নারীকেই নারীর পাশে দাঁড়তে হবে
কথায় আছে, ‘জীবন ফুলশয্যা নয়’। তবে পুরুষের ক্ষেত্রে জীবন যতটা সহজ, নারীর ক্ষেত্রে ততটা নয়। নারীকে প্রতিনিয়ত কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয় । সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নারীর জীবনকে চালিয়ে নিতে হচ্ছে কিন্তু সে পথেও অনেক বাধা। নারীর জীবন যে শুধু পুরুষ সমাজই জটিলতা সৃষ্টিকারী এমনটা নয়; বরং নারীরাও সম্পৃক্ত আছে। এক শ্রেণির নারীরা, নারীকে নিচে নামার প্রতিযোগিতায় নেমেছে! ফলে নারী জাতি এখন কঠিন বাধার মুখে পড়ছে। জীবন চলার পথে এই প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হলে নারীকেই- নারীর অন্যতম সঙ্গী হতে হবে।
নারীর জীবনকে অন্যজন নারীই প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে। অপমান-অপদস্থ করেছে। যে বা যারা নারীর সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটাতে দ্বিধা করেন না তারা মানবিক-বিবেকসম্পন্ন কতটা তা প্রশ্নবিদ্ধ। কেন নারী বিদ্বেষ পরায়ণ মনোভাব পোষণ করবে স্বজাতির প্রতি। কেন একজন নারী অন্যনারীকে হেনস্তা করতে উদ্যোত হন! বিষয়টা গভীরভাবে ভেবে দেখা উচিত। তবে নারীর এই কাজের পেছনে মদদ দেয় একশ্রেণীর উশৃঙ্খল মনোবৃত্তির মানুষ। সেখানে পুরুষ-নারী উভয়ই আছে। নারী- নারীর শত্রু নয় বরং মনোশক্তি হয়ে পাশে থাকুক।
একজন ব্যক্তি কী পরিধান করবে এটা তার নিজস্ব রুচি-অভিরুচির ব্যাপার। সেখানে অন্য কোনো ব্যক্তিরই হস্তক্ষেপ করার প্রশ্নই আসে না। কিছু নারীই নারীর পোশাক, জীবনযাপন নিয়ে কথা বলেন। বাজে মন্তব্য করেন। এতে পুরুষ সমাজ আরও বিগলিত হয়। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা তাদের এ পথে চালিত করছে। অনেকেই নারীর পোশাককে ঘিরে অশালীন, অশ্লীল, বাজে ভাষায় মন্তব্য করেন। এতে ভুক্তভোগী নারী নিজেই নয় বরং সমগ্র নারী জাতির অপমানিত হন।
প্রত্যেকের রুচি ও জীবনাচরণ আলাদা। সেখানে ভিন্ন মত থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। বাবার পাঁচ পুত্র যেমন এক নয়, সেটা চরিত্র বা চেহারায় ঠিক, তেমনি একজনের জীবনযাপন অন্যের মত-পথের সঙ্গে মিল না-ও থাকতে পারে। তাতে কি হাঙ্গামা করা উচিত! বরং যদি না পছন্দ হয়, তবে নীরবে সেখান থেকে সরে যাওয়া উচিত।
পুরুষ সর্বদাই নারীকে পেছনের সারিতে রাখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। যেন নারীরা তাদের টপকে সামনের দিকে অগ্রসর হতে না পারে। যত রকম বাধার দেয়াল নারীর জন্য সৃষ্টি করা যায়, তার সবকটা করে পরিবার-সমাজ। আর সমাজের মূল হোতা পুরুষ। তাই পুরুষের রুচি অনুযায়ী নারীকে পথ চলতে হয়। কিন্তু মানুষ তার আপন সত্তাকে বিশ্বাস করে। সেভাবে নিজেকে সাজাতে চেষ্টা করে। তবে নারীর জীবন কেন নারীর নয়?
অন্য একজন পুরুষ বা নারী কেন নারীর চলার পথের বাধা হবে? এক্ষেত্রে একজন নারী অন্য নারীর কখনোই মঙ্গলকামনা করতে পারে না, এমনটাই সমাজের সবারই ধারণা। তবে এ ধারণা যে মিথ্যা নয়, সেটা পরিবার-সমাজে -কর্মস্থলে প্রতিটি জায়গায় পরিলক্ষিত হয়। একজন ছেলে ও একজন মেয়ের মধ্যে যতটা স্বচ্ছ বন্ধুত্ব হয়, একজন নারীর সঙ্গে অন্য নারীর ততটা হয় না। কারণ নারীর মধ্যে উদারতার অভাব রয়েছে এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
আবার দুজন মেয়ে যদি রুম শেয়ার করে থাকে, সেখানেই দ্বন্দ্ব অনিবার্য। একজন অন্যজনকে সহ্য করতে পারে না বিভিন্ন কারণে। পুরুষের ক্ষেত্রে এমনটা খুব কম দেখা যায়। কারণ তারা এদিকে একটু উদাসীন-উদার। নিজেকে প্রাধান্য দিলেও , বাকিটা নিয়ে ভাবে না। নারীরা পুরোটা নিজের মতো করে পেতে চাওয়ার কারণে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়।
এ তো গেলো খুব ক্ষুদ্র পরিসরের কিছু কথা। নারীই যে নারীকে এগিয়ে দেবে, সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব রাখবে, তা না করে সমস্যার সৃষ্টি করে। শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পর প্রধান সমস্যা বাধে বউ-শাশুড়ির মধ্যে। নারীই কিন্তু সেখানে নারীর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে। একজন শাশুড়ি ও একজন বউমা যদি দুজনে একে অন্যের সহযোগী হতো, তবে নিশ্চয় এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা শোনা যেতো না।
কর্মক্ষেত্রেও নারীরাই নারীদের নিয়ে কটু মন্তব্য করে। কেউ একজন ভালো পারফরম্যান্সের ফলে পদোন্নতি পেলে বা সুনাম কুড়ালে, সেখানে ইস্যু তৈরি করা নারীদের মানসিক প্রবৃত্তি হয়ে গেছে। কিন্তু এমন পরিস্থিতি আর কতকাল চলবে। এই পরিস্থিতির পরিবর্তন প্রয়োজন।
পথে- ঘাটে, গণপরিবহনে নারীদের নিজেদের সম্মানটা নিজেদের বাড়াতে হবে। একজন নারী অন্য নারীর রুচি-ইচ্ছেকে মর্যাদা দিতে হবে। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘বিচার বাইরে থেকে করা যায় না বরং বিচার করতে হলে সমস্যার গভীরে ঢুকতে হয়।’ তেমনি অন্যকে সম্মান করলে তবেই সমান আশা করা যায়। নিজের অবস্থান উন্নত করতে হলে আগে নিজেই ওই পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে হবে। নারীদের এই ছোট্ট কিছু কথা মাথায় ঢুকিয়ে না নিলে তারা মুক্তি পাবে না।
পুরুষ তো শোষণ করেই, সেখানে নারীরাও যদি তাদের সঙ্গে হাত মেলায়, তবে তালি তো বাজবেই! নারীদের জীবনও ততটাই সংকটে পড়বে। তাই এখনই সময় নারীই নারীর শত্রু না হয়ে বরং সহযোগী-বন্ধু হয়ে উঠুক। নারীর পাশে নারীই মানসিক শক্তি যোগাতে সাহায্য করুক। তবেই ধীরে ধীরে নারী-জীবনের সব সংকট-দুর্দশার অবসান ঘটবে।