকায় ঘোরাঘুরি করার জন্য রয়েছে বেশ অনেকগুলো জনপ্রিয় স্পট। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বলধা গার্ডেন, বিউটি বোর্ডিং, লালবাগ কেল্লা প্রভৃতি।

বলধা গার্ডেন – পুরান ঢাকার ওয়ারীতে, নারিন্দা রোডে অবস্থিত ‘বলধা গার্ডেন’ দুর্লভ প্রজাতির উদ্ভিদে ভরপুর একটি উদ্ভিদ উদ্যান। তৎকালীন ঢাকা জেলা বা, বর্তমান গাজীপুর জেলার বলধার জমিদার নরেন্দ্রনারায়ণ রায় চৌধুরী ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে বলধা গার্ডেনের সূচনা করেন। উনিশ শতকের শেষের দিকে এই গার্ডেনটি  ছিল বলধার সেই জমিদারের বাগানবাড়ি। যা তৎকালীন ঢাকাস্থ উচ্চবিত্তদের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। নিয়মিত সেখানে বসতো গান বাজনার আসর। ধারণা করা হয় বলধা নাম থেকেই বলধা গার্ডেনের নামকরণ হয়েছে। ৩.৩৮ একর জমির উপর নির্মিত এই উদ্যানে রয়েছে মোট ৮০০ প্রজাতির প্রায় ১৮,০০০ উদ্ভিদ আছে।  সীবলী অংশ প্রতিদিন সকাল ৮.০০ থেকে দুপুর ১২.০০টা পর্যন্ত ও বিকাল ২.০০ ঘটিকা হতে ৫.০০ ঘটিকা পর্যন্ত এই উদ্যান দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে।

বলধা গার্ডেন মূলত  ‘সাইকী’ ও ‘সিবলী’ এই দুই অংশে বিভক্ত। সাইকী অংশে রয়েছে বিভিন্ন জাতের শাপলায় ভরা অনেক গুলো শাপলা হাউজ, বিরল প্রজাতির দেশী বিদেশী ক্যাকটাস, অর্কিড, এনথুরিয়াম, ভূজ্জ পত্র গাছ, বিচিত্র বকুল, আমাজান লিলি ও সুরংগ সহ একটি ছায়াতর ঘর।

সিবলী অংশে রয়েছে শংখ নদ, পুকুর, ক্যামেলিয়া, আশোক, আফ্রিকান টিউলিপস। এখানে আরো আছে সূর্যঘড়ি, জয় হাউজ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ এই জয় হাউসে বসে এখানকার ক্যামেলিয়া ফুলের সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়ে লিখেছিলেন তার বিখ্যাত কবিতা “ক্যামেলিয়া”।

বিউটি বোর্ডিং  – পুরান ঢাকার বাংলাবাজারের ১নং শ্রীশদাস লেন -এ অবস্থিত ‘বিউটি বোর্ডিং’, মূলত একটি দ্বিতল ভবন। বোর্ডিং এর কক্ষগুলোর সামনে রয়েছে দীর্ঘ বারান্দা আর পুরো ভবনটির সাথে রয়েছে একটি উন্মুক্ত আঙিনা।  

এই বাড়িটি ছিল নিঃসন্তান জমিদার সুধীর চন্দ্র দাস এর। ভারত বিভাগের পূর্বে এখানে ছিল ‘সোনার বাংলা’ পত্রিকার অফিস। দেশভাগের সময় পত্রিকাটির অফিস কলকাতায় স্থানান্তরিত হয়ে যাওয়ার পর প্রহ্লাদ চন্দ্র সাহা ও নলীনি মোহন সাহা নামক দুই ভাই এই বাড়িটি ভাড়া নিয়ে গড়ে তুলেন বিউটি বোর্ডিং। নলীনি মোহন সাহার বড় মেয়ে বিউটি এর নামে বোর্ডিংটির নামকরণ করা হয় ‘বিউটি বোর্ডিং’। 

এগারো কাঠা জমির উপর স্থাপিত এই বিউটি বোর্ডিং  বাংলার ইতিহাসের ভিত্তিভূমি বলে ধারণা করা হয়। জন্মলগ্ন থেকেই এখানে আড্ডা দিতেন  কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, সাংবাদিক, চিত্রপরিচালক, নৃত্যশিল্পী, গায়ক, অভিনেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। এখানে যারা আড্ডা দিতে আসতেন তাদের মধ্যে  কবি শামসুর রাহমান, রণেশ দাশগুপ্ত, ফজলে লোহানী, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, শিল্পী দেবদাস চক্রবর্তী, সমরজিৎ রায় চৌধুরী, ব্রজেন দাস, হামিদুর রহমান, বিপ্লব দাশ, আবুল হাসান, মহাদেব সাহা প্রমুখ বহুল পরিচিত। 

বিউটি বোর্ডিং- এর সেই মুখর আড্ডা এখন আর আগের মতো না থাকলেও খাবার ঘরে এখনো খদ্দেরের ভিড় লেগেই থাকে। নগরের ভোজনরসিকরা এখানে ছুটে আসেন। আর নিয়মিত খান পুরান ঢাকার বইয়ের মার্কেটের নানা শ্রেণির মানুষ।

ঢাকার বংশাল থানার লালবাগে, বুড়িগঙ্গা তীরে অবস্থিত লালবাগ কেল্লা একটি অসমাপ্ত দূর্গ। এর পূর্ব নাম আওরঙ্গবাদ কেল্লা যা মুঘল স্থাপত্যর অন্যতম নিদর্শন গুলোর একটি। দুর্গটির নির্মান কাজ ১৬৭৮ সালে শুরুহয় এবং আনুমানিক সম্পুর্নকরণ সম্পন্ন হয় ১৬৮৪ সালে। সম্রাট আওরঙ্গজেবের ৩য় পুত্র, মুঘল রাজপুত্র আজম শাহ বাংলার সুবেদার থাকাকালীন ১৬৭৮ সালে এটার নির্মাণকাজ শুরু করেন।  একবছর পর তৎকালীন সুবেদার শায়েস্তা খাঁ’র উদ্যোগে পুনরায় লালবাগ কেল্লার নির্মাণ শুরু হয়। পুনরায় দুর্গের কাজ চলতে থাকে। ১৬৮৪ খ্রিষ্টাব্দে আবারও বন্ধ হয়ে যায় নির্মাণ কাজ। অসমাপ্ত অবস্থায় রাখায় দুর্গটি পরিত্যক্ত হয়। মেয়ে পরীবিবির মৃত্যুর পরই মূলত প্রাসাদ নির্মাণ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেন শায়েস্তা খাঁ। তখন এই দুর্গ নিয়ে বিরূপ ধারণা জন্ম নেয় এবং কেল্লাটিকে অপয়া ভাবা হতে থাকে। ‘লালবাগ কেল্লা’র  অন্যতম আকর্ষণ পরীবিবির সমাধি। এখানে তিনটি বিশাল দরজা আছে। এর মধ্যে বর্তমানে জনসাধারণ কেবল একটি ফটক ব্যবহার করতে পারেন। এখান দিয়ে ঢুকে সোজা তাকালে চোখে পড়ে পরীবিবির মাজার। তার সমাধিসৌধের কেন্দ্রীয় কক্ষের ওপরের গম্বুজ একসময় স্বর্ণখচিত ছিল। কিন্তু এখন আর তা তেমন নেই। তামার পাত দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পুরো গম্বুজ। স্থাপনাটির অভ্যন্তর সাদা মার্বেল পাথরে ঢাকা।১৮৪৪ সালে এলাকাটি “আওরঙ্গবাদ” নাম বদলে “লালবাগ” নাম পায় এবং দুর্গটি পরিণত হয় লালবাগ দুর্গে।

ঘুরাঘুরির পালা শেষ, এবার খাবার-দাবার। পুরান ঢাকার অন্যতম বিশেষত্ব হচ্ছে এই এলাকার খাবার দাবার। অনেক মানুষ পুরান ঢাকায় কেবল ওই এলাকার বিরিয়ানি, লাচ্ছি, বাকরখানি ইত্যাদির স্বাদ নিতে ছুটে আসেন দূর-দূরান্ত থেকে৷ যেসব খাবারের কথা না বললেই নয়,

হাজি বিরিয়ানি: কাঁঠাল পাতায় বিরিয়ানি, আহা সে যেন খাবারের স্বাদে আনে অন্য মাত্রা। পুরান ঢাকার ৭০ কাজী আলাউদ্দিন রোড এর নাজিরা বাজার শাখায় পাওয়া যাবে আসল হাজি বিরিয়ানি৷ ১৯৩৯ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন হাজী মোহাম্মদ হোসেন। বর্তমানে তার তৃতীয় প্রজন্ম এ ব্যবসা করছে। নাজিরাবাজারে ছাড়াও ৪২, বেচারাম দেউরীতে আরও একটি শাখা রয়েছে হাজী বিরিয়ানির।

বিউটি লাচ্ছি: ৬১/১ কাজী আলাউদ্দিন সড়কে পাওয়া যাবে বিখ্যাত বিউটি লাচ্ছি এন্ড ফালুদা নামক দোকানটিকে। তাদের কাছে পাওয়া যাবে মিষ্টি লাচ্ছি, লবণাক্ত লাচ্ছি, ফালুদা ও লেবুর শরবত সহ পাঁচটি খাবার। এর লেবুর শরবত হলো দোকানের সবচেয়ে জনপ্রিয় পণ্য, এটি লেবু, বরফ, চিনি ও লবণ দিয়ে তৈরি করা হয়।

বিসমিল্লাহ কাবাব ঘর: বিসমিল্লাহ কাবাব ঘরে বেশ কয়েকটি পদের খাবার পাওয়া যায়। এর মধ্যে চিকেন চাপ প্রতি পিস ১০০ ও ১১০ টাকা, গরুর বটি কাবাব ১০০ টাকা, গরুর চাপ ৯০ টাকা, খাসির গুদ্দা কাবাব প্রতি হাফ ১৪০ টাকা, খাসির ঘিরি কাবাব হাফ ১৩০ টাকা, মগজ ভুনা ১২০ টাকা, পরাটা ৮ টাকা ও সালাদ ফ্রি পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় চিকেন চাপ।
এছাড়াও পুরান ঢাকার অলিতে গলিতে বিভিন্ন ধরণের খাবারের দেখা পাওয়া যায়। সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় বাকরখানি যা অত্যন্ত সুস্বাদু এবং দামেও সস্তা। তাছাড়াও লালবাগ রয়াল হোটেলের বাদামের শরবত, গ্রান্ড নবাবের কাচ্চি বিরিয়ানি, রথখোলার মোড়ে অবস্থিত বাবুল দাস এর মাঠা, চকবাজারের নূরানির লাচ্ছি ও লেবুর শরবত বহুল জনপ্রিয়।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ