যেসব গ্রামে প্রবেশাধিকার নেই পুরুষের!
গ্রাম মানেই চোখের সামনে ভেসে উঠবে একটি সুন্দর পরিবেশ, যেখানে মিলেমিশে বসবাস করে অনেক পরিবার। থাকেন নারী-পুরুষ, শিশু সবাই। তবে এসব সাধারণ কোনো বৈশিষ্ট্য নেই কিছু গ্রামে। যেখানে বসবাস করে শুধু নারীরা। অনুমতি নেই কোনো পুরুষের প্রবেশেরও। শুনতে আশ্চর্য হলেও এমন কিছু গ্রামও রয়েছে পৃথিবীতে। চলুন তবে আজ যেনে নেওয়া যাক, আশ্চর্যজনক সে গ্রামগুলোর সম্পর্কে।
সামাহা
প্রথমেই বলবো মিশরের সামাহা নামের একটি গ্রামের কথা। এ গ্রামটির অবস্থান দক্ষিণ মিসরের আসওয়ান শহর থেকে ১২০ কি.মি দূরে ইদফো নামক ছোট্ট শহরে। ১৯৯৮ সাল থেকে এই প্রকল্পটি শুরু হয়। গ্রামটিকে মিসর সরকার বরাদ্দ করেছে বৃদ্ধা, বিধবা ও তালাকপ্রাপ্ত নারীদের জন্য। গ্রামে পাখিপালন ও চাষাবাদ করে জীবন ধারণ করেন গ্রামের নারীরা। গ্রামটিতে প্রায় ৩০০ পরিবারে শুধু নারী ও মেয়ে শিশু বসবাস করে। প্রত্যেক নারীর জন্যই রয়েছে একটি করে বাড়ি ও একখণ্ড জমি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রকল্প ও সংগঠনের পক্ষ থেকে তাদের গৃহ-সামগ্রী ও কৃষি উপকরণ ও স্বল্পমেয়াদী ঋণও দেওয়া হয় কৃষিকাজের জন্য।
উমোজা
একই ধরনের আরেকটি গ্রাম হলো ‘উমোজা’। এ গ্রামটি অবস্থিত আফ্রিকার দেশ কেনিয়ায়। প্রায় ৩০ বছর আগে রেবেকা লোলোসোলি নামের এক নারীর হাত ধরে সূচনা হয় এই গ্রামের। শুরু থেকেই নিষিদ্ধ করা হয় পুরুষদের প্রবেশাধিকার। রেবেকা নারীকে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নির্যাতন ও লাঞ্ছনা থেকে বাঁচাতে এই গ্রাম প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বর্তমানে ‘উমোজা উসাউ উইমেন্স ভিলেজ’-এর প্রধান হিসেবে কাজ করছেন। এমন সব অদ্ভুত বৈশিষ্ট্যের জন্য গ্রামটিকে নোম্যান্স ল্যান্ডও বলা হয়।
নোইভা ডো করডেরিয়ো
একই বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন আরও একটি গ্রাম রয়েছে ব্রাজিলে। দক্ষিণ-পূর্ব ব্রাজিলের নোইভা ডো করডেরিয়ো এমন একটি গ্রাম রয়েছে যেখানে শুধু নারীরাই বাস করেন। এই গ্রামটির যাত্রা শুরু হয় ১৮৯১ সালে। এর আগের বছর ১৮৯০ সালে মারিয়া সেনহোরিনা ডে লিমা নামের একটি মেয়েকে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে দেওয়া হয়। তিনি শ্বশুর বাড়ি ছেড়ে এখানে চলে আসেন। এরপর ধীরে ধীরে অনেক নারীই এখানে এসে বসবাস শুরু করেন। যারা একা থাকতে চান কিংবা বিয়ে করতে চান না, তারা এই গ্রামে বাস করেন। তারাও কৃষিকাজ করেই মূলত জীবনধারণ করেন।
জিনওয়ার
যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশ সিরিয়ায়ও রয়েছে এমন একটি গ্রাম। যেখানকার নারীরা কোনোভাবেই নির্ভরশীল নয় পুরুষের ওপর। সিরিয়ার ‘জিনওয়ার’ নামের ওই গ্রামে নারীরা স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করেন। এমনকি নিরাপত্তার জন্যও নারীরা নিজেরাই হাতে তুলে নিয়েছেন অস্ত্র। গ্রামের প্রবেশদ্বারে বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে পড়েন নারীরাই। প্রধানত চাষাবাদ করে আয়-রোজগার করেন তারা। এমনকি নিজের সন্তানদেরও স্বাচ্ছন্দ্যে বড় করছেন গ্রামের নারীরা। তাদের এমন উদ্যোগ প্রশংসা কুড়োচ্ছে বিশ্বজুড়ে।
অনন্যা/জেএজে