সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ-২৪আবারও সাফল্যের চূড়ায় লাল-সবুজের পতাকা
২০২২ সালে কাঠমান্ডুতে প্রথমবার সাফ ট্রফি জিতে ইতিহাসের স্বাক্ষী হয় বাংলাদেশ। দুই বছর পর একই ভেন্যুতে স্বাগতিকদের ২-১ গোলে হারিয়ে শিরোপা ধরে রেখেছেন লাল-সবুজের অদম্য মেয়েরা। দেশের ফুটবলে যা নতুন এক ইতিহাস। বড় কোনো শিরোপা জিতে সেটি ধরে রাখার কীর্তি ছেলেরা দেখাতে পারেননি কখনো। সাবিনা খাতুনের নেতৃত্বে পেরেছেন মেয়েরা।
গত ৩০ অক্টোবর (বুধবার) বিকালে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৪-এর ফাইনাল পর্বে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ ও নেপাল। বাংলাদেশের সামনে তখন দ্বিতীয় শিরোপার হাতছানি। অন্যদিকে নেপালের সামনে প্রথম শিরোপা জয়ের।
প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের সঙ্গে পিছিয়ে পড়ে হতাশার ড্র। তখন সেমিফাইনালে ওঠাই বাংলাদেশের জন্য অনিশ্চিত হয়ে ওঠে। কিন্তু ৩-১ গোলে ভারতকে হারিয়ে গ্রুপ সেরা হয়ে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। সেমিফাইনালে ভুটান পাত্তাই পায়নি। ৭-১ গোলের বড় জয় বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয় অনেকটাই। এই রেশেই ফাইনালে নেপালের সব প্রত্যাশা গুঁড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
নেপালের ১৬ হাজার দর্শক আর মাঠের ১১ যোদ্ধার বিপক্ষে খেলা পিটার বাটলারের দল ফাইনাল মঞ্চে হিমালয়ের চূড়ায় ওঠার মিশনে নামে। তবে বাংলাদেশ দল শুরু থেকেই ছিল আক্রমণাত্মক। আর এই আক্রমণ করতে গিয়ে অনেক সময় রক্ষণ এলোমেলো হয়ে যায় বাংলাদেশের। প্রথমার্ধে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে চলা লড়াইয়ে দু’দলই গোল করার সুযোগ পেয়েছে।
মনিকা চাকমা বিরতির পরপরই বক্সের ভেতরে থেকে দারুণ প্লেসিংয়ে যখন বাংলাদেশকে ১-০ গোলে এগিয়ে নেন, দশরথের ভরা গ্যালারিতে নেমে আসে নিস্তব্ধতা। আবারও কী আশাভঙ্গের বেদনায় পুড়তে যাচ্ছে নেপাল! এই হাহাকার ততক্ষণে ছড়িয়ে পড়েছে হিমালয়ের দেশটিতে। কিন্তু ৫৩ মিনিটে নেপালের আক্রমণের অন্যতম প্রাণ আমিশা কার্কি বাংলাদেশের রক্ষণ চিড়ে ভেতরে ঢুকে পড়েন। ঠান্ডা মাথায় গোলরক্ষক রুপনা চাকমার পাশ দিয়ে তার প্লেসিং নিস্তব্ধ গ্যালারিকে আবার জাগিয়ে তোলে। ৮১ মিনিটে ঋতুপর্ণা চাকমার ঝলকে বাংলাদেশের সামনে খুলে যায় আরেকটি ফাইনাল জয়ের পথ। রাঙামাটির মেয়ের শট নেপালের জালে জড়াতেই সেই একই দৃশ্য। গ্যালারিতে আবার নিস্তব্ধতা। তবে বেশিক্ষণ নীরব থাকেনি। ঘরের মেয়েদের উজ্জীবিত করতে আবারও সেই ‘নেপাল, নেপাল’ স্লোগান। কিন্তু কোনো কিছুই দমাতে পারেনি বাংলাদেশকে। নেপালের মাটিতে টানা দ্বিতীয় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে জিতে নিজেদের নতুন উচ্চতায় তুলেছে বাংলাদেশের মেয়েরা।
বাংলাদেশ দলের হয়ে এবারের আসরে খেলেছেন- রুপনা চাকমা, মাসুরা পারভিন, শিউলি আজিম, আফঈদা খন্দকার, শামসুন্নাহার সিনিয়র, মারিয়া মান্দা, মনিকা চাকমা, সাবিনা খাতুন (স্বপ্না রানী), তহুরা খাতুন, ঋতুপর্ণা চাকমা ও শামসুন্নাহার জুনিয়র।
২০২২ সালের ফাইনালে নেপালকে ৩-১ গোলে উড়িয়ে চ্যাম্পিয়নের মুকুট মাথায় তোলে বাংলাদেশ। সেই মুকুট মাথায় নিয়েই দেশে ফিরেছেন সাবিনারা। দেশকে আরেকবার আনন্দে ভাসিয়ে, মাথা উঁচু করে তাঁদের ফেরাটা হবে অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণাও।
দুর্দান্ত এই জয়ে সাবিনা-ঋতুপর্ণাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন নতুন বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। শিরোপাজয়ী বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকে সংবর্ধণা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।