শরতের নীলাম্বরী সাজে
শরতে প্রকৃতির বিচিত্রতায় জীবনকে আরও আনন্দময় ও সতেজ করতে আপনার সাজগোজে চাই ভিন্নতা। আবার মনের মতো সাজের পর বাইরে বেরিয়ে হঠাৎ বৃষ্টির ঝাপটায় যেন পুরোটাই না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। শরতের নীলাম্বরী সাজ নিয়ে এবারের আয়োজন।
শরতের ভোরটা শিশিরের স্নিগ্ধতা আর শীতের আভাস লাগা শিউলী ফুলের সুবাসমাখা বাতাসে কেমন যেন মায়াময় মনে হয়। একটু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদের তপ্ত ছোঁয়ায় শরীরে কেমন জ্বালা ধরিয়ে দেয়। শরতের এই দিনগুলোয় আপনাকে সাজতে হবে হালকা সাজে। আর এজন্য প্রথমেই বেছে নিন হালকা রংগুলো। যেমন ফিকে নীল শাড়িতে জরিপাড় দেওয়া, চাঁপাফুল রং, ধানি রং, সাদা জমিনে বুটিতোলা জামদানি শাড়ি এবং এর সঙ্গে ম্যাচিং ব্লাউজ। ব্লাউজের ছাঁটকাটগুলো যেন শালীনতাপূর্ণ হয় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখবেন। যারা সালোয়ার-কামিজ পরেন তারাও এ রকম হালকা রংগুলোই বেছে নেবেন।
তবে সালোয়ার-কামিজ যথাসম্ভব সুতি হওয়াই ভালো হবে। সাজসজ্জার অন্যতম অংশ হলো চুলবাঁধা। আর চুলবাঁধার সময় আপনার চুলের ধরন এবং বয়সের দিকটা অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। আপনার বয়স যদি বাইশের নিচে হয় তাহলে ল€^া বেণি বাঁধুন। এছাড়া ফ্রেঞ্চ রোল, উঁচুচূড়া খোঁপা কিংবা এম খোঁপা বাঁধতে পারেন। আর বাইশের ওপরে যাদের বয়স তারা বাঁধুন এলোখোঁপা, গোলখোপা কিংবা বিড়াখোঁপা। মনে রাখবেন, হালকা সাজ এবং পোশাকের সঙ্গে ভুলেও জমকালোভাবে চুল বাঁধবেন না।
কারণ এতে বেমানান দেখাবে। খোঁপায় মালা কিংবা চিরুনি না পরে বরং একটা কি দুটো ফুল কিংবা ফুলের কুঁড়ি গুঁজে দেবেন। গোলাপের কলি কিংবা রজনীগন্ধার একটা কি দু’টা ফুল গুঁজে দিলে আরো চমৎকার দেখাবে। হালকা সাজের সঙ্গে কড়া প্রসাধন আপনাকে করে তুলবে সৌন্দর্যহীন। তাই শুধু স্নো, পাউডার, হালকা লিপস্টিক এবং আইব্রো পেন্সিলের ব্যবহারই যথেষ্ট। আপনি যদি কপালে টিপ পরতে ভালোবাসেন তবে তা অবশ্যই পরবেন। এক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মেনে চলা দরকার। যেমন আপনার কপাল যদি ছোট হয়, তাহলে টিপ না পরলেও চলে। আর যদি পরেনও তাহলে ছোট টিপ বেছে নেবেন। আর আপনার কপাল যদি বড় হয়, তাহলে বড়োটিপ অপরিহার্য। টিপটি অবশ্যই শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজের রঙের সঙ্গে ম্যাচিং করেই পরবেন। ম্যাচিং টিপ না পাওয়া গেলে লাল অথবা মেরুন অথবা কালচে লাল টিপ পরবেন। সাজগোজ পরিবর্তন হয় ঋতুভেদে। শরতের হালকা সাজ প্রসাধনের সঙ্গে গহনা হিসেবে বেছে নিন হালকা কোনো গহনা। সোনা, রুপা, মুক্তা, অক্সিডাইজ, মেটাল, কাচ, মাটি, পুঁতি, কাঠ কিংবা যে-কোনো রকমেরই হোক না কেন হাতে প্লেন বালা, গলায় লকেট, কানে দুটো হালকা গহনা কিংবা পাথর বসানো টব কিংবা মুক্তা বসানো দুল পরলেই সুন্দর লাগবে দেখতে। উচ্চতা যাদের বেশি তারা পরবেন নিচু স্যান্ডেল বা স্লিপার। আর উচ্চতা কম হলে অবশ্যই হিলওয়ালা জুতো পরবেন। জুতোর বেলায়ও লক্ষ রাখবেন তা যেন জমকালো পুঁতি অথবা জরি বসানো না হয়। সাজ-পোশাককে জমকালো ভাব বর্জন করে রুচিসম্মত পোশাক পরলেই আপনি হয়ে উঠবেন আকর্ষণীয়।
কিছু টিপস
এখন যেহেতু বাইরে রোদ-বৃষ্টির খেলা, তাই সাজের ক্ষেত্রে উপকরণটি অবশ্যই যেন পানিরোধক হয়। এ সময়ে দিনের বেলা আপনার গাঢ় সাজ যেমন গরমে মানানসই নয়, তেমনি অন্যদের চোখেও তা দৃষ্টিকটু লাগে। এই সময়ে সাজে সব মিলিয়ে স্নিগ্ধভাব থাকা চাই। হালকা মেকআপই তাই ভালো। দিনের বেলায় ফাউন্ডেশন না লাগিয়ে হালকা কোনো ফেস পাউডার লাগিয়ে দেখতে পারেন। এতে ত্বক অনেক বেশি মসৃণ ও সুন্দর দেখাবে। আবার যদি আপনি ফাউন্ডেশন ব্যবহার করতেই চান, ম্যাটিফায়িং ফাউন্ডেশন লাগান। এতে ত্বক কম ঘামবে এবং কম তৈলাক্ত হবে। এর ওপরে প্রয়োজনে পাউডার ব্যবহার করতে পারেন। বিশেষ করে মুখের যেখানে সাধারণত বেশি ঘাম হয়। এবার পোশাকের সঙ্গে মেকআপে মিল রেখে লাইট-ব্রাউন কালারের আইশ্যাডো লাগিয়ে নিলে অনেকবেশি ন্যাচারাল দেখাবে। তবে রাতের বেলায় একটু গাঢ় করেই চোখটা সাজাতে পারেন। সেক্ষেত্রে মেরুন, কফি, সবুজ, নীলচে শেডগুলো ব্যবহার করতে পারেন। এ-সময় অবশ্যই ওয়াটারপ্রুফ মাশকারা এবং পেন্সিল আইলাইনার ব্যবহার করুন।