সবসময় শাসন নয়, হতে হবে সন্তানের বন্ধু
সন্তান জন্মের পর শুরু হয় বাবা–মায়ের অভিভাবক অধ্যায়। বাবা–মায়ের নিয়ন্ত্রণের উপর নির্ভর করে ভবিষ্যতে সন্তানের ব্যক্তিত্ব কেমন হবে। সন্তানের সুস্থ ভবিষ্যতের জন্য চাই সুস্থ একটা পরিবেশ। যেটাতে থাকতে হবে শাসন। কিন্তু সন্তানের ভালোর জন্য সবসময়ের শাসন হতে পারে সন্তানের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ।
সন্তানের হাত ধরাটা যেমন জরুরি ঠিক তেমনি হাত ছেড়ে দেয়াতেও আছে সন্তানের মঙ্গল। এতে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটে। শিশুদের নৈতিক শিক্ষা ও ব্যক্তিত্ব গঠনের অন্যতম স্থান হচ্ছে পরিবার। শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। জীবনে বড় হয়ে উঠার প্রতিটি ধাপে তারা অনুকরণ করে। দাম্পত্য জীবনে মনোমালিন্য, কথা–কাটাকাটি হবেই। চেষ্টা করবেন এই সময়টাতে শিশুকে বুঝতে না দেয়া। সন্তানের সামনে ঝগড়া না করা। এক্ষেত্রে বাবা–মায়ের ভূমিকা অপরিসীম। বাবা–মাকে দেখেই তারা বিভিন্ন কাজে আগ্রহী হয়ে উঠে। তবে, বাবা–মায়ের অতিরিক্ত রক্ষণশীল আচরণ সন্তানের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বর্তমান সময়ে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা শিশু–বান্ধব নয়। আমরা শিশুর ওপর চাপিয়ে দিচ্ছি বইয়ের বোঝা। অনেকে অনিচ্ছাকৃত বাধ্য হচ্ছেন শিশুর ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন চাপ। একদিকে বিদ্যালয়ের চাপ, অপরদিকে হাউস টিউটর, কোচিং। হারিয়ে যেতে বসেছে রঙ্গিন শৈশব। এরপর যদি বাবা–মায়ের কড়া শাসনের মুখোমুখি হতে হয় তবে অতলে হারিয়ে যাবে মানসিক বিকাশের স্রোতে। ভবিষ্যতে পরিণত হবে বোঝায়।
বাবা–মায়ের অতিরিক্ত শাসন সন্তানের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। ঠেলে দেয় নৈতিক অবক্ষয়ের দিকে। এসময় বাবা–মাকে ধৈর্যের সঙ্গে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। হতে হবে বন্ধু। প্রতিটি বাবা–মায়ের ১৪ই আগস্ট ওয়েব সিরিজটি দেখা উচিত। এতে তারা বুঝতে পারবেন সন্তানের মানসিক চাপের কুফল। এছাড়াও সন্তানের জন্য প্যারেন্টিং এডুকেশনের সম্পর্কে ধারণা নেয়া উচিত। যেগুলো হাতের নাগালেই রয়েছে ইউটিউবে।
সন্তানের সঙ্গে বন্ধু–সুলভ আচরণ খারাপ কোনো বিষয় নয়। বরং এর মাধ্যমে সন্তানের মনোবল দৃঢ় হয়। বাবা–মা সন্তানের কর্মকাণ্ডকে খুব সহজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। যখন বাবা–মা সন্তানকে কোনো কাজ করতে নিষেধ করেন। তখন সেই কাজের ওপর তার উৎসাহ বহুগুণ বেড়ে যায়। তাই সন্তানকে ভালো ও খারাপ কাজের পার্থক্য বোঝাতে হবে। গড়ে তুলতে হবে আত্মনির্ভরশীল করে। পরিবারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সন্তানের মতামতের গুরুত্ব দেয়া উচিত। এতে তার মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা তৈরি হয়। সন্তানকে ভুল করতে দিতে হবে। ভুল না করলে জীবনের সঠিক অর্থ বোঝা সম্ভব নয়। এছাড়াও যা চাইছে তাই দেয়াটাও ঠিক নয়। কিছুটা অভাবের মধ্যে দিয়ে গেলে তারা মূল্য দিতে শিখবে। সন্তানের ওপর নিজের ইচ্ছাটা চাপিয়ে না দিয়ে আপনার শিশুর ইচ্ছার প্রাধান্য দিতে হবে।
প্রত্যেক বাবা–মায়ের উচিত সন্তানের সাফল্যে খুশি হওয়া। খুব ছোট কাজেই যদি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তবে সে আরও ভালো কাজে উৎসাহিত হবে। মনে রাখবেন ক্লাসে ২০ জন শিক্ষার্থী থাকলে কেউ না কেউতো প্রথম স্থান অধিকার করবেই। বরং আপনার সন্তান যে কাজে ভালো করছে তাকে সেই কাজে উৎসাহিত করুন। পিছিয়ে পরলে শাসন না করে পাশে দাঁড়ান। আর সর্বোপরি সন্তানের ওপর অতিরিক্ত প্রত্যাশা রাখবেন না। সন্তানকে নিয়ে সবসময় ইতিবাচক মনোভাব রাখা প্রয়োজন। আপনার সন্তানের দিকে কখনো সন্দেহের চোখে দেখা ঠিক নয়। সন্তানের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলার পরিবেশ বাবা–মাকেই তৈরি করে নিতে হবে। কোনো বাবা–মাই সন্তানের খারাপ চায় না। শাসন অবশ্যই দরকার কিন্তু করা যাবে না অতিরিক্ত। অনেক সময় বাবা–মায়ের কথা মেনে নিলেও পরবর্তীতে তারা বিদ্রোহী হয়ে উঠে। যার ফলে জড়িয়ে পড়বে অবসাদে। এছাড়াও সম্ভাবনা থাকে মাদকাসক্ত হবার।
আবার করোনাকালে শিশুরা স্কুল বঞ্চিত। শহরের শিশুরা চার–দেয়ালের মাঝে বন্দি। সব শিশুদের জন্য এই সময়টাতে শিশুদের পাশে দাঁড়ানো খুবই জরুরি। এই সময়টাতে শিশুকে বেশি চাপ দেবেন না। তারা একঘেয়ামির মাঝে আছে। যদি আরও চাপ দেয়া হয় তবে হিতে বিপরীত। শিশুকে ভুল করতে দিন। যতোটা সম্ভব নিরাপদ রেখে খোলা আকাশের নিচে নেবার চেষ্টা করুন। তাদের খেলতে দিন। এই সময়টাতে লেখাপড়ায় একটু পিছিয়ে গেলেও দুঃচিন্তাগ্রস্ত হবেন না। কারণ লেখা–পড়ায় পিছিয়ে যাবার থেকে নিশ্চয়ই অবসাদ থেকে মুক্ত থাকা ভালো।