যেকোনো সম্মাননা অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে: মৌরি মরিয়ম
বর্তমান সময়ে তরুণ লেখকদের একজন মৌরি মরিয়ম। তার লেখায় মানবিক সম্পর্ক, প্রেম, মান-অভিমান, ভ্রমণ, যাপিত জীবন সমকালের প্রেক্ষাপটে এসব বিষয় মূর্ত হয়ে ওঠে। লেখালেখি নিজের জীবনের একটি অংশ হয়ে গিয়েছে মৌরি মরিয়মের।
মৌরি মরিয়মের জন্ম বরিশালের গৌরনদী উপজেলায়, ১৯৯১ সালের ২৫ মে। মা মনজু বেগম। বাবা প্রয়াত আজিজুল হক। তার জন্ম বরিশালে হলেও ছোটবেলা কেটেছে ঢাকার ধানমন্ডির রায়ের বাজারে। বেড়েও উঠেছেন এই এলাকাতেই। পড়াশুনা করেছেন ধানমন্ডি গার্লস স্কুল, বদরুন্নেসা কলেজ এবং স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি সাংবাদিকতায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
লেখালেখির ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হওয়া নিয়ে মৌরি মরিয়ম বলেন, মানুষের জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রেই অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়, আমারও হয়েছে। আমি যখন প্রথমে বই পাবলিশ করতে চাচ্ছিলাম, তখন কোনো প্রকাশক পাইনি। যেহেতু আমি নতুন ছিলাম, সেহেতু কেউই আমার বই বের করতে চাননি। ১ বছর পরে আমি সুযোগ পেয়েছি। এছাড়া অন্য যে বাধাগুলো সময় ও লাইফের বিভিন্ন বিষয় মেইনটেইন করতে হয়, বিশেষ করে চাকরি ও লেখালেখি একসঙ্গে চালিয়ে যাওয়া কঠিন। সেকারণেই আমি চাকরি ছেড়ে লেখালেখি করছি। এর বাইরে বাকি বাধাগুলোকে আমি বাধা মনে করি না। কারণ সেগুলো আমার চলার পথে সঙ্গী, সেগুলোকে বাধা মনে না করে জীবনের অংশ ভাবাই ভালো। তখন কাজগুলো সহজ হয়ে যায়।
সম্প্রতি ‘ফানুস’ উপন্যাসের জন্য নবীন সাহিত্যশ্রেণিতে ‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার ২০২২’ অর্জন করলেন মৌরি মরিয়ম। এটি তাঁর প্রথম পুরস্কার। পুরস্কার পাওয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছি ফানুস বইটির জন্য। বইটির পেছনের গল্প বলতে গেলে আমি সব গল্প যেভাবে লিখি এটিও সেভাবেই লিখেছি। প্রথমত আমার কাছে কিছু একটা থিম বা ব্লগ কিংবা ভিডিও আসে। সেখান থেকেই পুরো গল্পটি সাজাই। গল্পটি লিখেছি ২০১৭ সালে, পাবলিশড হয় ২০২১ সালে।’
নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে মৌরি মরিয়ম বলেন, ‘পুরস্কার পাওয়ার অনুভূতি অবশ্যই ভালো। যেকোনো সম্মাননাই কাজের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে। এই পুরস্কারটা আমার জন্য আরও বেশি স্পেশাল কারণ এটি হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার। হুমায়ূন আহমেদ আমার মায়ের সবচেয়ে প্রিয় লেখক। যার নামটির প্রতিই আমার অনেক দুর্বলতা। তার নামের সঙ্গে পুরস্কারটি জড়িয়ে তাই এটি আমার কাছে অনেক বেশি স্পেশাল।’
পরবর্তী কাজ সম্পর্কে জানতে চাইলে তরুণ এই লেখক বলেন, ‘আমি উপন্যাস লিখতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। তাছাড়া গল্প, কবিতা, ভ্রমণকাহিনীও লিখি। এগুলো লিখে লিখে জমাচ্ছি। হয়তো এগুলোও কখনো বই আকারে প্রকাশিত হবে। তবে সামনে একটি কবিতার বই আসতে পারে, গল্প সংকলন আসতে পারে। মুক্তিযুদ্ধের ওপর কাজ করার ইচ্ছে আছে। যেমন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস। অনেক কিছু করার প্ল্যান আছে। কতটা কী করতে পারবো, জানি না। যখন করবো, তখন বোঝা যাবে। মানুষের সব প্ল্যান তো আর বাস্তবায়িত হয় না। তবে চেষ্টা আছে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে করবো, গল্পও সাজানো হয়ে গেছে। এখন শুধু সময় নিয়ে লিখবো। এটার জন্য আরও অনেক বিষয়ে পড়তে হবে কারণ হুটহাট করে তো লেখা যায় না।’
লেখালেখিতে নিজের অবস্থান সম্পর্কে বলতে গিয়ে লেখক বলেন, ‘নিজেকে লেখালেখি নিয়ে কোথায় দেখতে চাই সেটা বলতে পারবো না। কারণ সেভাবে বিষয়টা দেখি না। আমি সবসময় চেষ্টা করি আমার আগের লেখা থেকে বর্তমান লেখাকে ভালো করার জন্য। কিন্তু এই লেখালেখি দিয়ে আমাকে কোথাও যেতে হবে ব কিছু একটা করে ফেলতে হবে এরকম কখনো ভাবিনি। নিজের আনন্দের জন্যই লিখতাম। পরবর্তী সময়ে আমার লেখা যে পাঠকরা পড়েন তদের জন্য লিখি। এটি আমি একদমই ভাবি না যে ১০ বছর পরে আমি কী দেখতে চাই। এরকম কিছু আমি দেখতেই চাই না। আমার নিয়তি আমাকে যেদিকে নিয়ে যাবে সেদিকেই যেতে চাই। আমার কাজগুলো আগের থেকে ভালো করতে চাই।’
মৌরি মরিয়মের প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ ‘প্রেমাতাল’। ২০১৮ সালে বাংলা একাডেমির অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয় তাঁর এই উপন্যাস। সংযোগ ঘটে মুদ্রণমাধ্যমের সঙ্গে। তাঁকে সুপরিচিতি এনে দেয় ‘অভিমানিনী’ (২০১৯) উপন্যাসটি। তাঁর প্রকাশিত অন্যান্য গ্রন্থ হচ্ছে তোমায় হৃদ মাঝারে রাখবো, সুখী বিবাহিত ব্যাচেলর, হাওয়াই মিঠাই, ফানুস, মহাযাত্রা (১ম খণ্ড), শিকদার সাহেবের দিনলিপি, দুয়ারে দ্বিধার দেয়াল, মহাযাত্রা (২য় খণ্ড), দেয়াল ভাঙার গান। তাঁর আগামী গ্রন্থ হচ্ছে ‘নাইওরি’। এখানে গ্রামীণ পটভূমিতে বাস্তবের এক আশ্চর্য ঘটনা তিনি তুলে ধরেছেন।