সকল বাধা পেরিয়ে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিতে আনিলা
আফিয়া কবীর আনিলা একজন সেরিব্রাল পালসি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তি। সেরিব্রাল পালসি বা মস্তিষ্কে পক্ষাঘাতের কারণে জীবনে এ পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি ধাপে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন। তবে দমে যাননি তিনি বা তাঁর পরিবার। এখন আনিলা একজন কর্মজীবী নারী। গত ১ নভেম্বর জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামে (বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি) ভলান্টিয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে যোগ দিয়েছেন।
ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামে তিনি প্রাথমিক অবস্থায় ছয় মাসের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন। অনলাইনে মিটিং করার পর আনিলার কথাগুলো কাউকে লিখে নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়েও আনিলার সঙ্গে সার্বক্ষণিক একজন সহায়তাকারী থাকেন। আনিলা বর্তমানে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে তৃতীয় সেমিস্টারে পড়ছেন।জন্মের পরপরই আনিলার শারীরিক সমস্যার বিষয়টি জানতে পারেন আনিলার বাবা ও মা। সঙ্গী হয় হুইলচেয়ার। আনিলা দুই হাত ও দুই পা দিয়ে কিছু করতে পারেন না। হুইলচেয়ার কেউ টেনে না নিলে তিনি নড়তেও পারেন না। কথা বলতেও অনেক কষ্ট হয়। সব কাজেই আনিলার মা সাহায্য করেন। আনিলার বুদ্ধিমত্তা সব প্রতিবন্ধকতাকে ম্লান করে দিয়েছে। হুইলচেয়ারে জীবনের গণ্ডি আটকে যাওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি আনিলার।
আনিলা তাঁর মতো প্রতিবন্ধকতার শিকার শিশু ও ব্যক্তিদের অধিকার আদায়ে কাজ করতে চেয়েছেন। সম্প্রতি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কোটা সংরক্ষণ ও নিয়ম শিথিল করতে আনিলার একক আবেদন ও প্রচেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এ বিষয়ে দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চিঠি দিয়েছে। আনিলা শিশু বয়স থেকেই সেভ দ্য চিলড্রেনের ন্যাশনাল চিলড্রেন প্যানেলের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে হন গ্লোবাল চিলড্রেন প্যানেলের সদস্য। ২০১১ সালে লন্ডনে এ প্যানেলের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের শিশুদের প্রতিনিধিত্ব করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে নিয়েছেন ‘সুবর্ণ নাগরিক’-এর কার্ড। আন্তর্জাতিক সম্মেলনে মূল বক্তা হিসেবে বক্তব্য দিয়েছেন আনিলা।
আনিলার বাবা আশফাক-উল কবীর চাকরি ছেড়ে মেয়েকে সময় দেওয়ার পাশাপাশি বিশেষ চাহিদা-সম্পন্ন শিশুদের জন্য স্কুল ফর গিফটেড চিলড্রেন ও তরী ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং এ প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। মা মারুফা হোসেন বিশেষ চাহিদা-সম্পন্ন শিশুদের নিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি এই প্রতিষ্ঠান দুটোতে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিশেষ চাহিদা-সম্পন্ন শিশুদের নিয়ে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে সরকারের কাছ থেকে পেয়েছেন বিশেষ সম্মাননা। আর আনিলা তরী ফাউন্ডেশনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বর্তমানে আনিলা পড়াশোনা ও চাকরি দুটোই একসঙ্গে করছেন।