অতিরিক্ত মাইন্ডফুলনেস চর্চা যখন শঙ্কার কারণ
মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন মূলত শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত এমন একটি মেডিটেশন, যা মানসিক চিন্তা ও অস্থিরতাকে দূর করতে সাহায্য করে। এটি এমন এক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে ক্রমাগত গভীর শ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগের মাধ্যমে শারীরিকভাবে স্বস্তি ও অনুভূতি প্রাপ্ত হওয়া। তবে অতিরিক্ত মাইন্ডফুলনেস চর্চা মাঝে মাঝে শঙ্কার কারণ হতে পারে। সম্প্রতি গবেষণা এরকম আশঙ্কাই করেছে।
মাইন্ডফুলনেস চর্চার ফলে মস্তিষ্কের শিথিলতা অর্জন হয়। এর ফলে হৃদপিণ্ডে রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন মূলত জাগতিক সব ধরনের চিন্তা থেকে দূর করে একজন মানুষের একাগ্রতা বাড়ায়। এই মেডিটেশন মানুষের way of thinking বা চিন্তা করার ক্ষমতা বদলে ফেলে। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় মাইন্ডফুলনেস চর্চার ফলে বিজ্ঞানীরা বেশ কিছু সমস্যার কথা বলেছেন। যেমন :
১. অতিরিক্ত মাইন্ডফুলনেস চর্চা হৃদপিণ্ডে রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দেয়। সেক্ষেত্রে হৃদপিণ্ড অধিক রক্ত পাম্প করে, যার ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায়।
২. আরেক দল মেডিটেটরদের মাঝে ভিন্ন কিছুর নিদর্শন মিলেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মেডিটেশন মস্তিষ্কের ডরসোল্যাটেরাল প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সের কার্যক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে যেটি আবার মস্তিষ্কের লিম্বিক সিস্টেম এবং অ্যামিগডালাকে প্রভাবিত করে। মানুষের আবেগ-অনুভূতিকে প্রক্রিয়াজাত করতে অ্যামিগডালা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সঠিক উপায়ে এবং পরিমিত পরিমাণে মেডিটেশন লিম্বিক সিস্টেমের ওপর ডরসোল্যাটেরাল প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সের নিয়ন্ত্রণকে ভারসাম্যে রাখে। ফলাফল হিসেবে মানুষের মনোযোগ বৃদ্ধি পায় এবং আবেগের প্রতি তার প্রতিক্রিয়াকে সে সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সীমা অতিক্রম করে গেলেই অ্যামিগডালার এই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যায় যার কারণে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক সকল অনুভূতিই সম্পূর্ণভাবে এলোমেলো হয়ে যায়। তখন এসব মেডিটেটররা কোনো চূড়ান্ত অনুভূতির মধ্য দিয়ে যেতে পারে না। কোনো কিছুই তাদের বিচলিত করে না। না তারা অত্যন্ত খুশি হয় কোনো কিছুতে, না তারা মারাত্মকভাবে বিমর্ষ হয়ে যায় কোনো পরিস্থিতিতে।
৩. ২০১৯ সালে নিয়মিত মেডিটেটরদের মাঝে একটি সমীক্ষা চালানো হয়। একাধিক মহাদেশ থেকে ১৩২২ জন স্বেচ্ছাসেবী এই সমীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। অংশগ্রহণকারীদের মাঝে ২৫.৬% অর্থাৎ ৩১৫ জন উল্লেখ করেন যে, মেডিটেশনকালে অথবা মেডিটেশন পরবর্তী সময়ে তারা নেতিবাচক বিভিন্ন অনুভূতির সম্মুখীন হয়েছেন। এবং তারা প্রত্যেকে এই ধারণাও পোষণ করেছেন যে, অনুভূত নানা ধরনের নেতিবাচক আবেগ-অনুভূতির উৎস মূলত মেডিটেশন। অংশগ্রহণকারীদের প্রায় অর্ধেকই (৫৩.৬%, ৬০০ জন) ছিলেন নারী, অধিকাংশই নিজেদের (৬১.৪%, ৭৫৬ জন) ধার্মিক বলে উল্লেখ করেছেন, এবং অধিকাংশেরই (৭৩.০%, ৮৯৯ জন) অন্তত বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় পর্যন্ত পড়াশোনা সম্পন্ন হয়েছিল। অংশগ্রহণকারীদের মাঝে ৩১৫ জনের উল্লেখকৃত নেতিবাচক অনুভূতিগুলোর মাঝে ছিল দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, অস্থিরতা, নেতিবাচক চিন্তা, ভয় ইত্যাদি।
৪. ঘুম আনার ক্ষেত্রে মেডিটেশন কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাহায্য করলেও বিপরীত ঘটনারও প্রমাণ মিলেছে সম্প্রতি। একটি মাইন্ডফুলনেস কোর্স প্রস্তুত করা হয়েছিল যার ব্যপ্তি ছিল ৮ সপ্তাহ। ৮ সপ্তাহব্যাপী এই কোর্সে প্রতি সপ্তাহে ৫ দিনের প্রতিদিন যারা অন্তত ৩০ মিনিটের জন্য মেডিটেশন করেছিলেন তারা সকলেই ঘুমের সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। অন্যদিকে একই কোর্সে যারা তুলনামূলকভাবে কম সময়ের জন্য মেডিটেশন করেছিলেন তাদের ঘুমের সময় এবং মান উভয়ই ছিল ইতিবাচক। মনোযোগ বৃদ্ধিকারী বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য, যেমন- ক্যাফেইন, কোকেইন, এবং রিট্যালিন মূলত মস্তিষ্ককে সজাগ রাখে কিছু সময়ের জন্য। এসবের প্রভাবে মানুষের মস্তিষ্ক একটি নির্দিষ্ট সময়, যতক্ষণ ওষুধ বা রাসায়নিক দ্রব্যের কার্যকারিতা বজায় থাকে, তখন পর্যন্ত অত্যধিক পরিমাণে সতর্ক এবং মনোযোগী হয়ে ওঠে।
অতিরিক্ত দুশ্চিন্তাগ্রস্তদের সাময়িক সুস্থতার জন্য মেডিটেশন বর্তমানে এক আশির্বাদস্বরূপ। কিন্তু অতিরিক্ত মাইন্ডফুলনেস চর্চা হিতে বিপরীত করতে পারে৷ সুতরাং মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন শরীরের জন্য কতটুকু ভালো প্রভাব ফেলবে তা প্রকৃতপক্ষেই গবেষণার বিষয়।