রোমাঞ্চকর হামহাম জলপ্রপাত
পৃথিবীর সৃষ্টি কত অনন্য ও রোমাঞ্চময় তা হামহাম জলপ্রপাতে না গেলে বোঝা যাবে না। প্রকৃতির মাঝেই যে এত সৌন্দর্য লুকিয়ে থাকে তা কল্পনারও বাইরে। শুধু ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য নয় প্রকৃতিকে উপভোগ করার জন্য হলেও এই অনন্য জলপ্রাতে যাওয়া উচিত।
হামহাম জলপ্রপাতকে চিতা ঝর্ণাও বলা হয়। হামহাম জলপ্রপাতে যাওয়ার মূল সময় হলো বর্ষাকাল। ঝরণার যৌবন হলো বর্ষাকাল। বর্ষাকালে প্রচণ্ড ব্যাপ্তিতে জলধারা গড়িয়ে পড়ে। আর তখনই দেখা যায় প্রকৃতির আসল সৌন্দর্য। বর্ষার পরে শরৎ শরতের পর হেমন্ত এবং শীতকালে এর সৌন্দর্য অনেক অংশেই কমে যায়। তাই এখানে যাওয়ার মূল সময় বর্ষাকাল।
হাম হাম যাওয়ার পথ এবং হাম হাম সংলগ্ন রাজকান্দি বনাঞ্চলে রয়েছে সারি সারি কলাগাছ, জারুল, চিকরাশি কদম গাছ। এর ফাঁকে ফাঁকে উড়তে থাকে রঙ-বেরঙের প্রজাপতি। ডুমুর গাছের শাখা আর বেত বাগানে দেখা মিলবে অসংখ্য চশমাপরা হনুমানের। এছাড়া, রয়েছে ডলু, মুলি, মির্তিঙ্গা, কালি ইত্যাদি বিচিত্র নামের বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ।
ঝরণাটির নামকরণ সম্পর্কে তাই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অভিমত রয়েছে। অনেকেই ঝরণার সঙ্গে গোসলের সম্পর্ক করে “হাম্মাম” বা গোসলখানা শব্দটি থেকে “হাম হাম” হয়েছে বলে মত প্রকাশ করেন। আবার সিলেটি উপভাষায় ‘আ-ম আ-ম’ বলে বোঝানো হয় পানির তীব্র শব্দ, আর ঝরণা যেহেতু সেরকমই শব্দ করে, তাই সেখান থেকেই শহুরে পর্যটকদের ভাষান্তরে তা ‘হাম হাম’ হিসেবে প্রসিদ্ধি পায়।
হাম হাম জলপ্রপাতের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য
চারিদিকে এক শিতল শান্ত পরিবেশ। ডানে বামে কোনোদিক থেকেই আপনার চোখ ফেরাতে ইচ্ছে করবে না। মনে হবে অনন্তকাল দুচোখ ভরে দেখে নেই প্রকৃতির এই অপূর্ব সৃষ্টি। এই অদ্ভুত এক রোমাঞ্চকর পরিবেশ। চারদিকে গহীন জঙ্গল, ওপরে আকাশ, পায়ের নিচে বয়ে যাওয়া ঝির ঝির স্বচ্ছ পানির ধারা আর সামনে বহমান অপরূপ ঝর্ণা।
আয়নার মতো স্বচ্ছ পানি পাহাড়ের শরীর বেয়ে আছড়ে পড়ছে বড় বড় পাথরের গায়ে। গুঁড়ি গুঁড়ি জলকনা আকাশের দিকে উড়ে গিয়ে তৈরি করছে কুয়াশার আভা। বুনোপাহাড়ের ১৫০ ফুট ওপর হতে গড়িয়ে পড়া স্রোতধারা কলকল শব্দ করে এগিয়ে যাচ্ছে পাথরের পর পাথর কেটে সামনের দিকে তার গন্তব্যে। চারিপাশ গাছ গাছালি আর নাম না জানা হাজারো প্রজাতির লতাগুল্মে আচ্ছাদিত হয়ে আছে পাহাড়ি শরীর। স্রোতধারা সে লতাগুল্মকে ভেদ করে গড়িয়ে পড়ছে ভূমিতে।
যাওয়ার উপায়
শ্রীমঙ্গল থেকে হামহাম জলপ্রপাতে যাওয়া অনেক সুবিধাজনক চাইলে শ্রীমঙ্গল ভ্রমণ শেষ করে হামহাম জলপ্রপাত ঘুরে আসা যায়।
কমলাপুর বা বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশন হতে জয়ন্তিকা বা উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনে করে প্রথমে শ্রীমঙ্গল আসা যায় । শ্রেণিভেদে ভাড়া ২৪০-৫৫২ টাকা। ট্রেনে শ্রীমঙ্গল যেতে সময় লাগে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা।
আর বাসে করে ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল যেতে ফকিরাপুল অথবা সায়দাবাদ থেকে ৪৭০ থেকে ৬০০ টাকা ভাড়ায় হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী, সিলেট এক্সপ্রেস, এনা ইত্যাদি এসি ও নন এসি বাস পাওয়া যায়। বাসে করে শ্রীমঙ্গল যেতে সময় লাগে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা।
শ্রীমঙ্গল থেকে কলাবন পাড়া আপ ডাউন সিএনজি ভাড়া ১০০০-১২০০ টাকার মতো লাগবে, এক গাড়িতে ৩-৫ যেতে পারবেন। এছাড়া যাওয়ার জন্যে আছে জীপ গাড়ি। কলাবন পাড়া পৌছে ২০০/৩০০ টাকার মধ্যে একজন ভাল গাইড ঠিক করে নিন। কলাবন পাড়া থেকে হামহাম যেতে ২-৩ ঘন্টা লাগবে। ভ্রমণ সঙ্গীর প্রত্যেকে বাঁশের লাঠি নিতে ভুল করবেন না, আর অবশ্যই জোঁকের কথা মাথায় রাখবেন। কলাবন পাড়া থেকে হামহাম যাবার দুটো ট্রেইল আছে আছে, ঝিরি পথ ও পাহাড়ি পথ। ঝিরি পথে একটু সময় বেশি লাগলেও এই পথের সৌন্দর্য পাহাড়ি পথের চেয়ে অনেক বেশি। তবে বর্ষাকালে ঝিরি পথে অনেক জোঁক থাকে।
কোথায় থাকবেন
হাম হাম ঝর্নার আশেপাশে থাকার মতো ব্যবস্থাই একদমই নেই। তাই খুব সকালে রওনা দিয়ে বিকেলের মধ্যে ফিরে আসাই ভালো। তবে আদিবাসীদের সাথে কথা বলে যদি নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারেন তবে তৈলংবাড়ী কিংবা কলাবন পাড়াতে থাকতে পারেন।
হামহাম ভ্রমণের সতর্কতা
ট্রেকিং এর জন্যে ভালো গ্রীপের জুতো ব্যববার করবেন, বিশেষ করে বর্ষাকালে গেলে।
ব্যাকপ্যাক যত সম্ভব হালকা রাখবেন। সঙ্গে পর্যাপ্ত পানি রাখবেন। ফার্স্ট এইডের জন্যে যা প্রয়োজন সাথে রাখবেন। সময়ের দিকে খেয়াল রাখুন যেন হামহাম থেকে ফিরে আসার পথেই সন্ধ্যা না হয়ে যায়।