গিয়েথুর্ন: রাস্তাবিহীন এক গ্রাম!
কবি বন্দে আলি মিয়া বাংলার অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে লিখেছিলেন, ‘আমাদের ছোট গাঁয়ে ছোট ছোট ঘর/ থাকি সেথা সবে মিলে নাহি কেহ পর/ পাড়ার সকল ছেলে মোরা ভাই ভাই/ এক সাথে খেলি আর পাঠশালা যাই।’ এই লাইনগুলো পড়ার পর যদি আপনাকে প্রশ্ন করা হয় যে, ‘পাড়ার সকল ছেলে পাঠশালায় কিভাবে যায় বলুন তো?’ আপনার উত্তর হতে পারে, রাস্তা দিয়ে হেঁটে হেঁটে, কোনো গাড়িতে কিংবা যেহেতু নদীমাতৃক দেশ নৌকায় চড়েও যেতে পারে। কিন্তু যদি ওই গ্রামটিতে কোনো রাস্তাই না থাকে?
বিস্ময়কর হলেও সত্য, এমন গ্রামও রয়েছে, যেখানে নেই একটিও রাস্তা। তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই, তা আমাদের বাংলার গ্রাম নয়৷ গ্রামটির অবস্থান সুদূর নেদারল্যান্ডসে। সবুজে ঘেরা গ্রামটির নাম গিয়েথুর্ন। এই গ্রামকে ‘নেদারল্যান্ডসের ভেনিস’ও বলা হয়। এটি নেদারল্যান্ডসের ছোট্ট-সুন্দর গ্রাম। সবুজে ঘেরা জাদুকরী এ গ্রামটি পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।
![](https://a.kha.icu/wp-content/uploads/2022/05/2-32-1024x576.jpg)
উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের অন্যতম এক ধনী দেশ নেদারল্যান্ডস। ইউরোপ ভ্রমণকালে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে এই নেদারল্যান্ডস। ১২টি প্রদেশ নিয়ে গঠিত দেশটি। নেদারল্যান্ডসে পর্যটকদের দেখার মতো বহু জায়গা থাকলেও ভিন্নধর্মী হওয়ায় গিয়েথুর্ন গ্রাম যেন একটু বেশিই আকর্ষণীয়৷
এবার গ্রামে রাস্তা না থাকলে মানুষ চলাচল করে কিভাবে, এই প্রশ্নে আসা যাক। এই গ্রামে চলাচলের একমাত্র মাধ্যম হলো জলপথ। গ্রামের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যেতে নৌকা ব্যবহৃত হয়। নেই সড়কপথের ব্যবস্থা। এই গ্রামের প্রায় সবগুলো নৌকাই ইঞ্জিনচালিত। ইঞ্জিনচালিত হলেও, চিন্তার কোনো বিষয় নেই। নৌকাগুলো নীরব ইঞ্জিনচালিত। তাই সারাদিন অনেকগুলো ইঞ্জিনচালিত নৌকা গ্রামের মধ্যে চলতে থাকলেও গ্রামে সবসময় নীরব পরিবেশ বজায় থাকে।
![](https://a.kha.icu/wp-content/uploads/2022/05/4-26-1024x576.jpg)
জানা যায়, ১২৩০ সালে এই কল্পনার মতো গ্রামটির প্রতিষ্ঠা হয়। তখন গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় মাটির নিচে ছোট-বড় ফাঁপা অংশ ছিল। গ্রামে মানুষ বসবাস শুরু করার পর সেগুলো খুঁড়ে বার করতে শুরু করে। দীর্ঘদিন সেগুলো খুঁড়ে বের করার ফলে সেখানে হৃদ তৈরি হয়। এগুলোই একটার সঙ্গে একটা যোগ হয়ে গ্রামে পানিপথ তৈরি হয়েছে।
পুরো গ্রামে ভ্রমণ করতে হয় জলযানে। গ্রামের বিভিন্ন দিক দিয়ে খাল চলে যাওয়ায় গ্রামটি ছোট ছোট দ্বীপে ভাগ হয়ে রয়েছে। আর তাই এগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতে রয়েছে ১৫০টিরও বেশি কাঠের সেতু। এখানে খালের ধারে ধারে রয়েছে নানান ধরনের কটেজ। এই গ্রামটির জনসংখ্যা ২ হাজার ৬০০। ডাচ ফিল্মমেকার বার্ট হান্সট্রা তার কমেডি ফিল্ম ‘ফ্যানফেয়ার’র শুটিং এই গ্রামে করার পর ১৯৫৮ সালে গ্রামটা বিশ্বের পর্যটকদের নজরে আসে।
![](https://a.kha.icu/wp-content/uploads/2022/05/5-27-1024x576.jpg)
এই শহরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি দেখার মতো রয়েছে কিছু জাদুঘর ও সংগ্রহশালা৷ যেখানে রয়েছে রত্ন ও খনিজ পদার্থের নানান সংগ্রহ। এছাড়া রয়েছে গিয়েথুর্নের অতীত ইতিহাসসমৃদ্ধ মিউজিয়াম। শত বছর আগে কেমন ছিল আজকের গিয়েথুর্ন, তা এক ফলকে দেখা যায় সেখানে। এসবের পাশাপাশি গাড়ি, মোটরগাড়ি ও রেলগাড়ির কামরার একটি বড় সংগ্রহশালাও রয়েছে এখানে। যারা ইউরোপ ভ্রমণের কথা ভাবছেন, তারা নেদারল্যান্ডসে গিয়ে রূপকথার মতো এই গ্রাম দেখে আসতে পারেন।
অনন্যা/জেএজে