Skip to content

৯ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বৃহস্পতিবার | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রবীণ নারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত হোক

একটি সুস্থ, সুন্দর, স্বাভাবিক পরিবার গঠনে যিনি দিনান্ত পরিশ্রম করেন, তিনি একজন নারী। সন্তানদের মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে তার অবদানের কোন খামতি থাকে না। স্বামী- সংসারের জন্য নিজের জীবনের সর্বোচ্চ সময়টা তারা উৎসর্গ করেন। সন্তান জন্মগ্রহণের পর এমন অনেক নারী আছেন যারা চাকরি ছেড়ে দেন। অনেকক্ষেত্রে বাধ্য হন। কারণ সন্তানকে দেখভালের জন্য ভরসার হাতটা তারা পান না। ফলে ক্যারিয়ার বিসর্জন দিলেও সন্তানের মুখ পানে চেয়ে সব কষ্ট সহ্য করেন। সন্তানকে নিরাপদে রাখেন।

কিন্তু একটা সময় পর এই নারীরাই পরিবারের বোঝা হয়ে যান! সন্তানের কাছে উটকো ঝামেলা হয়ে পড়েন! নারীদের জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় পার করেন নারীর প্রৌঢ় বয়সের পর। নিরাপদ জীবন তখন তাদের কাছে সোনার হরিণের মতো! এখন প্রশ্ন উঠছে, প্রবীণ নারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত হয়েছে কি? না। প্রবীণ বয়স নারীদের জন্য ক্রান্তিকাল! স্বামী-সংসারে তখন তারা কোণঠাসা হয়ে পড়েন। এই বয়সে নারীদের শারীরিক নানা পরিবর্তন ঘটে৷ সেইসঙ্গে অসুস্থতা, অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা, একাকিত্ব দেখা দেয়। অনেক নারী স্বামীকে হারিয়ে সন্তানের কাছে আশ্রয় নেন। কিন্তু সেই সন্তানের কাছ থেকেও তাকে অবহেলিত হতে হয়।

প্রবীণ বয়সে পুরুষদের তুলনায় নারীরা বেশি অসহায় হয়ে পড়েন। সঞ্চিত অর্থের সবটা দিয়ে সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করে তোলেন বাবা-মা। কিন্তু বার্ধক্যকালীন বয়সে তাদের না থাকে শরীরে শক্তি, না থাকে অর্থ। নিজেদের শারীরিক অবনতি ঘটলে চিকিৎসা করার মতো অর্থ জোটে না তাদের। অনেকের শারীরিক সমস্যাজনিত কারণে খাবারে অরুচি দেখা দেয়। পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজন হয়। কিন্তু প্রবীণ বয়সে এতটুকু খোঁজ, যত্ন নেওয়ার মানুষের বড়ই অভাব দেখা দেয়। যেই সন্তানদের বড় করতে মা তার সবটা বিসর্জন দেন সেখান থেকে প্রবীণ বয়সে তার কতটুকুই বা তারা পেয়ে থাকেন?

সামজিক জীব হিসেবে মানুষকে টিকে থাকতে প্রতিনিয়ত লড়তে হচ্ছে। অর্থনৈতিক টানাপড়েনের সংসারে অনেকেই প্রবীণ পিতা-মাতার প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করতে পারছেন না। সবাই যে প্রবীণদের এড়িয়ে চলতে চান বা তাদের মাথার ছাদটুকু কেড়ে নেন, এমন নয়। কিন্তু সমাজ, জীবনযাপন পরিস্থিতি দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। একজন ছোট সরকারি চাকরিজীবী বা বেসরকারি নিম্নপদের চাকরিজীবীর বেতন কতটা? সেখান থেকে পরিবারের সবার চাহিদা পূরণ করে অনেকক্ষেত্রে বাড়ির প্রবীণ ব্যক্তিটির প্রতি করছেন চরম অন্যায়! তার যথার্থ দেখভাল করতে পারছেন না অনেকেই। আবার অঅনেকেই বাড়ির মাঝে উটকো ঝামেলা ভেবেও প্রবীণ সদস্যটির প্রতি করছেন অন্যায়! পুরুষের ক্ষেত্রে সবসময় অবিচার কিছুটা কম। কারণ জমি-জমার মালিক পরিবারের প্রবীণ সদস্যটি। ফলে তার প্রতি আচরণ কিছুটা সীমিত থাকলেও যখন বাবা নামক পুরুষটির প্রস্থান ঘটে তখন মায়ের ওপর সন্তানদের স্ট্রীম রুলার চলে। সম্পত্তি করায়ত্ত। সঠিক দায়িত্ব পালনে দেখা দেয় ঘাটতি। নারীটি হয়ে পড়েন একা।

গণপরিবহন থেকে শুরু করে হাসপাতালের বেড পর্যন্ত নিশ্চিত করতে হবে প্রবীণ নারীদের জন্য। তাহলে দিনে দিনে জাতিও সুসভ্য হয়ে উঠবে।

প্রবীণ নারীর মাঝে সব বিসর্জন করেও কিছু না পাওয়ার একটা আক্ষেপ গড়ে ওঠে। সন্তানদের অবহেলা, মুখ ফুটে কথা বলার মতো বিশ্বস্ত মানুষের অভাব সবমিলেয়ে প্রবীণ নারীদের জীবন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খুবই করুণ। সারাজীবন নিজের ভাগের ডিমটুকুও যে না খেয়ে সন্তানকে খাওয়াতে ভালোবাসেন সেই নারীরা একসময় হয়ে যান সন্তানের কাছে বাড়তি মানুষ! ফলে সবদিকের শোষণ শুরু হয় তার সঙ্গেই।

পরিবারের সদস্যদের প্রবীণ নারীর প্রতি সচেতন হতে হবে। শ্রদ্ধাশীল হতে হবে, যত্নবান হতে হবে। জীবনকে বিসর্জন দিয়ে একসময় তারই গড়ে তোলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে। কিন্তু যখন তারা শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন, অর্থনৈতিকভাবে অস্বচ্ছল হয়ে পড়েন তখন পরিবারের সদস্যদেরই তার প্রতি দায়িত্বশীল হতে হবে। প্রবীণরা কখনও বাড়তি বোঝা নয় বরং তারা মাথার ছাদ এই বিশ্বাসটুকু নতুনভাবে গড়ে তুলতে হবে। সামজিক নানা অবক্ষয়ের মূল কারণও প্রবীণদের প্রতি অশ্রদ্ধা৷

তাদের জ্ঞান, অভিজ্ঞতাকে কাজে না লাগানো। পরিবারের সদস্যদের যেমন প্রবীণ নারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে ঠিক তেমনই রাষ্ট্রকেও যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। প্রত্যেক প্রবীণ নাগরিক রাষ্ট্রের সম্পত্তি। সে মতোই তাদের উন্নয়নকল্পে সরকারি বাজেট নির্ধারণ করতে হবে। প্রবীণ নারীদের জন্য বয়স্ক ভাতা নির্ধারণ করতে হবে। সরকারি উদ্যোগে তাদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র উন্মুক্ত থাকতে হবে।

খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারলে প্রবীণ নারীরা জীবন কিছুটা স্বাভাবিক গতিতে চালিয়ে নিতে সক্ষম হবেন। দেশের প্রবীণ নাগরিক হওয়ায় তাদের প্রতি সবার শ্রদ্ধাশীল হওয়া জরুরি। রাষ্ট্রের প্রবীণ নাগরিকদের জন্য সর্বক্ষেত্রেই বিশেষ সুযোগ -সুবিধার আওতায় আনতে হবে। গণপরিবহন থেকে শুরু করে হাসপাতালের বেড পর্যন্ত নিশ্চিত করতে হবে প্রবীণ নারীদের জন্য। তাহলে দিনে দিনে জাতিও সুসভ্য হয়ে উঠবে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ