সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য নখের ক্ষতি করছেন না তো?
নখ শুধু সৌন্দর্যের অংশ নয়, এটি আমাদের স্বাস্থ্যেরও প্রতীক। তবে অনেকেই নখের যত্ন নিতে গিয়ে এমন কিছু অভ্যাস গড়ে তোলেন যা ক্ষতির কারণ হতে পারে। সহজেই নখ ভেঙে যাওয়া, পাতলা হয়ে যাওয়া কিংবা রং বদলে যাওয়ার মতো সমস্যা সাধারণ হলেও এগুলো কখনো অবহেলা করা উচিত নয়। এসব সমস্যার পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে, যেমন ভুল প্রসাধনী ব্যবহার, অপুষ্টি, কিংবা শারীরিক অসুস্থতা। চলুন নখ ভঙ্গুর হয়ে যাওয়ার কারণ এবং তা প্রতিরোধের উপায়গুলো জেনে নিই।
নখ ভঙ্গুর হওয়ার সাধারণ কারণ
কৃত্রিম নখ ও নেইলপলিশের ক্ষতিকর প্রভাব
আজকাল কৃত্রিম নখ ব্যবহার অনেক জনপ্রিয় হলেও এতে থাকা রাসায়নিক পদার্থ যেমন ইথাইল মিথাঅ্যাক্রিলেট, নখের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। নেইলপলিশেও নানা ধরনের ক্ষতিকর উপাদান থাকতে পারে যা নখ ভঙ্গুর করে তোলে। বিশেষত যেসব নেইলপলিশ সহজে শুকিয়ে যায় বা রিমুভারের সাহায্যে তুলতে হয় সেগুলো বেশি ক্ষতি করে।
ম্যানিকিউর ও পেডিকিউরের ভুল পদ্ধতি
নিয়মিত ম্যানিকিউর ও পেডিকিউর করলেও অনেকেই বাফার দিয়ে নখ ঘষেন। এতে নখ ধীরে ধীরে পাতলা হয়ে যায় এবং সামান্য আঘাতেই ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
অতিরিক্ত সাবান ও স্যানিটাইজার ব্যবহার
বারবার সাবান, স্যানিটাইজার বা ডিটারজেন্ট ব্যবহারের ফলে নখ শুকিয়ে যায় এবং ভঙ্গুর হয়ে ওঠে। এছাড়া খুব গরম পানির ব্যবহারও নখের ক্ষতি করে।
অপুষ্টি ও শারীরিক অসুস্থতা
দেহে আয়রনের অভাব বা থাইরয়েড হরমোনের তারতম্য নখের ভঙ্গুরতার অন্যতম কারণ। আয়রনসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের অভাবে বিশেষ করে নারীদের নখ দুর্বল হয়ে পড়ে। কিছু ক্ষেত্রে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নখের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে।
বড়সড় আঘাত
বড় আঘাত নখের ভঙ্গুরতার কারণ হতে পারে। পাশাপাশি অনিয়মিতভাবে নখ কাটা বা দাঁত দিয়ে নখ কামড়ানোর অভ্যাসও নখের ক্ষতি করে।
নখের সুরক্ষায় যা করতে হবে
নখের ভঙ্গুরতা প্রতিরোধে সঠিক জীবনযাত্রা এবং যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এখানে কিছু কার্যকর টিপস দেওয়া হলো।
সুষম খাবার গ্রহণ করুন
নখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সুষম খাবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আয়রনসমৃদ্ধ খাবার যেমন কচু শাক, মুরগির মাংস, ডিম এবং পালং শাক নিয়মিত খেতে হবে। আয়রনের শোষণ বাড়াতে ভিটামিন সি–সমৃদ্ধ ফল যেমন লেবু বা কমলা খাওয়া উচিত।
কৃত্রিম নখ ও রাসায়নিক পণ্য এড়িয়ে চলুন
কৃত্রিম নখ এবং রাসায়নিকসমৃদ্ধ নেইলপলিশের ব্যবহার কমিয়ে ফেলুন। যদি নেইলপলিশ ব্যবহার করতেই হয় তাহলে এমন পণ্য বেছে নিন যা সহজে ধুয়ে যায় এবং এতে ক্ষতিকর উপাদান নেই।
নখের আর্দ্রতা বজায় রাখুন
রাতে ঘুমানোর আগে নখে স্বচ্ছ পেট্রোলিয়াম জেলি বা নারকেল তেল ব্যবহার করুন। এটি নখের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং ভঙ্গুরতা রোধ করে।
সাবান ও স্যানিটাইজার ব্যবহারে সচেতনতা
অতিরিক্ত সাবান বা স্যানিটাইজার ব্যবহার করবেন না। নখ ধোয়ার জন্য হালকা কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন।
নিয়মিত নখ পরিষ্কার রাখুন
নখ পরিষ্কার এবং ছোট রাখা উচিত। তবে নখ কাটার সময় খুব বেশি ছোট করবেন না। নখের প্রান্তগুলো গোলাকার রাখতে হবে যাতে ভাঙার আশঙ্কা কমে।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
যদি নখের সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে থাকে এবং কোনো ঘরোয়া পদ্ধতিতে সমাধান না হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। বিশেষত যদি নখের রং বদলে যায় বা ব্যথা হয় তাহলে অবিলম্বে বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন।
সতর্কতা
নখ ভঙ্গুর হওয়ার পাশাপাশি যদি নখের রং হলুদ বা কালচে হয়ে যায় তাহলে এটি কোনো শারীরিক সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। থাইরয়েড, ডায়াবেটিস বা ফাঙ্গাল ইনফেকশনের মতো রোগের কারণে এমন হতে পারে। এ অবস্থায় ঘরোয়া চিকিৎসার ওপর নির্ভর না করে চিকিৎসকের কাছে যান।
নখ শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্যের নয় বরং আমাদের স্বাস্থ্যের প্রতিচ্ছবি। সঠিক যত্ন এবং সচেতনতা দিয়ে নখের সমস্যাগুলো দূর করা সম্ভব। সুষম খাবার খাওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিকর প্রসাধনী এড়িয়ে চলুন এবং নিয়মিত নখের যত্ন নিন। নিজের স্বাস্থ্যের জন্যও এটি অত্যন্ত জরুরি। সুস্থ নখই সুন্দর নখ।