Skip to content

৫ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ | বুধবার | ২২শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারীর রূপচর্চায় কোটি টাকা: চেতনায় পণ্য, মননে দাসত্ব

নারীর সৌন্দর্য নিয়ে মন্তব্য-কটূক্তি নতুন নয়। যুগ যুগ ধরে সৌন্দর্যই যেন নারীকে টিকিয়ে রেখেছে, এমন ধারণা সমাজ দীর্ঘকাল ধরে পোষণ করে আসছে। ধারণা বললে বরং ভুলই করা হয়, বলা চলে বাস্তবতা। নারীকে গুরুত্ব দেওয়া হয় তার সৌন্দর্যের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে। কার গায়ের রঙ কতটা চাপা, কে কতটা ফর্সা, কে কত লম্বা, কে খাটো নানরকম ভেদ সৃষ্টি করে, তার মূল্যায়ন করা হয়। নারীকে প্রতিনিয়ত বাঁচতে হয় এই রায়ের মধ্যে দিয়ে। কিন্তু নারীর সৌন্দর্য নিয়ে এত বিভেদ সৃষ্টি কেন?

নারীর সৌন্দর্যের মাপকাঠি পুরুষতান্ত্রের ফল। সমাজে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক মানসিকতা বহন করে আসছে অধিকাংশ নারী-পুরুষ। এক্ষেত্রে পুরুষের সহযাত্রী কতিপয় নারীও। লক্ষ করলেই দেখা মিলবে, বেশিরভাগ পরিবারই যখন বিয়ের জন্য পাত্রীর সন্ধানে নামে, তখন তাদের প্রধান চাহিদা থাকে পাত্রীর গায়ের রঙ যেন কোনোভাবেই চাপা না হয়। এরসঙ্গে যুক্ত হয় আরও নানারকম চাহিদা। যেন রূপই নারীর সর্বস্ব।

সামাজিক এই ট্যাবু একদিনে পাল্টানো সম্ভব নয়। তবে এক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে নারীদেরই। কারণ সমস্যা যেই শ্রেণির, তারাই যদি সমাজের ধারণাকে উসকে দেয় বা বহন করে চলে, তবে পুরুষতন্ত্র কি কোনোদিনই নারীকে মুক্তি দেবে?

কেউ ছুটছে বাজারের নামি-দামি ব্যান্ডের ফেসক্রিম, লোশনসহ মুখের জেল্লাবৃদ্ধি নানারকম প্রসাধনীর দিকে। কেউবা নিয়ম করে দৌড়াচ্ছে বিউটি পার্লারগুলোয়।

তথ্য-প্রযুক্তির যুগে সমাজ এগিয়ে গেছে। কিন্তু সামজের গড়ে ওঠা প্রথা- সংস্কার-কুসংস্কার-রীতি-নীতি-নিয়মের কতটা পরিবর্তন ঘটেছে? যে সমাজে নারীকে মূল্যায়ন করা হয় তার গায়ের রঙ দিয়ে, সেখান থেকে কিভাবে কল্যাণের আশা করা যায়? শুধু যে বাংলাদেশের মধ্যেই নারীর সৌন্দর্যকে গুরুত্ব দেওয়া হয়, এমনটা নয়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বরাতে ঘুরে ফিরেই নিউজফিডে ভেসে আসছে প্রেমিকের প্রত্যাখ্যানে এক নারীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার ঘটনা। তিনি প্রায় সাত লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করে নিজেকে সুন্দরী করে তুলেছেন। কিন্তু নারীদের এ ধরনের মানসিকতা কি পুরুষতন্ত্রকে প্রশ্রয় দেওয়া নয়? নারীর সৌন্দর্য নিয়ে বারংবার নানামাত্রার ছেলেখেলায় নারীরাই শিকারের বলি হচ্ছে। কেউ ছুটছে বাজারের নামি-দামি ব্যান্ডের ফেসক্রিম, লোশনসহ মুখের জেল্লাবৃদ্ধি নানারকম প্রসাধনীর দিকে। কেউবা নিয়ম করে দৌড়াচ্ছে বিউটি পার্লারগুলোয়। কিন্তু নারীদের সামাজিকভাবে এতটা উসকানি ও মানসিকতা সৃষ্টিকারী নেপথ্য কারণ নারীর বাজারদর।

নারীর সৌন্দর্যকে ঘিরে আর কতদিন চলবে ঘষামাজা? এখনই সময় নারীর যোগত্যা-দক্ষতার সঠিক মূল্যায়ন করা। নারীকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠা করা, শ্রদ্ধা করা।

কারণ যে নারী নিজের সৌন্দর্য বর্ধনে যতটা সময় ব্যয় করবে, ঠিক ততটাই তার একটি ভালো পাত্র জুটবে। এটাই তো সামাজিক ব্যবস্থা। কিন্তু সমাজের এই ধারার মানসিকতা গড়ে তুলতে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও কম দায়ী নয়। ইন্টারনেটে ভাইরাল হওয়া তরুণীর ঘটনাটিই কি প্রমাণ করে না যে, নারীরা নিজেরাও মস্তিষ্কে ধারণ করেছে রূপজ সৌন্দর্যকে?

নারীদের মনে এই বদ্ধমূল চিন্তা গেঁথে দেওয়ার নেপথ্য ভূমিকা আমাদের পরিবারগুলোর। সেটা দেশের বাইরেও সমান। কারণ পরিবার বেড়ে উঠতেই কন্যাশিশুকে হজম করতে হয় নানারকম কটুকথা। সেক্ষেত্রে কারও গায়ের রঙ যদি একটু চাপা হয়, তাহলেই হয়েছে। তার জীবনকে কিভাবে এবং কোন কোন প্রক্রিয়ায় নরকে পরিণত করা যায়, তা বাংলাদেশে বসবাস করা প্রত্যেক মানুষেরই জানা। তবে ইন্টারনেটের যুগে এখন শুধু দেশের বার্তাই নয় বরং বহির্বিশ্বের খবরও নিমিষেই জনসম্মুখে আসে। ফলে সবরকম খবরের সঙ্গে নারীদের উন্নতি-অবনতি সবই শোনা যায়, দেখা যায়, পড়া যায়। নারীর সৌন্দর্যকে ঘিরে আর কতদিন চলবে ঘষামাজা? এখনই সময় নারীর যোগত্যা-দক্ষতার সঠিক মূল্যায়ন করা। নারীকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠা করা, শ্রদ্ধা করা।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ