Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রতিবন্ধী কিশোরী অপহৃত: মানবিক সমাজ কোথায়

আমাদের সমাজে মেয়েরা নিরাপদ নয়। মেয়েদের নিরাপত্তা এ সমাজে এত অকল্পনীয় হয়েছে যে, অভিভাবকরাও মেয়ে সন্তানকে নিয়ে বেশ চিন্তিত। কন্যাসন্তান জন্ম নেওয়ার পরই তাকে গড়ে তোলা নিয়ে বাবা-মায়ের ভাবনার শেষ থাকে না তার ওপর যুক্ত হয়েছে এ সমাজে নারীদের অনিরাপদ জীবন!

এ সমাজের বিবেক-মনুষ্যত্ব এতটা তলানিতে ঠেকেছে যে, মেয়েরা পুরুষতন্ত্রের আক্রোশ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। এ সমাজের একশ্রেণির বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ নামের পশুর হাত থেকে রক্ষা মিলছে না শিশুকন্যা থেকে শুরু করে প্রতিবন্ধী কিশোরী পর্যন্ত। সমাজের কতটা অধঃপতন হলে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। একজন প্রতিবন্ধী কিশোরী সে কী বোঝে বা তার শক্তি কতটা যে এসব অপোগণ্ডদের থেকে মুক্তি পাবে! এ ধরনের ঘটনা ক্ষয়িষ্ণু সমাজের চিত্র উপস্থাপন করে। শিশুকন্যা থেকে সবশ্রেণির মেয়েদের জীবন সম্পর্কে আতঙ্কগ্রস্ত করে তোলে! দিনে দিনে কতটা বিবেকহীন হয়ে উঠেছে এ জাতি। একজন প্রতিবন্ধী কিশোরীও এদের হিংস্রতার হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। মেয়ে হলেই তার ওপর আক্রোশ আছড়ে পড়ছে!

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ মতে, গত ৪ মে বিকেল সাড়ে ৩ টায় কিশোরী কোচিং সেন্টারে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়। সময়মতো বাসায় ফিরে না আসায় ভিকটিমের পিতা সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজ করেন। খোঁজার একপর্যায়ে ভিকটিমের পিতা লোক মারফতে জানতে পারেন, ঢাকা মহানগরীর কদমতলী থানাধীন শ্যামপুর এলাকা হতে নাঈম এবং অন্যান্য সহযোগীরা ভিকটিমকে জোরপূর্বক একটি সিএনজি অটোরিকশা যোগে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। সর্বশেষ ভিকটিমকে নিয়ে অপহরণকারীরা চট্টগ্রামে অবস্থান করছে বলে জানতে পারেন।

গত ৯ মে ভোলা লালমোহনের মো. শহিদুল ইসলাম থানায় অভিযোগ করেন, তার মেয়ে লামিয়া আক্তারকে বিভিন্ন কথা বলে, মো. নাঈম নামে এক যুবক প্রেমের প্রস্তাব দেয়। তার মেয়ে প্রস্তাবে রাজি না হলে নাঈম তার মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে যাবে বলে জানায়। উল্লেখ্য, ভিকটিমের পিতা-মাতা এবং আত্মীয়-স্বজনদের ভাষ্য মতে, অপহৃত কিশোরী বুদ্ধি প্রতিবন্ধী।

১৬ মে সন্ধ্যায় ঢাকার কদমতলী থেকে অপহৃত ১৩ বছরের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী কিশোরীকে উদ্ধার এবং ২ অপহরণকারীকে চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার করছে র‌্যাব-৭ চট্টগ্রাম। নগরীর ইপিজেড থানাধীন বাহাদুর কলোনি থেকে গতকাল সন্ধ্যায় র‌্যাব এ উদ্ধার অভিযান চালায়।

ঘটনাটি বিশ্লেষণ করলে এই দাঁড়ায় যে, একজন প্রতিবন্ধী কিশোরীও এ সমাজে নিরাপদ নয়। মাত্র ১৩ বছরের কিশোরীও পুরুষতান্ত্রিক সমাজের হিংস্রতার শিকার। বিকৃত মানসিকতা এ সমাজে এতটা ছড়িয়ে পড়েছে যে, যার হিংস্রতা থেকে শিশু কন্যা থেকে বৃদ্ধা সব বয়সী এবং সমশ্রেণির নারীই পুরুষের জঘন্য মানসিকতার শিকার।

মূলত এ সমাজে কন্যা শিশু জন্ম থেকেই বৈষম্য- হিংস্রতার শিকার। তবে এই হিংস্রতাও কখনও কখনও মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। মানুষ নামের মানুষগুলো তাদের বিবেক খুইয়ে নারীকে ভোগ্যপণ্য করে তোলে।
প্রতিবন্ধী হোক বা বৃদ্ধা এমনকি কয়েক মাসের কন্যা শিশুও এ সমাজের চোখে লালসার শিকার হয়েছে। এমন অহরহ ঘটনা এ সমাজে ঘটছে। এত বীভৎসতা সমাজ এবং মানুষের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হতেই শেখাচ্ছে! তবে এর অবসান হওয়া উচিত। নতুবা নারীরা নিজেদের অস্তিত্বও ভুলে যেতে বসবে!

নারীরা তাদের জীবনের সব জায়গাতেই অবহেলিত হয়। যা সমাজ- রাষ্ট্রেও অনেকটা সয়ে গেছে। কারণ নারীর প্রতি অবহেলা- হিংস্রতা পুরুষতন্ত্রের কাছে যেন অনেকটা স্বাভাবিক। ১৩ বছরের একজন প্রতিবন্ধী কিশোরীকে এভাবে অপহরণ বিবেকহীন সমাজকেই চিহ্নিত করে। এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রুখতে হলে নারীদের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। অভিভাবক – শিক্ষালয় সর্বত্র মানবিকবোধের চর্চা করতে হবে। শ্রদ্ধা- সম্মান- বিবেক যতদিন জাগ্রত না হবে ততদিন নারী অনিরাপদ। তাই কন্যা শিশু, নারীরা যাতে নিরাপদ থাকতে পারে সেজন্য এখনই কঠোর অবস্থান নেওয়া জরুরি৷ এলক্ষে সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে। এবং অপরাধীরা যাতে ছাড় না পায় তার কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে । নারীদের নিরাপত্তায় আইনের কঠোর এবং দৃষ্টান্তমূলক প্রয়োগ ছাড়া গত্যন্তর নেই!

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ